প্রাপ্তি- পর্ব ৩য়
রিসিভ করে মাত্রই বলবো,মা আপনি দাদু হতে চলেছেন।
আর তখনি ওপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে ভেসে আসলো,
মধুরে অভয়ের অবস্থা খুব খারাপ অভয় এক্সিডেন্ট করেছে,
এখন আমরা হসপিটালে....
মোবাইল টা আমার হাত থেকে পড়ে যায়,আম্মু তাড়াতাড়ি এসে মোবাইল টা তুলে কানে নিয়ে জিজ্ঞেস করে,কি হয়েছে আপা?মা উত্তর দেন অভয় এক্সিডেন্ট করেছে আপা,অফিসে যাবার পথে।আমার অভয়ের অবস্থা খুব খারাপ।আমরা এখন হসপিটালে আছি।
আম্মু বল্লো,আপনি কোন চিন্তা করবেন না আপা,অভয়ের কিচ্ছু হবেনা,আমরা এক্ষুনি আসছি।
মার পাশ থেকে মালিহা চিৎকার দিয়ে বল্লো,ওই অপয়া মধু যেন আমার স্বামীকে দেখতে না আসে।নইলে আমি কিন্তু দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবো,ওর অভিশাপে আজ আমার অভয়ের এই অবস্থা।
আম্মু ফোন রেখে দেয়।আমাকে বলে চল তাড়াতাড়ি হসপিটালে,
-তুমি আর আব্বু যাও।আমি যাবোনা।
-কি বলিস তুই?অভয়ের এই অবস্থা আর তুই যাবিনা?
-না যাবোনা।তোমরা যাও,আমি বাসায়ই আছি।
আব্বু আম্মু অভয়কে দেখতে চলে গেলো।আমি একটা জায়নামাজ নিয়ে বসে পড়লাম মোনাজাতে।আমি বিশ্বাস করি আমার আল্লাহ্ আমাকে খালি হাতে ফেরাবেন না।
প্রায় দুই ঘন্টা পর আম্মুর ফোন আসলো,এত ক্ষণ অব্ধি আমি অভয়ের জন্য দোয়া করে যাচ্ছি আমার আল্লাহর কাছে।
-কি অবস্থা আম্মু এখন অভয়ের?ও ঠিক আছেতো?প্লিজ বলো।
-অভয় এখন বিপদ মুক্ত রে মা।ডাক্তার বলেছে ভয়ের কোন কারণ নেই,কিন্তু....
-কিন্তু কি মা?বলো আমাকে।চুপ করে থেকোনা,প্লিজ মা বলো।
-এক্সিডেন্টের আঘাতের ফলে অভয় বাবা হবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।ও আর কোন দিন বাবা হতে পারবেনা।একটুর জন্য ওর প্রাণ টা বেঁচে গেছে রে মা।
-কি বলছো তুমি?
-হ্যাঁ রে মা!আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া অভয় যে বেঁচে আছে।তোর শাশুড়ি মা এসেছে,আমি এখন রাখছি।
-আচ্ছা মা।
-কোন চিন্তা করবেন না আপা,সব ঠিক হয়ে যাবে।অভয় এর যে কিছু হয়নি এটাই তো আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।
আম্মু আব্বু রাতে বাসায় ফিরে আসে।
পরের দিন আমি হসপিটালে গিয়ে অভয়কে দূর থেকে দেখে আসি,মায়ের সাথে কথা বলে আসি।যাতে মালিহা আমাকে না দেখে,ও দেখলেই চিল্লাচিল্লি করবে।
৪ দিন পর অভয়কে বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়।আম্মু আব্বু প্রতিদিনই খাবার নিয়ে গিয়ে দেখে এসেছে ওকে।আমি ওই বাসায় যেতে চাইলেও মালিহার বারণে আমি যেতে পারিনি।
অভয় অল্প অল্প সুস্থ হয়ে উঠছে।প্রতিদিন মাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করি ও কেমন আছে,কি করছে।
মা ই নাকি ওর সেবা যত্ন করছে,কিন্তু মালিহা কেন করছেনা এটাই তো বুঝতে পারছিনা।
মাকে ফোনে বললাম,মা আমার ওকে খুব দেখতে ইচ্ছে করে,ওর সেবা করতে ইচ্ছে করে।
মা বল্লো,তুই আসিস না মা।তাহলে মালিহা বাসায় অশান্তি করবে।
এভাবে কেটে গেলো একটা মাস।
অভয়ের সন্তান আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে।অভয়ও এখন অনেক টা সুস্থ।
মাকে আমি জানিয়েছি মা যে দাদু হতে চলেছে।
মা,সে কি কান্না।জিজ্ঞেস করেছিলাম,আপনি খুশি হোন নি মা?
মায়ের উত্তর ছিলো,তুই আমাকে কতটা সুখী করে দিলি আমি তা তোকে বোঝাতে পারবোনা রে মা।এ যে আমার খুশির কান্না।
মা অভয়কে এখনো কিছু জানায়নি।
মা বল্লো,মালিহার আচার আচরণেও নাকি পরিবর্তন এসেছে।অভয় কে নাকি এখন সে পাত্তাই দেয়না।
-মালিহা,
-হ্যাঁ বলো।
-তুমি আমার কাছ থেকে এখন এত দূরে দূরে থাকো কেন?কাছে এসে বসো একটু?
-কাছে এসে কি হবে আর?
-কাছে এসে কি হবে মানে?
-প্লিজ এত কথা বলোনা তো,ভালো লাগছেনা।
নতুন নতুন রোমান্টিক গল্প পেতে ভিজিট করুন আমাদের ফেসবুক পেজ " ভালোবাসা কী ? " এবং ফলো করে সাথেই থাকুন।
-মা,ও মা শুনছো?
-কি হয়েছে রে বাবা?
-মালিহা হঠাৎ এমন হয়ে গেলো কেন?
-কি জানি রে বাবা।আমি কি করে বলবো?হয়তো তুই অসুস্থ বলে মন খারাপ।ও কিছুনা।এত চিন্তা করিস না।
রাত ১২.০০ টা।
-কি হচ্ছে অভয়?হাত ছাড়ো।ঘুমাও রাত হয়েছে।
-তুমি এমন করছো কেন আমার সাথে?কেন দূরে দূরে থাকছো?
-তাহলে কি করবো হ্যাঁ?তোমার কোলে বসে থাকবো?
-কি চাও তুমি?কেন করছো এমন?তুমি চেয়েছো আমি মধুকে বাসা থেকে বের করে দেই,দিয়েছি।তুমি বলেছো তুমি রান্না বান্না করতে পারবেনা।কাজের লোক কে বলে দিয়েছি,ওরাই রান্না করে।সবই তো তোমার ইচ্ছে অনুযায়ী হচ্ছে।তবে?এখন কি চাও তুমি?
-মুক্তি চাই।
-মানে?
-মানে আমি মুক্তি চাই,ডিভোর্স চাই আমি।
-মাথা ঠিক আছে তোমার?কি বলছো তুমি জানো তো?ভেবে চিন্তে বলছো তো?
-হ্যাঁ আমি ভেবে চিন্তেই বলছি,আমি তোমার সাথে এক ছাদের নিচে থেকে আমার জীবন টা নষ্ট করতে চাইনা।
-আমার সাথে থাকলে তোমার জীবন নষ্ট হবে?
-হ্যাঁ হবেইতো,কি দিতে পারবে তুমি আমায়?তোমার কাছ থেকে আমি কি ই বা আর আশা করতে পারি?পারবে আমাকে সন্তান দিতে তুমি?পারবে আমাকে মা ডাক শোনাতে?পারবেনা।
-মালিহা,
-চুপ,একদম চুপ।তুমি কোন দিন বাবা হতে পারবেনা।এক্সিডেন্টের সাথে সাথে তুমি এই ক্ষমতা হারিয়েছো।আর আমি তোমার মত একজন অক্ষম পুরুষের সাথে সারাজীবন কাটাতে পারবোনা।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি আর তোমার সাথে থাকবোনা,কাল সকালেই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
-প্লিজ মালিহা,আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা তুমি।প্লিজ।
-সরি,আমার পক্ষে তোমার সাথে সংসার করা সম্ভব না।
পরের দিন,সকাল ১০ টা...
-সত্যিই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো?
-হ্যাঁ।
-তোমার কি একটুও মনে পড়বেনা আমার কথা?আমি তোমাকে অনেক ভালবাসি মালিহা,প্লিজ আমাকে একা করে দিয়ে চলে যেওনা।প্লিজ।
-ভালবাসা?হুহ!যেই ভালবাসা আমাকে মা হওয়া থেকে বঞ্চিত করবে,যেই ভালবাসা আমাকে সন্তান দিতে পারবেনা,দরকার নেই আমার অমন ভালবাসা।তুমি থাকো তোমার ভালবাসা নিয়ে।আমি কয়েক দিন পরই ডিভোর্স লেটার পাঠিয়ে দেবো।আসি।
-বউ মা দাঁড়াও,যেওনা।
-প্লিজ আমাকে আটকাবেন না,নইলে আমি খারাপ আচরণ করতে বাধ্য হবো।
-ওকে যেতে দাও মা,যেতে দাও।সব আমার পাপের ফল।যার শাস্তি আমাকেই ভোগ করতে হবে।
মালিহা অভয়কে ফেলে চলে যায়।
-দেখেছিস অভয়,এই ছিলো তোর মালিহার ভালবাসা।তোর মালিহা একটা স্বার্থপর মেয়ে।যে কিনা মায়া মমতা,ভালবাসা সম্পর্ক বোঝেনা।বোঝে শুধু নিজের স্বার্থ।আর আমার মধু....
যাকগে,এবার বুঝলি তো তুই কত বড় ভুল করেছিস ওকে বিয়ে করে।আর মধুকে তাড়িয়ে দিয়ে?আমি আর কিছু বলতে চাইনা।
-মাগো!মালিহার কি দোষ,সবাইতো চায় মা হতে।সব মেয়েরই তো স্বপ্ন থাকে মা হবার।আমি পারবোনা মা ওর স্বপ্ন পূরণ করতে, পারবোনা আমি কোন দিন বাবা হতে।
পারবোনা আমি বাবা হতে।সব আমার পাপের ফল মাগো।সব আমার পাপের ফল।আমি মধুর সাথে অনেক বড় অন্যায় করেছি যার শাস্তি আল্লাহ আমাকে দিচ্ছেন।
-কাঁদিস না বাবা কাঁদিস না।কে বলেছে তুই বাবা হতে পারবিনা?তুই বাবা হবি।আর আমিও দাদু হবো।
-মিথ্যে স্বপ্ন দেখোনা মা,মিথ্যে স্বপ্ন দেখোনা মাগো।
-আমি কোন মিথ্যে স্বপ্ন দেখছিনা।মুখ তুল অভয়,মাথা উঁচু কর।কান্না বন্ধ কর।
শোন আমার কথা।তুই বাবা হতে চলেছিস রে।আর আমি দাদু।আমাদের মধু,আমাদের মধু মা হতে চলেছে।
-কি বলছো তুমি মা।
-হ্যাঁ রে।আমাদের মধু তোর সন্তানের মা হতে চলেছে।তুই অসুস্থ ছিলি বলে তোকে জানাইনি।
-কি বলো মা?আমি বাবা হতে যাচ্ছি?আমি বাবা হবো?মাগো বলোনা আমি বাবা হবো?মা তুমি চলো,আমি এক্ষুনি মধু কে আনতে যাবো।চলো মা চলো।
-হাত ছাড় অভয়,আমি যেতে পারবোনা,পারবোনা যেতে আমি মধুকে আনতে,কোন মুখ নিয়ে যাবো আমি?পারবোনা আমি যেতে।
-ঠিকাছে আমি একাই যাচ্ছি।আমি যাচ্ছি আমার মধুকে আনতে,আমি একাই যাচ্ছি।
এই বলে অভয় মধুকে ফিরিয়ে আনতে বাসা থেকে রওনা দিলো...
#মধুকি আসবে অভয়ের সাথে?
নাকি শূন্য হাতে ফিরিয়ে দেবে অভয়কে?
প্রাপ্তি- পর্ব ৩য়
Reviewed by গল্প প্রেমিক
on
11:13 AM
Rating:

No comments