বউনামা! পর্ব-০২

বউনামা
#বউনামা_২
-Asif Mahmud
(১)
শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার ঠিক আগ মূহুর্তে বউ আমাকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। সিনেমা সিনেমা একটা অনুভূতি আসল মনের মধ্যে। আমি কিছুটা রোমান্টিসিজম ফিল করছিলাম, কিন্তু বউয়ের চোখে তার লেশমাত্র ও দেখলাম না। সে আমাকে জোর করে টেনে নিয়ে এসে খাটে বসাল। তারপর নিজে এসে পাশে বসল।
-আসিফ, আজ তো আমাদের বাড়ি যাব। তুমি ওখানে গিয়ে কোন বোকামি করোনা প্লিজ!
বউয়ের কণ্ঠে নম্রতা। আর চোখে কেমন মায়াবী দৃষ্টি। কিন্তু এতকিছুও আমাকে টলাতে পারল না। আমি বরং রেগে গেলাম।
-আমি কিসের বোকামি করলাম? আমি সত্য বলি এটা সমস্যা? সবাই তো পারেনা সত্য বলতে, সত্য বলা মহৎ গুণ।
-ঠিক আছে সত্য বলা মহৎ গুণ কিন্তু কিছু ফর্মালিটিস তো মানতে হয় গো।
বলেই নীরা আমার হাতটা চেপে ধরল। এই হাত চেপে ধরার অর্থ হচ্ছে আমার মায়ায় ডুবে যাও, কিচ্ছুটি বোলোনা। আমি কণ্ঠস্বর নামিয়ে বললাম, “আচ্ছা ঠিক আছে”
ভাবলাম এখনি চুম্বন পর্ব হবে কিন্তু তা হল না। বউ তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলল।
-দরজা খুলছো কেন?
-কেউ দেখলে কি ভাববে এতক্ষণ দরজা বন্ধ করে আছি তাও দিনের বেলায়।
-দিনের বেলা আর রাতের বেলার তফাত কি?
-আবার শুরু হয়ো না বলছি!
-আচ্ছা।
বউ রেডি হতে লাগল। এদিকে আমি যে কি পরব তাই ঠিক করতে পারছিনা। অগত্যা লুঙ্গি টা পরেই বসে রইলাম।
-তুমি রেডি হচ্ছ না কেন?
-কি পরব?
-তোমার যেটা ভাল লাগে।
-হলুদ পাঞ্জাবি টা পরব?
-নাহ। ওটা পরলে গায়ে হলুদ গায়ে হলুদ মনে হবে। ওটা না।
-তাহলে চেকের শার্ট পরব?
-চেকের শার্ট পরলে তোমাকে মানাবে না।
-তাহলে কি পরব?
-তোমার যেটা ভাল লাগে।
এবার মেজাজ টা চড়ে গেল। মেয়েদের এই বিষয়টা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা। তারা কোন কিছুতেই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনা। সবকিছুতেই তাদের কনফিউশন।
-আমি লুঙ্গি পরেই যাব ও বাড়ি মনে রেখো।
ভাবলাম এতে নীরা রেগে যাবে। কিন্তু না রেগে বরং হিহি করে হেসে দিল। সব রাগ মূহুর্তে পানি হয়ে গেল। এই হাসিটা আমার খুব প্রিয়। একটা সময় এ হাসির জন্য কত কি না করতাম! নীরার হাসিটা একটুও বদলায় নি। এখনো তেমনি বুকে কম্পন তোলে।
-রেডি হবা তুমি?
অগত্যা বসা থেকে উঠে মায়ের কাছে গিয়ে মায়ের পছন্দের একটা শার্টই পরে ফেললাম। মা বেশ আনন্দিত, ছেলে বিয়ের পরও মায়ের পছন্দ করা শার্ট গায়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। যদিও আমি আনন্দিত ছিলাম না, মায়ের পছন্দের পূর্ব অভিজ্ঞতা আমার বিষাক্ত, অন্তত পোষাকের ব্যাপারে। নীরা কে অপূর্ব দেখাচ্ছে। যদিও বেশ একটা সাজুগুজু করেনা সে। আমি হা করে তাকিয়ে আছি দেখে নীরা লজ্জা পেয়ে গেল, তাড়াতাড়ি নেকাব করে ফেলল। আমিও মশা ঢুকে যাওয়ার ভয়ে মুখ বন্ধ করে ফেললাম। এরপর মা কে সালাম করে দুজন চললাম শ্বশুর বাড়ি, আই মিন আমার শ্বশুর বাড়ি।
(২)
শ্বশুর বাড়িতে ঢুকতেই আজ আর বিয়ে বিয়ে শোরগোল নেই। আগে থেকে শোরগোল কিছুটা কমেছে। তাও পিচ্চি পিচ্চি শ্যালক-শ্যালিকারা আছেই। তারা হই হই করতে লাগল আমরা বাড়ি ঢুকার সাথে সাথেই। আমি আর নীরা ঘরে ঢুকেই প্রথমেই পেলাম শ্বশুর আব্বাকে। দুজনে পা ছুঁয়ে সালাম করলাম, শ্বশুর পান খাওয়া মুখ নিয়ে একটা হাসি দিলেন। এতে পানের একটুখানি পিক তাঁর মুখ দিয়ে গড়িয়ে এসে দাঁড়ি ভিজিয়ে দিল। আমিও হাসির প্রত্যুত্তরে হাসি দিয়ে সোফায় বসলাম।
নীরা ভেতরে চলে গেল। শ্বশুর ও ভেতরের দিকে গেলেন, এদিকে আমি একা একা কি করব বুঝতে না পেরে ফোন বের করলাম। কিছুক্ষণ এভাবে কেটে যাওয়ার পর কোত্থেকে আমার একমাত্র শ্যালক সায়েদ এসে সালাম দিল। আমি সালাম নিয়ে ওভাবেই বসে রইলাম। ওকে বললাম আমার পাশে বসতে। ও গিয়ে বসল আমার সামনের সোফায়, এমন ফেসটাইম আমার অসহ্য লাগে। আমি মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে রাখলাম। একটা অকওয়ার্ড মোমেন্ট তৈরি হয়ে গেল। শালা-দুলাভাই সামনাসামনি বসে আছে অথচ কোন কথা হচ্ছেনা। আমি এবার কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে বললাম,
-তোমার পড়াশুনা কেমন চলছে?
-আলহামদুলিল্লাহ। চলছে।
আমি কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না জিজ্ঞেস করার মত। তাই আমার মূল প্রশ্নে চলে আসলাম যেটা জিজ্ঞেস করা আমার জন্য ফরয হয়ে পড়েছিল।
-তোমরা কি আমাদের রুম ফুল দিয়ে সাজিয়েছো?
আমি মূলত প্রশ্নবোধক প্রশ্নই করেছি। কিন্তু সায়েদ সেটাকে বোধহয় আদেশমূলক ভেবে নিয়েছে। সে কিছু না বলেই উঠে গেল। এদিকে আমি পড়ে গেলাম বিপদে। কিছু না জিজ্ঞেস করাই বোধহয় ভাল ছিল। এখন সবাই উলটো বুঝে গিয়ে যদি সাজিয়ে ফেলে? এসব ভাবছি এর মধ্যে নীরা এসে আমাকে ডাক দিল।
-এদিকে আসো।
-কি?
-মায়ের সাথে দেখা করবা না?
-মা ও এসেছে এখানে?
-আরে আমার আম্মু।
-তো আম্মু বল না। কনফিউজ করছো কেন? আচ্ছা আসছি।
বলে সোফা থেকে উঠে নীরার সাথে ভেতরের রুমে গেলাম। শ্বাশুড়ি আমাকে দেখে লম্বা ঘোমটা টেনে নিলেন। আমি গিয়ে তাঁকে সালাম করলাম। তিনি ফিসফিস করে বললেন “ওয়া আলাইকুম সালাম”
-আমার বেয়াই-বেয়াইন ভাল আছে তো?
মনে মনে ভাবলাম আস্ত জামাই সামনে দাঁড়িয়ে আছে তাকে জিজ্ঞেস করার নাম নেই কেমন আছেন, বেয়াই-বেয়াইন নিয়ে পড়ে আছেন।
-জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। বাবার একটু প্রেসার। তেলে-পানিতে মাথায় দিলে আবার ঠিক হয়ে যায়। আপনি ভাল আছেন?
-আল্লাহ রাখছে কোনরকম বাবা।
ফর্মালিটির ডোজ বেশি হয়ে যাচ্ছে দেখে আমি বের হয়ে চলে এলাম। এদিকে সামনের রুমে আমার পাঁচ মিনিটের প্রস্থানে প্রচুর লোক জড়ো হয়ে গেছে। আমি হঠাৎ এত মানুষ দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। ভার্সিটিতে ক্লাসরুমে ঢুকেই সবাইকে হাত উঁচিয়ে “হ্যালো গাইজ” বলার অভ্যাস টা এতটাই চড়ে গেছে যে এত মানুষ একসাথে দেখলেই হাত উপরে উঠে যায় অটোম্যাটিকালি। সম্বিত ফিরে পেতেই হাত উঁচানোটাকে স্বাভাবিক দেখানোর চেষ্টায় মাথার চুল ঠিক করতে লাগলাম। ভায়রা এসে আমাকে নিয়ে সোফায় সবার মধ্যমনি করে বসিয়ে দিলেন।
এতগুলো লোকের মাঝে মধ্যমনি হয়ে বসা পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ। আমি কারো দিকে তাকাচ্ছি না, কিন্তু এটুকু জানি সবাই আমাকেই দেখছে, কেমন লজ্জাকর পরিস্থিতি। কাল বোধহয় নীরার ও এমন হয়েছিল, আহারে মেয়েটা, কিছু বলেওনি আমাকে। নীরার জন্য মায়া হতে লাগল। এর মধ্যে নাস্তা এসে গেল। আমি গভীর ভাবে নাস্তা পর্যবেক্ষণ করলাম, নাস্তাগুলো সাজানোর দিকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আপেল, কমলা, ডালিম, আরো বিভিন্ন ফল দিয়ে বিভিন্ন ফুলের আকৃতি করে সাজানো হয়েছে। কমলার ফুলটা বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। তখনি একটা লোক এসে কমলার দুটো কোষ নিয়ে নিল, ফুলটা অসুন্দর হয়ে গেল, ইচ্ছে করছিল কষিয়ে দুটো চড় বসিয়ে দিই। এমনি ই চিনিনা লোকটা কে, সবার আগে তার হাত বাড়ানোর প্রয়োজন টা কি? আমাকে এমন গভীরভাবে নাস্তা পর্যবেক্ষণ করতে বোধহয় অনেকেই দেখে ফেলেছে। তাই সবাই আমাকে নাস্তা বাড়িয়ে দিল, কিন্তু আমার মন চাইছিল না কোন ফুলের পাপড়ি ছিড়ি। তাও সবার অনুরোধে আপেল ফুলের একটা পাপড়ি ছিড়ে খেয়ে নিলাম। মাঝখানে থেকে সবাই ভীষণ কৌতুকময় কথা বলতে লাগল। আমিও খুব কম্ফরটেবল হয়ে উঠছিলাম। আমিও মাঝখান থেকে দুয়েকটা কৌতুক ঝেড়ে দিলাম, সবাই তো বেশ উত্তেজিত, আমাকে বাহবা দিতে লাগল। এতে আমার আগ্রহ আরো বেড়ে গেল। আমি এবার উদ্দীপীত হয়ে মনের অজান্তে একটা এডাল্ট জোক বলে ফেললাম, বলেই জিভ কামড় দিয়ে বসে রইলাম। মুরুব্বীরা থ মেরে গেল, জোয়ান যারা ছিল তারা এদিক ওদিক ফিরে চেপে চেপে হাসছিল। এদিকে আমি লজ্জায় কুঁকড়ে গেলাম। আসর সেখানেই মূলতবি হল।
(৩)
রাতের খাবারের সময় হলে টেবিলে আমার ডাক পড়ল। টেবিলে তিন জামাই, আমার শ্বশুর, এক শালা বসলাম, মেয়েরা ভেতরের দিকে বসেছে। খাবার টেবিলে সভাপতিত্ব করছেন আমার শ্বশুর, খাওয়ার আগে সবার মধ্যে এক নিরবতা। এভাবেই অনেকক্ষণ কাটল, আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না। ভাবখানা এমন ছিল যে খাওয়ার আগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে। তো আমিও তাদের মত টানটান হয়ে বসে রইলাম। হঠাৎ করে শ্বশুর মশায়ের উপর বাবার আত্মা ভর করল, কিংবা শ্বশুর আগে থেকেই এমন ছিলেন কিনা জানিনা। তিনি শৃঙ্খলা ও আদব-কায়দা নিয়ে আলোকপাত করতে লাগলেন। এদিকে আমার পেটে চোঁ চোঁ করছে, খাবার সামনে রেখে কখনো নীতিকথা শোনা যায়? মাংসের ঘ্রাণ টা নাকের মধ্যে যেতেই পেটের ভেতর এবার ভূমিকম্প শুরু হয়ে গেল। তাই আমি তরকারীর বাটিগুলোর দিকে লোলূপ দৃষ্টিতে তাকাতে লাগলাম। এতে বোধহয় শ্বশুর কিছুটা বুঝতে পারলেন, খাওয়া পর্ব শুরু হল।
খাওয়ার মাঝে শ্বশুর কিছু একটা বলা শুরু করেন, আমরা যখন পুরো কথা শুনার জন্য তাঁর মুখের দিকে তাকাই তখনি তিনি মুখের মধ্যে খাবার পুরে দেন, এবার যতক্ষণ তিনি চিবান, ততক্ষণ আমরা তাকিয়ে থাকি, চিবিয়ে গিলার পর ধীরে সুস্থে বলেন। কয়েকবার এমন হওয়ার পর আমার মেজাজ তিরিক্ষ্ণি হয়ে গেল। বলেই ফেললাম,
-বাবা, আগে খান তারপর বলেন নাহয় আগে বলেন তারপর খান। খাওয়া আর বলা তো একসাথে হয়না।
শ্বশুর আমার কথায় কিছুটা লজ্জা পেলেন বোধহয়। অন্যদিকে সায়েদ বলে উঠল, “এটা অভ্যাস উনার” বলেই মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। দুলাভাইরাও চুপি চুপি হাসলেন, কিন্তু আমার হাসি আসছিল না, নীরা বোধহয় শুনেছে এ কথা। আজ রাতে নির্ঘাত তুলকালাম হবে।
(৪)
খাওয়া শেষে রুমে গিয়েই দেখি রুম সাজানো। তাও একেবারে কাঁচা ফুল দিয়ে, বোধহয় সদ্য বাগান থেকে ছিড়ে আনা ফুল। নীরা খাটের উপর বসে আছে গাল ফুলিয়ে। আমি এতটাই ভীত হয়ে গেলাম যে এগুতে সাহস হচ্ছিল না। সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কি করব, চুপচাপ শুয়ে পড়ব, নাকি পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টর্নেডোতে স্বেচ্ছায় ঝাঁপিয়ে পড়ব?
-নীরা!
-কি?
নীরা কে নাম ধরে ডাকলে সাধারণত জ্বি বলে উত্তর দেয়, আজ সরাসরি সেটা কি তে পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তার মানে টর্নেডো প্রায় কয়েকশ কিলোমিটার বেগে চলছে বলে ধারণা করছি।
-কি হয়েছে গো?
নীরা এমিনেমের র‍্যাপের স্পিডে বলা শুরু করল।
-তোমাকে বলছিলাম এখানে এসে কোন বোকামি করবা না। বলেছিলাম না? তুমিও বলেছিলে হ্যাঁ করব না। এখন এসে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব বোকামি করেছো। এই যে ফুল দেখতেসো, এগুলা যাতে না করে আমি বলে দিয়েছিলাম, তুমি সায়েদকে ঐ কথাটা বলায় সে এগুলো করেছে। এখন আবার বমি কর, আমি পারবনা বিছানা ধুতে, তুমি গিয়ে ধুবা, মাঝরাতে, ফ্যানের নিচে ধরে শুকাবা, বুঝেছো?
নীরা এক নিঃশ্বাসে বলে গেল সব। আমি কি জবাব দিব ভেবে পাচ্ছিলাম না। আমি নরম সুরে উত্তর দিলাম।
-আমি সায়েদকে প্রশ্নবোধক প্রশ্ন করেছি অর্থাৎ জিজ্ঞেস করেছি। এখন ও সেটাকে আদেশমূলক ধরে নিয়েছে, এখানে আমার কি দোষ?
-আমি তো বলছি না দোষ। তুমি সহ্য করতে পারলে আমার কি সমস্যা!
-সেটাই। আচ্ছা আজ পলিথিন রাখবো। বমি ওখানেই করব।
নীরা চুপ হয়ে গেল। বোধহয় আমার জন্য মায়া বোধ করছে ও, চেহারা দেখে ওটাই বোঝা যাচ্ছে। আমি একপাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম, মনে মনে খুশি হলাম যে যাক পরের দুটো ঘটনা তাহলে নীরার কানে যায়নি। ভেবেই মনে ফূর্তি হল। কিন্তু এ ফূর্তি বেশিক্ষণ টিকলো না।
-তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?
-না। ঘুমাই নি তো।
আমি হাসিহাসি মুখ করে নীরার দিকে ফিরে শুলাম।
-ও। জেগে আছো তাহলে। ভরা মজলিসে তুমি এডাল্ট জোক বলেছো?
এই খেয়েছে। মনে মনে খুশি হয়ে সে খুশি আর টিকল না। আজ মনে হচ্ছে রক্ষা নেই আর।
-অত বেশি নন-ভেজ ছিল না। স্লাইট মানে একটু!
-বড়রা ছিল সবাই, স্লাইট হোক বেশী হোক। কেমন দেখায় বিষয়টা?
-দেখায় না শোনায়।
-প্লিজ!
-আচ্ছা আর কিছু বলবা?
-না।
মুখ গোমরা করে উত্তর দিল নীরা। ওর মন খারাপ হয়েছে সত্যি। কিন্তু ওর মনে আপাতত আর কোন অভিযোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না। বুঝতে পারলাম শেষ অপকর্ম টার জন্য বকা শোনা থেকে বেঁচে গেছি। আমি মনে মনে খুশি হলাম কিছুটা। কিন্তু নীরার মন খারাপ দেখলে ভাল লাগেনা একটুও। আমি ওর হাতটা চেপে ধরলাম।
-আই এম স্যরি নীরু!
-নীরু কে?
-নীরা কে আদর করে নীরু বললাম।
-হয়েছে। আদিখ্যেতা দেখানো হচ্ছে এখন।
বলেই হাত টা ছাড়িয়ে নীরা ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। তবে রাগ কিছুটা কেটেছে, একটু মুচকি হাসি ছিল মুখে শেষ কথাটা বলার সময়। আমি পেছন থেকে নীরার এলোচুলে হাত বুলাতে লাগলাম। এভাবে কিছুক্ষণ কাটার পর হঠাৎ পেটের মধ্যে কেমন মোচড় দিল। মনে ক্ষোভ হল প্রচণ্ড, শরীর ও আজকাল রোমান্টিকতা বুঝে না। এখন আবার পেটের কি বক্তব্য এত রাতে? কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝতে পারলাম বিষয়টা কিছুটা সিরিয়াস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগে নীরা কে জিজ্ঞেস করলাম,
-নীরা, ফ্লাজিল কিংবা মেট্রিল আছে বাসায়?
-কেন? বমির জন্য ফ্লাজিল খায় নাকি।
- না মানে মাংস টা আজ বেশি খাওয়া হয়ে গেছে।
এবার নীরা একদম ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে সোজা আমার দিকে ফিরল। চোখে মনে হচ্ছে আগুন। বাবার মত করে আমার দিকে গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেয়া লুক দিল। মনে মনে ভাবলাম, ভারী রাগী বউ পেয়েছি একটা। কিন্তু তাও মনকে বুঝালাম, “ত্যাড়া হ্যায়, পার মেরা হ্যায়”
(চলবে......)
বউনামা! পর্ব-০২ বউনামা! পর্ব-০২ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 4:57 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প