লীলা খেলা! শেষ পর্ব!!

 

নীলের বাবা তখন একটু একটু পুত্র হারাবার সুখ ভুলছে। তিনি এখন আর পুত্রের শোকে কাঁদেন না কারণ তার ছেলে মরার আগে তার জন্য না কাঁদতে বলে গেছেন।
নীলের বাবা বারান্দায় বসে পেপার পড়ছেন। এমন সময় কলিং বেলের শব্দ শুনে বারান্দা থেকে উঠে যেয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলে দেখতে পেলেন একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শূন্যতা বলল,,,,
শূন্যতাঃ আংকেল নীল আছে বাড়িতে??
নীলের বাবা বেশ শান্ত ভাবে বলল,,,
নীলের বাবাঃ মা তুমি কে?? নীলের খোঁজ করছ??
শূন্যতাঃ যদি নীল বাসায় থাকে তাহলে গিয়ে বলুন শূন্যতা আসছে,, নীল আমাকে চিনে।।
নীলের বাবা চশমাটা খুলে বলল,,,
নীলের বাবাঃ নীল নেই। তবে নীল তুমি আসলে একটা জিনিস দিতে বলেছে। দাড়াও আমি নিয়ে আসছি।।
শূন্যতা ভাবছে নীল আবার কোথায় গেল?? আর নীল তার বাবাকেই বা কি দিতে বলেছে? শূন্যতা এসব ভাবতে ভাবতে নীলের বাবার চলে আসল। নীলের বাবা নীলের নীল ডাইরীটা শূন্যতার হাতে দিয়ে বলল,,,,
নীলের বাবাঃ মা এটা পড়লে জানতে পারবে,, নীল কোথায় গেছে।।
আজকে আবার শূন্যতার জন্য নীলের বাবার নীলের কথা মনে পড়ে গেলো। শূন্যতা নীলের ডাইরিটা নিয়ে বাড়ি ফিরে এল। এসেই নীলের ডাইরীটা পড়তে শুরু করল। সম্পুর্ণ ডাইরী জুড়ে শুধু নীল আর শূন্যতার কথা লেখা। তাদের প্রেম থেকে শুরু করে ব্রেকাপের পর পর্যন্ত সবকিছু ডাইরীতে লেখা রয়েছে। একজায়গায় গিয়ে শূন্যতার চোখ আটকে গেল। পৃষ্ঠাই তারিখও লেখা আছে।।
“১-১১-২০১৯”
“আজ আমার আর শূন্যতার ব্রেকাপ হয়েছে। কত আশা ছিল আমি আর শূন্যতা একসাথে ঘর বাধব। আমাদের দুইটা ফুটফুটে বাচ্চা হবে।আমি আর শূন্যতা সারাদিন খুনসুটিতে মেতে থাকব।কিছু মানুষের আসা কখনো পূরণ হয় না যেমন আমি। শূন্যতা চলে যেতে চাইলে আমিও তাকে বাধা দিলাম না কারণ শূন্যতা যেখানেই থাকুক সে তো অন্তত ভাল থাকবে। কষ্টগুলো শুধু না হয় আমারই হোক। কিছু মানুষের জন্মই তো কষ্ট সহ্য করার জন্য।।”
“৩-১১-২০১৯”
“যে আমি কখনো সিগারেটও খেতাম না সেই আমি আজ সিগারেট আর মদ খাচ্ছি। সিগারেট আর মদ খেলে নাকি দুঃখ ভুলে থাকা যায়। আমি আমার দুঃখগুলোকে ভুলে থাকতে চাই।।”
“২-১২-২০১৯”
“আজ আমার শূন্যতার বিয়ে। লাল বেনারসি শাড়িতে শূন্যতাকে যে কত সুন্দর লাগছে তা বলার মত নয়। কথা ছিল আমার আর শূন্যতা বিয়েতে শূন্যতা লাল শাড়ি আর আমি নীল পাঞ্জাবি পড়ব। কিন্তু আমার ভাগ্যে যে শূন্যতা নেই। শূন্যতার উপর থেকে চোখ ফেরাতে পারছি না। কিন্তু শূন্যতা এখন অন্যের বউ। তার দিকে দৃষ্টি দেওয়ার অধিকার আমার নেই। মনে পাথর রেখে বাড়িতে চলে এলাম। শূন্যতার সাথে ব্রেকাপের পর থেকে আমি কখনো কাদিনি। আজ নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে সারারাত কেঁদে বালিশ ভেজালাম। পরক্ষনেই মনে পড়ল পুরুষ মানুষের তো কাঁদতে নেই তবে আমি কেন কাঁদছি।
“৬-১২-২০১৯”
“আজ জানতে পারলাম আমার ব্লাড ক্যানসার ধরা পড়েছে। আমি একমাসের বেশি বাচঁব না। আমার জন্য খারাপ লাগছে না। বাবার কথা ভেবে খুব কষ্ট লাগছে। মা মারা যাওয়ার পর আমার দিকে তাকিয়ে বাবা আর বিয়ে করেনি। কিন্তু আমি তার প্রতিদানে বাবাকে কিছু দিতে পারছি না।”
“১৭-১২-২০২০”
“এখন আর ভালভাবে ডাইরীও লিখতে পারি না হাত কাপে। মাথা ঝিমঝিম করে কোন কিছুতে মনোযোগ দিতে পারি নাহ। বুঝতে পারছি আমার আয়ু ফুরিয়ে আসছে।।
“২০-১২-২০১৯”
“এখন আর পৃথিবীর মায়া আমাকে টানে না। পৃথিবী থেকে চলে গেলেই যেন আমার শান্তি। এখনও আগের মতই শূন্যতাকে মনে পড়ে। খুব জানতে ইচ্ছা করে শূন্যতা কেমন আছে। নিশ্চয়ই ভাল থাকবে ভাল থাকার জন্যই তো আমার কাছ থেকে দূরে চলে গেছে।।”
“২৪-১২-২০১৯”
“শূন্যতার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেয়। আমি চেয়েছিলাম সে যেন ভাল থাকে। সে যদি অন্য কারো কাছে ভালো থাকে তাহলে আমিও খুশি হব।৷ আমার হাত আর চলছে না। প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করছে। শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত সব স্মৃতি চোখের সামনে ভেসে আসছে। বাবা,, শূন্যতা আর মায়ের কথাও অনেক মনে পড়ছে। আমি দেখতে পাচ্ছি মা আমাকে বলছে,"আয় বাবা আমার কাছে আয়।।"
এরপর ডাইরীতে আর কিছু লেখা নেই। শূন্যতার চোখ থেকে বর্ষার বাদলের মত করে পানি পড়ছে। যে কিনা তাকে এত ভালবেসেছে তার ভালবাসার মূল্য না দিয়ে শুধু মাত্র টাকার লোভে রাজীবের মত অমানুষকে বিয়ে করেছে। শূন্যতা ভাবছে নীলের সাথে তার করা অন্যায়ের ফল সে এখন পাচ্ছে। শূন্যতা আর কিছু ভবতে পারছে নাহ। সে তার উরনা দিয়ে ফ্যানের সাথে ফাসি দিয়ে সুসাইড করল।।
সমাপ্ত😑😇
লীলা খেলা! শেষ পর্ব!! লীলা খেলা! শেষ পর্ব!! Reviewed by গল্প প্রেমিক on 11:57 AM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প