প্রাপ্তি (পর্ব-১)

 

 
আজ আমার বাসর রাত।আমি ঘোমটা দিয়ে তার অপেক্ষায় বসে আছি।কিন্তু রাত প্রায় দেড় টা বাজে।তার আসার খবর নেই।একটা সময় অনুভব করি সে এসেছে।কিন্তু এসেই সে খাটের উপর রাখা তার বালিশটা নিয়ে চলে যেতে যেতে হঠাৎ থেমে গিয়ে বলে, ঘুমিয়ে যেও।আমি বারান্দাতে ঘুমিয়ে নিবো।আর কখনো আমার কাছে বউ এর দাবি নিয়ে আসবেনা।
বাসায় মা আছেন,বাবা আছেন,কাজের লোক আছেন।কিছু দরকার হলে তাদের কে বলো,এনে দিবেন।দরজা টা আটকে দিও।
এই বলে অভয় বারান্দায় চলে যায়।
আর আমি বসে থাকি নিশ্চুপ এক মূর্তির ন্যায়।শুধু ডান চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা অশ্রু।
সকালে গোসল করে কিচেন রুমে যেতেই শ্বাশুড়ি মা আমাকে কপালে চুমু খেয়ে বললেন,তুমি অভয়কে ডেকে তুলো।আমি এদিক টা দেখছি।কাল থেকে না হয় সংসার টা তুমি সামলিও।আমি এবার অবসরে যাই।
 
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে অভয়কে ডাকতে আসলাম।কিভাবে ডাকবো বুঝতে পারছিনা।যদি রেগে যায়।তবুও সাহস করে গেলাম,গিয়ে দেখি কি মাসুম একটা মুখ।ইচ্ছে করে জন্ম জন্মান্তর কাটিয়ে দেই এই মুখ দেখে।হঠাৎ অভয় নড়ে উঠলো আর আমি পেছন ফিরে দাঁড়িয়ে বললাম,শুনুন!মা আপনাকে নাস্তা করতে ডাকছেন।ফ্রেশ হয়ে আসুন।
এই বলে আমি মায়ের কাছে চলে গেলাম।
সবাই নাস্তার টেবিলে।নাস্তা করছি,সবাই কথা বলছেন।কিন্তু অভয় এর মুখে কোন কথা নেই।সে অল্প কিছু নাস্তা করে অফিসে চলে গেলেন।আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না।
শুনেছি,সে নাকি তার বাবা মায়ের পছন্দে বিয়ে করেছেন।তাই নাকি আমার ছবিটাও দেখেন নি।কিন্তু তাই বলে আমার সাথে এমন আচরণ করবে?কেন এমন করছে আমার সাথে সে?ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করে আমার রুম থেকে রিং এর শব্দ।অভয় ভুল করে মোবাইল টা রেখে গেছেন।
ফোন টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে এক মেয়ে বলে উঠলো,
কেমন হলো বাসর?
 
রাত কেমন কাটলো?খুব ভালো নিশ্চয়ই?
ভালোই তো হবার কথা।
আর কিছু বলার আগেই আমি হ্যালো বলি।আর ওপাশ থেকে লাইনটা কেটে দেয়।হুট করেই অভয় রুমে চলে আসে,সে অন্য দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে আমার মোবাইল টা।আমি দিয়ে দেই মোবাইল।সে চলে যায়।আমার আর বুঝতে বাকি নেই,মাই লাভ লিখা নাম সেইভ করা মেয়েটা যে অভির ভালবাসা।
অভি চলে যায় আর আমি জানালার গ্রিল ধরে আকাশ দেখি,কখন যেন আকাশ দেখতে দেখতে দু চোখ ভিজে গেলো।
দিন যাচ্ছে অভয়এর চাল চলনের পরিবর্তন হচ্ছে।রাতে যখন খেতে বলি,উত্তর আসে খেয়ে এসেছি আমি।তুমি খেয়ে নাও।
আমার আর খাওয়া হয়ে উঠেনা।রাতে ঘুমানোর সময় প্রায়ই ওর ফোনে কল আসে,আর ও বারান্দায় গিয়ে কথা বলে,আমি সব শুনেও ঘুমের ভান করে শুয়ে থাকি।কি ই বা করার আছে আমার?
বাসায়ও চলে যেতে পারছিনা,বাবা মা অনেক কষ্ট পাবেন বলে।
একদিন শাশুড়ি মা আমাকে একটা কালো রঙের শাড়ি হাতে দিয়ে বললেন,এটা তোমার জন্য এনেছি তুমি আজ এটা পরো,
আমি কালো শাড়িটা পরে নিলাম।শাশুড়ি মা কপালে চুমু খেয়ে বললেন,আজ তোমাকে পরীর মত লাগছে বউ মা।
রাতে অভয় বাসায় ফিরে ।আজ ও ড্রিংক্স করে ফিরেছে।হয়তো ওই মেয়ের সাথে কোন পার্টিতে গিয়েছিল।
 
আমি টাওয়াল টা হাতে দিয়ে বললাম ফ্রেশ হয়ে নিন আমি খাবার বাড়ছি।
অভয় আমার হাত টা টেনে ধরে বুকে জড়িয়ে নিলো।
আর বলতে লাগলো, তুমি খুব সুন্দর মধু,কালো শাড়িতে তোমাকে আরো সুন্দর লাগছে।যদিও কখনো বলা হয়নি,কিন্তু এটাও সত্যি তুমি খুব লক্ষী।এ কথা বলে অভয় আমাকে কপালে চুমু দিয়ে আজ প্রথম বারের মত আমাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিলো।আমি তাকে বাধা দিতেও পারিনি,কারন সে যে আমার স্বামী।
সকাল বেলা গোসল সেরে বাইরে বেরুতেই অভয় আমাকে বললো,কাল রাতের জন্য সরি।আমি আসলে...
-সরি বলতে হবেনা,আপনি আমার স্বামী,আমার উপর আপনার পূর্ন অধিকার আছে।গোসল করে ফ্রেশ হয়ে নিন আমি নাস্তা রেডি করছি।
অনেক গুলো দিন কেটে গেলো।অভয় আমাকে ভাল না বাসলেও আমি অভয় কে ভালবাসতে শুরু করেছি।
 
দিন যাচ্ছে অভয়ের প্রতি আমার ভালবাসা বাড়তে থাকে,
অভয় কে নিয়ে আমি স্বপ্ন বুনতে থাকি।
আজ সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছি আজ অভয় বাসায় ফিরলেই ওকে বলে দেবো, অভয় আমি তোমাকে ভালবাসি।আর আমার বিশ্বাস অভয় ও একদিন না একদিন আমাকে ভালবাসবে।
সারা দিন খুব কষ্টে কাটল্য,কথায় আছেনা,অপেক্ষার প্রহর সহজে যায়না।রাত হলো,কলিং বেল বাজছে,
নিশ্চয়ই অভয় এসেছে।আমি দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুললাম।
কিন্তু হঠাৎ ই আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো।
অভয় এর সাথে ওর ভালবাসার মানুষ টা দাঁড়িয়ে আছে,বঁধু বেশে।অভয়ের বধূ হয়ে...
অভয় কে জিজ্ঞেস করলাম,কে ও?
অভয়:কিছুক্ষণ আগে আমরা বিয়ে করেছি,ও আমার বউ মালিহা।
আমি সেন্সলেস হয়ে পড়ে গেলাম..
প্রাপ্তি (পর্ব-১) প্রাপ্তি (পর্ব-১) Reviewed by গল্প প্রেমিক on 10:58 AM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প