প্রাপ্তি গল্প- ২য় পর্ব
অভয় কে জিজ্ঞেস করলাম,কে ও?
অভয় উত্তর দিলো:কিছুক্ষণ আগে আমরা বিয়ে করেছি,ও আমার বউ মালিহা।
আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম...
শাশুড়ি মা দৌড়ে এসে দেখেন আমি ফ্লোরে পড়ে আছি।আর অভয় এবং তার সদ্য বিয়ে করা বউ মালিহা সেখানে হা করে দাঁড়িয়ে আছে।
শাশুড়ি মা তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে এসে আমার মুখে ছেটালেন।আমার জ্ঞান ফিরলো,কিন্তু জ্ঞান না ফেরাটাই বুঝি ভালো ছিলো আমার জন্য।আমি সইতে পারছিনা আমার স্বামী আজ অন্য কারো হয়ে গেছে।
শাশুড়ি মা অভয়কে অনেক গালি গালাজ করলেন,কেন ও আমাকে বিয়ে করার আগে বল্লোনা ওর আরেক জনের সাথে সম্পর্ক আছে।কেন করলো তবে আমাকে বিয়ে।এসব নিয়ে অভয়ের সাথে অনেক কথা কাটাকাটি হয় মায়ের।বাসায় ঢুকতে দিতে চান নি।কিন্তু আমি চাইনি সে সন্তান হারা হোক।তাই মাকে বললাম,সমস্যা নেই মা।তাদের ভেতরে আসতে বলুন।আমি আমার রুমটা ছেড়ে দিচ্ছি তাদের জন্য।অভয়ের বাবা প্রবাসী,অল্প ক'দিন হয় আবার দুবাই ফিরে গেছেন।
মাকে বললাম,মাগো আমার কি আপনার ঘরে জায়গা হবে?
মা আমাকে জরিয়ে ধরে কাঁদছেন আর বলছেন,মারে আমিতো কখনো এমন টা চাইনি।তবে কেন এমন টা হলো।
আমরা তোর জীবন টা নষ্ট করে ফেললাম বোধয় রে মা,নষ্ট করে ফেললাম।
-না মা,আমার ভাগ্যে যা ছিলো তাই হয়েছে।ভাগ্যের লিখন কি কেউ খন্ডাতে পারে মা?
মা আমাকে বুকের মধ্যে শক্ত করে জরিয়ে ধরে কেঁদে যাচ্ছে।
আজ আমার জীবনের সব থেকে ভয়ংকর রাত।আমি বুকে যন্ত্রণা নিয়ে রাত কাটাচ্ছি।আর ওদিকে আমার স্বামী,না না মালিহার স্বামী তার স্ত্রী মালিহাকে নিয়ে ফুল সজ্জায় মত্ত।
ঘুমহীন রাতটা কাটলো আমার।
সকালে নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেডি করলাম।সকাল ১০.৩০ বাজে,অভয় আর মালিহা এখনো ঘুমুচ্ছে।ঘুমাবেই তো,সারারাত যে তারা ঘুমতে পারেনি।
১১টার সময় তারা দুজন নাস্তার টেবিলে আসে।
মাকে ডাকলাম,মা আসেনি।ওদের দুজনকে খাইয়ে আমি মার কাছে গেলাম,জোর করে মাকে খাইয়ে দিলাম,মাও আমাকে খাইয়ে দিলো।
দুপুরের রান্নার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখি কিচেন রুমে মালিহা দাঁড়িয়ে।আমি কাছে গিয়ে মালিহাকে বললাম,
আমাকে তুমি আপু বলে ডেকো।আর কোন কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে ডেকো।আজ কি তুমি রান্না করবে?
-আপনার কি মাথা খারাপ হয়েছে?যে আমি রান্না করবো?আমি এখানে এসেছি কাজের লোকদের রান্না বুঝিয়ে দিতে।কি রান্না হবে আজ সেটা বলতে।
-রান্না তো আমি আর মা করি,কাজের লোকেরা অন্য কাজ করে।তুমি আমাকে বলে দাও কি রান্না করতে হবে,আমি করে দেবো।
-না,তা আর দরকার হবেনা,আমি বাইরে থেকে অর্ডার করে নেবো।
এই বলে মালিহা চলে গেলো,
পিছু ডেকেও কোন লাভ হলোনা।
রাতে বাসায় ফিরে অভয় আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করলো,আমি নাকি মালিহার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি।
মালিহার মিথ্যে অভিযোগ গুলো অভয় বিশ্বাস করে আমাকে কাঁদালো।
মা এসে অভয়কে ধমকে ওর রুমে পাঠালো।
মাঃকাঁদিস না মা,
আমিঃনা মা কাঁদছি না আমি।একটুও কাঁদছিনা।
অভয় আর মালিহার বিয়ের ২ সপ্তাহ হয়ে গেছে।
মা এসে আমাকে বল্লো,অভয় নাকি আমাকে আজ ডেকেছে।
জানিনা কি বলবে,
অভয়ের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম,এত গুলো দিন পর ও আমাকে ডেকেছে,কি বলবে,মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন।
-কিছু বলবেন?
-হ্যাঁ
-বলুন।
-অনেক দিন তো হয় এ বাড়ীতে আছো।আমি মালিহাকে বিয়ে করার পর তোমার বাবা মা তোমাকে নিয়ে যেতে আসলেও তুমি যাওনি।জানিনা কিসের আশায়,কিসের টানে।তবে আজ আমি তোমায় একটা অনুরোধ করবো,রাখবে?
-জ্বী বলুন।
-তুমি এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাও প্লিজ।
-এ কি বলছেন আপনি?
-ঠিকই শুনেছো,প্লিজ মধু!এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাও।মালিহা তোমাকে সহ্য করতে পারেনা।তোমাকে দেখলে নাকি মালিহার দম বন্ধ হয়ে আসে।আর মালিহার কষ্ট আমি সইতে পারিনা।পারবোনা সইতে।প্লিজ তুমি চলে যাও।হাত জোর করে বলছি।
-আপনি যেমন আপনার স্ত্রীর কষ্ট সইতে পারেন না।আমিও তেমনি আপনার কষ্ট সইতে পারিনা।আমি চলে যাবো,কথা দিচ্ছি।আপনি এভাবে অনুরোধ করবেন না।হাত নামান প্লিজ।
আমি চলে যাচ্ছি,আর দোয়া করে যাচ্ছি আপনারা যেন সুখী হোন।অনেক সুখী।আর একটা কথা,যদি কখনো এমন দিন আসে,আপনি নিজেকে একা অনুভব করছেন বা কেউ আপনার পাশে নেই তবে আমাকে মনে করবেন,আমি আপনার পাশে চিরদিন আছি,থাকবো।আসি..
চাইনি মৃত্যুর আগে এ বাড়ী ছেড়ে যেতে।কিন্তু আজ আমার স্বামীর আদেশ।আমি যেন এ বাড়ী ছেড়ে চলে যাই,তাই আমার যেতে হচ্ছে।খুব মিস করবো,এ বাড়ী, এ ঘর,বারান্দা,ফুটন্ত ফুল গুলো,যেই চারা গুলো আমি নিজে হাতে লাগিয়েছি।
আর এ বাড়ীর মানুষ গুলোকে।
শাশুড়ি মা আমাকে কিছুতেই যেতে দিবেন না।শশুড় বাবা ফোন করে বার বার বলছেন থেকে যেতে।
কিন্তু আমার যে থাকার কোন পথ নেই।
অভয় সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
আমার আম্মু আব্বু গিয়ে আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছেন।আর এদের এই বলেই এসেছি যে আমি কোন দিন আর বিয়ে করবোনা,যদি তারা এই শর্তে রাজি থাকেন তবে আমি তাদের সাথে বাসায় আসবো,নয়তো যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো।আম্মু আব্বু বলেছেন,আমি যা চাইবো তাই হবে।তাই আম্মু আব্বুর হাত ধরে বাসায় চলে আসলাম।
মাকে বলে এসেছি,যখনি তার এই মেয়েটাকে মনে পড়বে সে যেন ফোন দেয়।আর যখনি দেখতে ইচ্ছে করবে তখনি যেন চলে আসেন।
দিন কেটে যাচ্ছে,কিন্তু থামছেনা আমার চোখের পানি।আমি বাকি জীবন টা অভয়ের স্মৃতি বুকে নিয়েই কাটিয়ে দিবো।
আমি যেন একা একা রুমে থেকে বেশি মন খারাপ না করি তাই আম্মু কিচেন রুমে গেলেও আমাকে পাশে দাঁড় করিয়ে রাখেন।আম্মু রান্না করছে,আর হঠাৎ করেই আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই।
তাড়াতাড়ি করে আম্মু ডাক্তার ডাকেন।ডাক্তার এসে আমার আম্মুকে জানান,
আপনি নানু হতে চলেছেন।
মধু মা হতে যাচ্ছে।
কথাটা শুনে আম্মু আর আমি খুশি হবো কি,আমাদের মুখটা মলিন হয়ে গেলো।
কি হচ্ছে আমাদের সাথে কিছুই বুঝতে পারছিনা।অভয় তার জীবন থেকে আমাকে বের করে দিলো আর এখন অভয়ের অংশ আমার গর্ভে।কি করবো এখন আমি?
আম্মু আমাকে বল্লো,বাচ্চাটা নষ্ট করে ফেলতে।
কিন্তু আমি তা করবোনা,অভয় আমাকে প্রত্যাক্ষান করলে কি হবে?
আমি ওর সন্তান,আমাদের সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখাবো।
আব্বু বাসায় ফিরে আম্মুর কাছে শুনেন যে আমি মা হতে চলেছি।আব্বুর খুশির অন্ত নেই।আব্বুও বললেন,আমরা ওকে আমাদের মত করে গড়ে তুলবো।আমার ছোট্ট একটা নানু ভাই হবে।
আম্মু বল্লো,না একদমই না।আমার ছোট্ট একটা নানা ভাই হবে।
এভাবে তাদের মাঝে ঝগড়াই লেগে গেলো।আব্বু বলে তার নানু ভাই হবে মানে মেয়ে হবে আমার।
আর আম্মু বলে না তার নানা ভাই হবে মানে ছেলে হবে আমার।
আমি মোবাইল টা হাতে নিয়েছি আমার শাশুড়ি মাকে সুখবর টা জানাতে।আমি ফোন দেয়ার আগেই আমার ফোনে কল চলে আসলো,মা ই কল দিয়েছেন।
রিসিভ করে মাত্রই বলবো,মা আপনি দাদু হতে চলেছেন।
আর তখনি ওপাশ থেকে কান্না জড়িত কন্ঠে ভেসে আসলো,
মধুরে অভয়ের অবস্থা খুব খারাপ অভয় এক্সিডেন্ট করেছে,
এখন আমরা হসপিটালে....
প্রাপ্তি গল্প- ২য় পর্ব
Reviewed by গল্প প্রেমিক
on
11:11 AM
Rating:

No comments