এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৪ (অন্তিম পর্ব)।

গল্পঃ #এক_টুকরো_চোখের_জল
#পর্ব_১৪ (অন্তিম পর্ব)
লেখকঃ #Mohammad_Asad
ফজরে আজানের ডাকে ঘুম ভাঙে হাওয়ার। আজকে গেস্ট রুমে ঘুমিয়ে ছিলো হাওয়া। ওজু করে এসে নামাজ পড়ে নেয়। রিফাতের রুমে এসে দেখে রিফাত এখনো ঘুমের মাঝে মগ্ন।
সারারাত জেগে ছিলো রিফাত তাই হয়তো ঘুমিয়ে আছে। হাওয়া রিফাতের রুমে এসে রিফাতকে ডাকতে শুরু করে।
-এই রিফাত উঠ বলছি।
-,,,,,,,,,
রিফাত কিছু বলছে না। হাওয়া যতবার রিফাতকে ডেকে দিচ্ছে ততবার রিফাত এপাশ ওপাশ করে সুয়ে পড়ে। এবার হাওয়া রেগে রিফাতকে ডাক দিতে শুরু করে।
-এই কি হয়েছেটা কি চেয়াচ্ছিস কেন?
-কি হয়েছে তাই'না। কয়টা বেজেছে খেয়াল আছে তোর।
রিফাত ঘরির দিকে তাকিয়ে দেখে। ফজরের নামাজের সময় চলে যাচ্ছে। রিফাত তারাতাড়ি উঠে ওজু করে মসজিদে চলে যায়। এদিকে হাওয়া মুচকি হেঁসে উঠে রিফাতের কিত্তি দেখে।
.
.
.
রিফাত মসজিদ থেকে আসে সকালে। রুমে বসে বসে ফোন টিপছে রিফাত। হাওয়া এসে রিফাতকে চা-দিয়ে বলে।
-এই চাটা খেয়ে নে।
-আব্বু আম্মুকে দিয়েছিস?
-হ্যাঁ দিয়েছি।
রিফাত চায়ে চুমুক দিয়ে বলে।
-তোর হাতের চা হেব্বি হয়'রে।
-হা হা তাই।
-হুম তাই।
.
.
.
.
সকাল ৯ঃ৩০ মিনিট।
হাওয়া কোথায় যেন যাচ্ছে সেজেগুজে। রিফাত হাওয়াকে দেখে বলে উঠে।
-এই কোথায় যাচ্ছিস রে?
-এই তো আনিছের বাসায়?
-মানে?
-মানে আবার কি। আনিছের বাসায় যাচ্ছি। আনিছের আব্বু আম্মুর সঙ্গে কথা বলবো আমি।
-আমিও যাই তাহলে।
-তোকে যেতে হবে না। আমি একাই যেতে পারবো। দুইশো টাকা হবে তোর কাছে।
-দুইশো'টাকা
-হুম
-এই নে।
-এই ২হাজার টাকা দিলি কেন?
-আনিছের বাসায় যাবি খালি হাতে? কিছুতো একটা নিয়ে যেতে হবে নাকি। আর তুই যাচ্ছিস আনিছের বিয়ে ভাঙতে।
-বয়ে গেছে আনিছের বিয়ে ভাঙতে আমার। আনিছের কোনো বিয়ে হচ্ছেনা আমি ভালো করে যানি। আনিছ আমাকে অনেক ভালোবাসে।
-আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে যা আমি মিথ্যা বলছি কিনা।
-হু,
.
.
.
হাওয়া আজকে আনিছের বাসায় যাচ্ছে। আনিছের কি এমন রাগ যে আমার সাঙ্গে এমন করছে? আজকে সব রাগ ভেঙে দিবো। আজকে চলে এসেছি তোমার কাছে আনিছ। কথাগুলো ভাবতে থাকে হাওয়া। আনিছের বাসায় ডুকেনি কখনো হাওয়া। তবে বাড়ির এড্রেসটা ছিলো হাওয়ার কাছে।
.
.
.
কলিংবেলটা বাজাতেই। আফরা দৌড়ে এসে দরজাটা খুলে দেয়। আমার ভাইয়া এসেছে তাই'না। দরজা খুলতেই দেখে একটা মেয়ে। আফরা বলে।
-তুমি কে গো?
-আমি হাওয়া,
-হিহিহি কিসের হাওয়া। বাতাস বললেই তো হয়।
হাওয়ার কথাগুলো শুনে মুচকি হেঁসে উঠে।
-আমার নাম হচ্ছে হাওয়া। আচ্ছা তোমার নাম কি?
-আমার নাম আফরা।
নামটা শুনেই হাওয়া বুঝে যায়। আনিছের ছোট্ট বোন। হাওয়া মিস্টি হেঁসে আফরাকে বলে।
-তোমার ভাইয়া বাসায় আছে?
-কেন ভাইয়াকে নিয়ে কি করবেন আপনি?
-কথা বলার ছিলো?
-ভাইয়া তো বাড়িতে নেই। বিকেলে জিনিসপত্র কিনতে যাবো সকলে আমরা। শাড়ী চুরি গহনা অনেক কিছু।
-মানে?
-হু, আমার ভাইয়ার বিয়ে ছয় তারিখে। আজকে চার তারিখ। আর দুইদিন পর আমার ভাইয়ার বিয়ে হিহিহি।
হাওয়ার চোখ দিয়ে অজান্তেই আজকে জল পড়তে শুরু করে। আনিছ এটা কিভাবে করতে পারে। হাওয়া তখন চলে আসছিলো বাসার উদ্দেশে। হঠাৎ করেই আনিছের সঙ্গে হাওয়ার দেখা হয়ে যায়।
-আনিছ তুমি এটা করতে পারলে।
-সরি হাওয়া, হয়েছেটা কি।
-কি হয়েছে? তুমি এই আমাকে ভালোবাসো। এই জন্য আমাকে স্বপ্ন দেখিয়েছো।
আনিছ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে।
-হাওয়া আমি তোমাকে ভালোবাসতাম কথাটা আসলে সত্যি। তবে রিফাত তোমাকে অনেক ভালোবাসে। আর তুমি হয়তো যানোনা। স্কুল লাইফে একটা মেয়েকে আমি ভালোবাসতাম। মেয়েটার নাম ছিলো তানিয়া। আমার জীবনে আবার ফিরে এসেছে। তুমি রিফাতকে নিয়ে সুখে থাকো প্লিজ। আর আমাকে সুখে থাকতে দেও।
কথাগুলো বলার সঙ্গে সঙ্গে হাওয়ার আনিছের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়।
-আমি ভাবতেও পাচ্ছি না। এতোদিন তুমি আমার সঙ্গে অভিনয় করেছো। আর আরেকটা মেয়েকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেছো। তোমার জন্য রিফাতকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি আর না। তোমার জন্য রিফাতকে মিথ্যুক ভেবেছি আমি। ভালো থাকিস। আর সরি রে তোকে এতোটা ভালোবাসার জন্য। নতুন জীবনের জন্য শুভেচ্ছা রইলো।
কথাগুলো বলে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছে হাওয়া। চোখের কোনায় আসা জলটুকু মুছে নিয়ে একটা সিয়েন্জিতে করে বাসায় ফিরে আসে হাওয়া। বাসায় এসে রিফাতকে ডাকতে শুরু করে। রিফাতের আম্মু এসে হাওয়াকে বলে রিফাত বাইরে গেছে।
হাওয়া রুমে এসে। টেবিলে বসে বসে ভাবতে থাকে পাগলটা কোথায় গিয়েছে? আসুক আগে তারপর দেখাচ্ছি। হাওয়া রিফাতের ডাইরিটা হাতে নিয়ে পড়তে থাকে।
শেষের পাতায় লিখাছিলো। হাওয়া তোকে আমি অনেক ভালোবাসতাম রে। আমাকে মিথ্যুক বলতে পারলি। এতোটা অবিশ্বাস করিস তুই আমাকে, ভাবেনি কখনো।
.
.
.
দুপুর ১টা বেজে গিছে রিফাত বাড়ি ফিরছে না। তাই রিফাতকে ফোন করতে গেলে। হাওয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে। রিফাত অনেকবার ফোন দিয়েছে হাওয়ার ফোনে। সাইলেন্ট করা ছিলো তাই বুঝতে পারিনি হাওয়া। ফোনটা তুলেই। হাওয়া রিফাতের ফোনে কল দেয়। ওপাশ থেকে একটা মেয়ের কন্ঠ ভেসে আসে।
-আসসালামু আলাইকুম
-উলাইকুম আস্সালাম। আপনি কে আর আপনার হাতে রিফাতের ফোন কোথার থেকে আসলো।
-সরি মেম, আমি রিফাত না। কি যেন বলছিলেন ওহ রিফাত। আসলে রিফাত নামে এই ছেলেটির এক্সিডেন হয়েছে তারাতরি হাসপাতালে চলে আসেন।
-কোন হাসপাতাল।
কথা গুলো বলে হাওয়া হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। হাওয়া বাবা-মাকে নিয়ে হাঁসপাতালে চলে যায়।
.
.
.
হাওয়া হাঁসপাতালে এসে ডক্টরকে জিগ্যেস করে।
-আমার রিফাত কোথায়।
-আপনি রিফাতের ওয়াইফ?
-হ্যাঁ আমি রিফাতের ওয়াইফ।
ডাক্তার দীর্ঘশ্বাস ছেরে বলে।
-সরি, আপনার হাসবেন্ড বেঁচে নেই।
-মানে কি বলতে চাইছেনটা কি?
-কিছুক্ষণ আগে শ্বাস ত্যার্গ করেছে।
হাওয়া ডাক্তারের কলার ধরে বলতে থাকে। -না এইটা কখনো হতে পারে না। মিথ্যা বলছেন আপনি।
-আসলে আপনার হাসবেন্ডের অনেক রক্তক্ষয় হওয়ার কারণে মারা গেছে। শ্বাস ত্যাগ করার আগে। কি যেন লিখে গিয়েছেন। ভিতরে গেলে দেখতে পারবে।
হাওয়া কান্না করতে করতে ভিতরে চলে যায়। এদিকে তো বাবা-মা কান্না করছেই। হাওয়া ভিতরে গিয়ে দেখে রিফাতকে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পর্শে একটা কাগজের টুকরো।
হাওয়া হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। হাওয়া রিফাতের মুখের কাপড়া সরিয়ে দেখে রিফাত আর নেই।
-এই রিফাত কি হয়েছে তোর উঠ বলছি্।
এদিকে আব্বু আম্মু কান্না করছে আর এদিকে হাওয়া। রিফাত ঘুমিয়ে গেছে। চলে গেছে না ফেরার দেশে। সেখান থেকে চাইলেও যে ফেরানো যায় না কাউকে।
হাওয়া কাগজের টুকরোটা হাতে নিয়ে দেখে। রিফাত লিখেছে।
-হাওয়া তোর কথা আমি রেখেছি রে। তোর কাছে আর কক্ষনো ফিরে আসবো না। আমি চলে যাচ্ছি অনেক দূরে। যানতাম না আজকে আমি চলে যাবো না ফেরার দেশে। তোকে খুজতে বের হয়েছিলাম। দেখতে দেখতে একটা বাস এসে ধাক্কা দিয়ে চলে যায় আমাকে। আমি মনে হয় আর বাঁচবোনা রে। ভালো থাকিস। আর কখনো তোকে আমি বিরক্ত করবো'না। তবে আমি তোকে কক্ষনো মিথ্যা বলিনাই। পারলে ক্ষমা করে দিস। আই লাভ ইউ হাওয়া, আই লাভ ইউ।
হাওয়া রিফাতকে জরীয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। এই রিফাত উঠ বলছি তোর কিছু হয়নি। তোকে আমি ভালোবাসি। এই দেখ তোর বেস্ট ফেন্ডটা তোর পার্শে বসে আছে। তবুও কি এভাবে ঘুমিয়ে থাকবি।
যে একবার চলে যায় না ফেরার দেশে। তাকে আর ফেরানো যায়না। হাজার কান্না করলেও যে ফেরানো যায় না।
...............................সমাপ্ত.................................
এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৪ (অন্তিম পর্ব)। এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১৪ (অন্তিম পর্ব)। Reviewed by গল্প প্রেমিক on 1:39 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প