এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৩

গল্পঃ #এক_টুকরো_চোখের_জল
পর্ব-১৩
-এই রিফাত কোথায় গিয়েছিলিস?
রিফাত হাওয়ায় প্রশ্নের শুনে ধতমত খেয়ে যায়। তাহলে কি বলে দিবো কোথায় গিয়েছিলাম। আর আনিছের বিয়ের কথা কি বলে দিবো?
-এই রিফাত কথা বলছিস'না কেন?
-আগে ভিতরে চল তারপরে বলছি।
-আচ্ছা চল।
রিফাত আর হাওয়া রুমে চলে আসে। হাওয়া রুমে এসে আবার বলে উঠে কোথায় গিয়েছিলিস রে?
-সাপাহার গিয়েছিলাম।
-কেন হঠাৎ করে সাপাহার যাওয়ার কারণ কি?
-আনিছের সঙ্গে দেখা করতে।
-মানে?
-হুম, তোর ব্যাপারে বলতে গিয়েছিলাম।
-কি বলেছিস আনিছকে তুই? আর আনিছ কি বলেছে তোকে!!
রিফাত ভাবতে থাকে! হাওয়াকে কি সব বলে দিবো আনিছের বিয়ের কথা। বললে যদি হাওয়া কষ্ট পায়? না এখন বলে দেওয়াটাই ভালো। পরে আবার বেশি কষ্ট পাবে মেয়েটা।
-এই তারাতাড়ি বল, আনিছ কি বলেছে তোকে? আর আনিছের নম্বর কোথায় পেলি?
-তোর ফোন থেকে সংগ্রহ করেছিলাম?
-ওহ আচ্ছা। এবার বল আনিছ তোকে কি বলেছে। আর তারাতাড়ি বল। রাত্রের রান্না করতে হবে আম্মু একাই রান্নাঘরে আছে।
-বলবো কি বলেছে?
-হ্যাঁ তারাতাড়ি বলে দে কি বলেছে। আর এইসব নেকামি বাদ দে।
-ওই কি বললি আমি নেকামি করছি!!
-তা নয়তো কি। কথা না বাড়িয়ে বলে ফেল, আনিছ কি বলেছে তোকে।
রিফাত হাওয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে।
-আনিছের বিয়ে ছয় তারিখে? আর বলেছে আনিছকে যেন তুই ভুলে যাস।
হাওয়া চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে রিফাতের দিকে। চোখ গুলো লাল হয়েগেছে মেয়েটার রাগে। রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে রিফাতের শার্টের কলার ধরে বলতে থাকে হাওয়া।
-না এটা কখনো হতে পারে'না। আনিছ আমাকে ভালোবাসে, অনেক ভালোবাসে। আনিছ আমাকে ছারা অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারে না। তুই মিথ্যা বলছিস। বল তুই মিথ্যা বলছিস। কালকেই আনিছের বাসায় যাবো আমি। এগুলা তোর বানোয়াট কথা। তুই মিথ্যুক। তোক অনেক বিশ্বাস করতাম তবে আর না। তুই খুব খারাপ বাজে।
কথা গুলো বলে হাওয়া রুম থেকে বের হয়ে যায়। রিফাত এখন কি করবে বুঝতে পাচ্ছেনা। আজকে তিন তারিখ। আর তিনদিন পর আনিছের বিয়ে। হাওয়া তো রিফাতকে বিশ্বাস করতে পাচ্ছেনা। উল্টে বলছে। রিফাত মিথ্যাবাদি। যাকে হাওয়া চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করতো। রিফাতের কিছু ভালো লাগছেনা আজ। হাওয়া রিফাতকে এইসব বলতে পারলো।
.
.
হাওয়া মায়ের সঙ্গে রাতের ভাত তরকারি রান্না করছে। রিফাতের আম্মু লক্ষ করে হাওয়ার চোখে পানি। তাই আম্মু হাওয়াকে জিগ্যেস করে।
-হাওয়া মা, তোমাদের মধ্যে কি ঝগড়া হয়েছে?
-না মা,
হাওয়া চোখের জল গুলো মুছে নেয়। আম্মু বুঝতে পেরে যায়। রিফাত আর হাওয়ার মধ্যে কিছু একটা হয়েছে। তাই হাওয়া মন খারাপ করো আছে আজ। রিফাতের আম্মু আর কিছু বলে'না। রাতের ভাত তরকারি রান্না করছে হাওয়া। এদিকে রিফাতের আম্মু রিফাতের রুমে আসে। রিফাত বিছানায় সুয়ে আছে চুপটি করে। আম্মু রিফাতের কাছে গিয়ে রিফাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রিফাত চোখ মেলে দেখে আম্মু পার্শে বসে আছে।
-আম্মু তুমি এখানে।
-হ্যাঁ আমি এখানে। রাত ৭ঃ৩০ মিনিট বাজে আর তুই কি'না এখনো সুয়ে আছিস।
-সরি আম্মু একটু ঘুম পেয়েগেছিলো।
-আচ্ছা সমস্যা নেই। একটা কথা বলতে এসেছিলাম।
-হুম বলতে পারো।
-হাওয়ার সঙ্গে কি ঝগড়া করেছিস?
-কই নাতো আম্মু। হাওয়া কি তোমাকে কিছু বলেছে?
-না কিছু বলেনি। হাওয়া বউমা মন খারাপ করে আছে অনেক। তাই ভেবেছিলাম তোদের মধ্যে হয়তো ঝগড়া হয়েছে।
-ওহ আচ্ছা।
-আর হ্যাঁ, ঝগড়া হলে তুই আগে সরি চেয়ে নিস। আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু। তুমি রুম থেকে যাও।
-হ্যাঁ যাচ্ছি, তুই ওজু করে মসজিদের যা।
-আচ্ছা আম্মু, আমার কিউট আম্মুটা।
-হা হা পাগল ছেলে একটা।
-হুম, তোমার পাগল ছেলে শুধু।
রিফাতের আম্মু রুম থেকে বের হয়ে গেলে। রিফাত ওজু করে মসজিদের চলে যায় নামাজ পড়ার জন্য। রিফাত সবকিছু ছারতে পারে, তবে নামাজ কখনো ছারে না। এদিকে হাওয়ার মনটা সত্যিই খারাপ আজ। রিফাত কিভাবে পারলো। এতোটা মিথ্যা কথা বলতে। আচ্ছা রিফাত তো মিথ্যা বলেনা আমাকে। যদি কথাগুলো সত্যি হয়ে যায়।
হাওয়ার মনের মাঝে একটা ভয় সৃষ্টি হয়ে গেছে। কথাগুলো যদি সত্যি হয়ে যায়। না কালকেই আনিছের বাসায় যাবো আমি। আনিছ এমনটা কখনো করতে পারে না।
.
.
.
.
রাত নয়টা।
আনিছ অফিস থেকে বাড়ি ফিরে এসেছে। আনিছ গোসল করে এসে খাবার টেবিলে যায়। আনিছের আম্মু আনিছের জন্য ভাত তরকারি টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। আনিছের ছোট্ট বোন আফরা আব্বু আম্মু সকলে টেবিলে বসে পরে। আনিছ কিছু একটা বলতে চাইছে আম্মু আব্বুকে। তবে বলতো পারছে না। শেষে মুখফুটে বলে ফেলে আনিছ।
-আম্মু আব্বু আমি বিয়ে করতে চাই।
আনিছের কথা শুনে আম্মু আব্বু আকাশ থেকে পরে। যে ছেলেকে হাজারবার বলেছে বিয়ে করার জন্য। তবে প্রতিবারে না করে দিয়েছে। আর সেই ছেলে নিজে থেকে বলছে। আমি বিয়ে করতে চায়। আব্বু আম্মু আফরা সকলে খুশি হয়ে যায়। আফরা বলে উঠে।
-সত্যি ভাইয়া তুমি বিয়ে করবে। আমার ভাবি হবে সত্যি।
আনিছ মিস্টি হেঁসে ছোট্ট বোনটাকে বলে।
-হ্যাঁ আমি বিয়ে করতে চাই।
আব্বু আম্মু খুশি হয়ে বলে উঠে।
-তাহলে তো মেয়ে দেখতে হবে।
-না আম্মু মেয়ে দেখতে হবে না।
-মানে, তুই কি কোনো মেয়েকে পচ্ছন্দ করিস।
-হুম
-নামকি মেয়েটার? আর কোনদিন বিয়ে ঠিক করে আসবো?
-মেয়েটার নাম তানিয়া। আর আমি বিয়ে ঠিক করে এসেছি। ৬ তারিখে আমাদের বিয়ে।
-কিহহ্ দেখো দেখো তোমার ছেলে নিজে নিজে বিয়ে ঠিক করে এসেছে। এমন ছেলেকে পাবে কোথায় তুমি। আবার ৬ তারিখে বিয়ে। আর তিনদিন পর। কতকি আয়োজন করতে হবে। এই তিনদিনে কি সম্ভব।
আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে উঠে আনিছ। আম্মু আম্মু কতটা চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছে।
-আব্বু আম্মু দুজনে শুনো। আমি সবাইকে জানিয়ে এসেছি। আর সবাইকে দাওয়াত দিয়েছি। গ্রাম থেকে আমার বন্ধু বান্ধবীরা আসবে কালকে। আর বিয়ের আনুষ্ঠানের কোনো চিন্তা করতে হবেনা তোমাদের।
আনিছের কথাটা শুনে আব্বু আম্মু অনেক খুশি হয়ে যায়। আনিছের ছোট্ট বোন আফরা বলে উঠে।
-ভাইয়া আমাকে শাড়ী কিনে দিবে কিন্তু কালকে। তোমার বিয়ে বলে কথা।
আফরার কথা শুনে আনিছ মিষ্টি হেঁসে উঠে।
-এই তোর বয়স কত রে। সবে মাত্র ক্লাস সেভেন এ পড়ছিস। আর বলছিস শাড়ী পড়বি। তোকে একদম বুড়ি বুড়ি লাগবে।
-দেখে আম্মু আব্বু, ভাইয়া কিসব বলছে। আমাকে কেন বুড়ি বুড়ি লাগবে? আমাকে অনেক সুন্দর লাগবে। একদম বউ বউ।
আফরার কথা শুনে সকলে হেঁসে উঠে।
-ওলে বাবালে, আমার পিচ্চি বোনটার দেখছি অনেক শখ বউ সাজার।।
-হুম অনেক শখ।
-আচ্ছা কিনে দিবো সমস্যা নেই।
(চলবে?)
এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৩ এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৩ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 1:38 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প