অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৮ (শেষ পর্ব)।
#পর্ব_০৮_এবং_শেষপর্ব।
.
-আচ্ছা আজ রাতে কত বার হয়েছে?
-আরে কি কত বার হয়েছে?
-কিরে এনি কত বার হয়েছে?
-রাতে দুই বার হয়েছে, এখন চুপ করো। তখন সবাই হাসাহাসি শুরু করে ।
এসবের মাঝে জুই এর ফোন আসে, শান্ত মোবাইল হাতে নেওয়ার পরে এনি উকি দিয়ে দেখে জুই ফোন করেছে তখন সবার সামনে শান্তকে বলে দেখি তো মোবাইলটা, এখান দাও বলে এনি মোবাইলটা নিয়ে এনির কাছে রাখে।
তারা সবাই ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার দিকে সবাই বাসায় ফিরে।
শান্ত আর এনি তাদের রুমে প্রবেশ করার পরে...
-মোবাইল টা দাও (শান্ত)
-না দিবো না
-মানে কি?
-মানে খুব সোজা, মোবাইল দিবো না, যখন কোনো জায়গায় ফোন দিবা তখন আমার মোবাইল নিয়ে কল দিও।
-বলছি মোবাইল দিতে।
-না দিবো না।
-শান্ত যখন এনির হাত থেকে জোর করে নিতে চাচ্ছে, এনি মোবাইল ফ্লোরে ফেলে দেয়। ফ্লোরে ফেলার সাথে সাথে মোবাইল এর ডিসপ্লে টা কয়েক জায়গায় দিয়ে ভেঙ্গে যায়।
শান্ত তখন মোবাইল টা নিচ থেকে উঠিয়ে দেখে ডিসপ্লে টা ভেঙ্গে গেছে।
শান্ত এনির দিকে চেয়ে, যা করো ভালোই করো বলে শান্ত এনির কাছ থেকে চলে যায়।
এনি, জুই আর শান্তর মাঝে এভাবে কয়েকদিন চলার পরে পরীক্ষা চলে আসে, শান্ত তখন পড়া লেখায় মন দেয়।
পরীক্ষা শেষে পূর্বের মতো শান্ত ভার্সিটির প্রথম হয়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ব্যাংকের ম্যানেজার পদের একটা পরীক্ষা আসে।
শান্ত এটাতে এপ্লাই করার পরে শান্ত পরীক্ষা দিয়ে এটাতেও পাশ করে।
এই খবর শুনে সবাই খুশি হয়, জুই একদিন শান্তকে ডেকে একসাথে মিট করে।
তাদের মিট হওয়ার সাথে সাথে শান্ত জুইকে দেখতে পেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়, কারন জুই আগের মতো নেই, জুই আগে যেভাবে হাসতো এখন সেভাবে হাসে না , আগে চোখে কাজল দিয়ে নীল বোরকায় নীল হিজাব পরে আসতো কিন্তু এখন চোখে আর কাজল লাগায় না, রাত জাগতে জাগতে চোখের নিচে কালো দাগ তুলে ফেলছে।
জুই শান্তকে দেখে চোখ দিয়ে ননস্টপ পানি ফেলতে থাকে।
-জুই এখন আর কান্না করতে হবে না, তোমার শান্ত ভালো একটা চাকরি পেয়ে গেছে। এই কয়দিনের মধ্যে তোমাকে আমি ঘরে তুলবোই।
-এই অপেক্ষায় এতদিন বেঁচে আছি।
-চলো(শান্ত)
-কোথায়?(জুই)
-রেস্টুরেন্টে যাবো।
-কেন?
-আগে আসো তারপর বইলো কেন।
-রেস্টুরেন্ট থেকে তো এটাই ভালো।
-ভালো সেটা জানি কিন্তু এখন আমার সাথো আসো বলে জুইকে শান্ত রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।
শান্ত রেস্টুরেন্টে ডুকে কিছু অর্ডার করে, ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পরে শান্ত নিজ হাতে জুইয়ের মুখে বাড়িয়ে দেয়। জুই তা দেখে কান্না করে দেয়।
-আরে কান্না করো কেন? খেয়ে নাও বলছি।
-এভাবে সারাজীবন খাওয়াতে পারবা?
-ইনশাল্লাহ পারবো।
-যদি না পারো তাহলে কিন্তু আমার মরা......
-কথা শেষ না করতে'ই শান্ত হাত দিয়ে কিছু খাবার মুখে ডুকিয়ে দেয়।
-আর এসব বলবা তাহলে খবর আছে বলে দিলাম।
এভাবে তারা আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে শান্ত জুইকে নিজের সাথে করে নিয়ে বাসায় দিয়ে আসে।
শান্ত বাসায় আসার পরে এনি শান্তকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে উঠে কানে হালকা করে কামড় মারে।
-কি করছো এসব? ছাড়ো বলছি(শান্ত)
-না ছাড়বো না।
-না ছাড়লে কিন্তু খারাপ হবে।
-ছাড়বো না, কি করবা করো বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
শান্ত তখন জোর করে নিজকে ছাড়িয়ে নেয়।
-রুমে আসো তোমার সাথে কথা আছে।(শান্ত)
-আমি কি কিছু ভুল শুনতেছি?
-না ভুল না।
-ওহহ আমি তো মনে করছিলাম কোনো স্বপ্ন বুঝি দেখতেছি।
-এসব মনে হলো কেন?
-তুমি আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে কথা বলবা তাই,
-ওহহ, রুমে আসো বলে শান্ত রুমে চলে যায়।
কতক্ষণ পরে এনি রুমে আসে।
-কি বলবা বলো(এনি)
-এখন কিছু কথা বলবো।
-কি বলবা বলো।
-প্রশ্নগুলো একটু কঠিন হতে পারে।
-আরে আগে করো তো?
-তুমি আমাকে কি দেখে লাভ করছো?
-এখন এসব জানার কি আছে?
-যা বলছি তা বলো,
-তোমাকে দেখে তোমার প্রেমে পরছি,
-প্রেমে পরার কারনটা কি?
-এনি তখন চুপ হয়ে যায়।
-আমি তোমার কারণটা বলে দেয়, তুমি আমাকে নিজের মন থেকে কখনো ভালোবাসনি, ভালোবাসছো শুধু মাত্র জুই এর উপর প্রতিশোধ নিতে। ঠিক কি না?
-এনি তখন চুপ হয়ে আছে।
-যা বলছি তার উত্তর দাও।
-এখন তো তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।
-এটা সত্যিকারের ভালোবাসা না।
-তো কি?
-তুমি ফেইক লাভার।
-কিভাবে?
-কারণ তুমি একজনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে ভালোবাসছো।
-এসব বাদ দাও না।
-কেন বাদ দিবো? আচ্ছা জুইয়ের কি তোমাদের থেকে কোনো কিছু কম আছে?
-না।
-তাহলে তুমি তার সাথে এমনটা করলে কেন? তুমি কি ইদানিং জুইকে দেখছো?
-না।
-তা দেখবা কেন? জুই তোমার কি হয়? শত্রু
তাই না?
-চুপ হয়ে আছে।
-চুপ হয়ে আছো কেন?
জুই তো তোমাকে প্রথম ই বলেছিলো যে আমাকে পছন্দ করো কি না তখন তো জুইয়ের সাথে বলছিলা কাজের ছেলেকে আমি পছন্দ করবো? বলে অনেক হাসি তামাসা করেছো আর তাইও সে আমাকে ভালোবাসছে। আর তাই তুমি জুইয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে গেছো।
আচ্ছা শুনো, জুই কি তোমাকে কখনো উপকার করে নি?
-হ্যা করেছে
-উপকার কতবার করেছে?
-অনেকবার
-আর তোমার অনিচ্ছয় কাজ করেছে কয়টা?
-একটা
-হুম সেটা হলো ও তোমার কথায় অবাদ্য হয়ে আমাকে ভালোবাসছিলো, রাইট?
-হুমম,
-জুই তোমাকে অনেকগুলো উপকার করেছে আর তোমার কথার অমান্য করছে একবার। তুমি একবার অন্যায় করার জন্য প্রতিশোধ নিয়ে নিচ্ছো আর এতদিনের উপকারের কি প্রতিদান দিছো?
-এনি এসব কথা শুনে শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকায়।
-জুইকে এখন দেখলেও চিনতে পারবে না বলে শান্ত এনির সামনে কান্না করে দেয়।
শান্তর মোবাইলে তখন একটা ফোন আসে।
মোবাইল বের করে দেখে জুইয়ের নাম্বার থেকে ফোন আসছে।
.
শান্ত ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপরপাশ থেকে কেউ একজন বলে ভাইয়া তারাতারি সদর হসপিটালে আসো বলে ফোন কেটে দেয়।
শান্ত তখন বুঝতে পেরে পাগলের মতো হয়ে যায় তখন শান্ত এনিকে বলে আমার জুই তোর কি ক্ষতি করছিলোরে? আমাদের কেন একসাথে থাকতে দিলি না? যদি আমার জুইয়ের কিছু হয় তাহলে আমি তোকে মেরে ফেলবো বলে দিলাম বলে শান্ত হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
এনির তখন নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আসলেই তো জুই আমার কোন ক্ষতি করে নাই তাহলে আমি কেন তার সাথে এমনটা করলাম?
ও আমার সাথে ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ালেখা করে আসছে আর দু'জনের সবকিছু দু'জনের সাথে শেয়ার করেছি আর এই কয়দিনে আমি এতো পরিবর্তন হলাম কিভাবে?
কিসের জন্য এমন হলাম?
এসব ভাবতে ভাবতে এনিও হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
শান্ত হসপিটালে গিয়ে রুমে ডুকে দেখে জুইয়ের নাকে মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে লম্বা করে শুইয়ে রাখছে আর জুই বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। আর জুইয়ের চারপাশে জুইকে ওদের পরিবারের সবাই ঘিরে রাখেছে।
শান্ত এসব দেখে অস্ফুট শব্দে চোখের পানি ফেলে দেয়। হ্যা আল্লাহ্ তুমি আমার সারাটা জীবন'ই কষ্টে রেখে আসছো, আল্লাহ্ আমার এই সুখ পাখি টাকে কেড়ে নিও না।
আমি ওরে ছাড়া বাঁচতে পারবো না বলে একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়। তখন এনি পাশ দিয়ে এসে এনিও কান্না করে দেয়।
কান্নার চেনা কন্ঠের শব্দটা শুনে জুই চোখ খুলে।
জুই চোখ খুলে শান্তর দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।
শান্ত এসব দেখে যেন পাগলের মতো হয়ে যাচ্চে।
বাবা তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাও প্লিজ
তখন সবাই বাহিরে যায়, রুমে এনি আর শান্ত থেকে যায়...
-এই বাবুনি তোমার কি হয়েছে? (শান্ত)
-শান্ত আমার কিছু'ই হয় নাই বলে একটু মুচকি হাসি দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায়
-বলো কি হয়েছে?
-কিছু না।
-জুই আমাকে মাফ করে দিস(এনি)
-আরে এসব কি বলছিস(জুই)
- আমি যার সাথে চলতে চলতে এত বড় হয়েছি আর তার সাথে কিভাবে এটা করতে পারলাম?
জুই আমি প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে গেছিলাম। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি আমার বাবার কাছে বলে তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করবো বলে এনি জুইয়ের হাত ধরে কান্না করে দেয়।
-আরে এসব কি করছিস?
-বল আমাকে ক্ষমা করছিস?
- না ক্ষমা করবো একটা শর্তে,
-বল কি শর্ত?
-শান্তকে নিয়ে সারাজীবন সংসার করবি আর ওর কাছে সবসময় মাথা নত করে রাখবি। আমাদের মা ফাতেমা যেমন তার স্বামীর কথা মেনে চলছে তুইও এভাবে চলবি আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরিস।
-এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
-এসব কি বলছিস? (এনি)
-জুই এই শান্তর সবটুকু ঘিরে শুধু জুই আর জুই আর কিছুই না।
-আমাকে ভালোবাসো না?
-জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
-তাহলে আমি যদি একটা আবদার করি রাখবেনা?
-রাখবো বলো।
-আমাকে যেভাবে ভালোবাসছো এনিরে আমি মনে করে ওকেও তেমন ভাবে ভালোবাসবা।
-জুই একটা মানুষের কাছে এমন কিছু চাইতে নেই যেটা ও দিতে গিয়ে পথের ফকির হয়ে যায়। আর শুনো আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।
-শান্ত আমি মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাঁচতে পারবো না, প্লিজ আমাকে তোমার বুকে নিবে?
-এই এসব কি বলছো? তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। তুমি চলে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না। তুমি আমার থেকে দূরে চলে গেলে আমাকে কে শাসন করবে?
-যদি আমাকে একবিন্দু হলেও ভালোবেসে থাকো তাহলে এনিকে ভালোবেসে স্ত্রীর সঠিক মর্যাদা দিবা আর ভালো না বাসলে দরকার নেই বলে জুই চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
এসব শুনে শান্ত আর এনি দুজনেই কান্না করে দেয়।
-এনি এখানে এসে বস।
বসার পরে। তোরে আমি সারাজীবন বোনের মতো দেখে আসছি। শান্ত আমার কলিজা।
শান্তরে তুই অনেক ভালোবাসবি আর অনেক কেয়ার করবি, ওর বাবা-মা অনেক আগে হারিয়েছে, ওর জীবনে অনেক দুঃখ, ওর দুঃখ গুলো তুই সুখে পরিণত করিস বলে শান্তর হাত টা শক্ত করে ধরে শান্তর চোখের দিকে চেয়ে আমাকে শেষ বারের মতো বুকে নিবানা?
-শান্ত কান্না করতে করতে জুইকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
-শান্ত আমি যা বলছি সবকিছু কইরো।
-জুই তোমার কিছু হবে না।
-তোমার ঠোটের স্পর্শ টুকু দিবানা?
-শান্ত তখন জুইয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বুকে নেওয়ার পরে শান্ত অনুভব করে জুইয়ের শরীরটা নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে যায়।
শান্ত তখন বুকে থেকে নামিয়ে দেখে জুই আর নেই শান্ত তখন হাউমাউ করে চিল্লানী দিয়ে কান্না করে দেয়।
এনি এসব দেখে এনিও নির্বাক হয়ে যায়।
শান্তর চিল্লানির আওয়াজ পেয়ে ওর পরিবারের সবাই এসে দেখে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরে।
এর কয়েকদিন পরে
শান্ত নামাজে দাড়ায়, নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে দেখে এনিও তার পিছনে থ্রি পিছের সাথে হিজাব পরে নামাজ পড়তেছে।
শান্ত তখন মোনাজাত করে ছাদের এক কোনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
এনিও শান্তর পিছনে পিছনে গিয়ে দেখে শান্ত দাড়িয়ে আছে।
এনি তখন শান্তকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে...
-আমাকে মাফ করে দাও বলে এনিও কান্না করে দেয়।
-শান্ত চুপ করে আছে।
-এনি তখন শান্তর দু'হাত দিয়ে পায়ে জড়িয়ে ধরে ফেলে, শান্ত এনিকে উঠিয়ে নেয়।
-শান্ত আমাকে মাফ করে দাও, শান্ত আমি জানি তুমি এখনো জুইকে ভুলতে পারো নি।
আমি কখনো বলবো না জুইকে ভুলে যেতে।
শান্ত তুমি জুইকে যেভাবে ভালোবাসতে আমাকে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ বাসলেও চলবে।
আমি কখনো তোমার উপর কথা বলবো না, আমি এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো আর প্রতিদিন কোরআন পাঠ করবো বলে এনি একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়।
শান্ত তখন এনিকে বুকে টেনে নেয়।আর এনি তার সব শক্তি দিয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরে।
শান্ত তখন এনির মাথা টা বুক থেকে উঠিয়ে ঘুমটা টা টেনে কপালে চুমু খেয়ে আবার বুকে টেনে নেয়।
শান্তর কাছে মনে হচ্ছে এটা এনি না এটা হচ্ছে তার জুই।
.
---------#সমাপ্ত----------
.
-আচ্ছা আজ রাতে কত বার হয়েছে?
-আরে কি কত বার হয়েছে?
-কিরে এনি কত বার হয়েছে?
-রাতে দুই বার হয়েছে, এখন চুপ করো। তখন সবাই হাসাহাসি শুরু করে ।
এসবের মাঝে জুই এর ফোন আসে, শান্ত মোবাইল হাতে নেওয়ার পরে এনি উকি দিয়ে দেখে জুই ফোন করেছে তখন সবার সামনে শান্তকে বলে দেখি তো মোবাইলটা, এখান দাও বলে এনি মোবাইলটা নিয়ে এনির কাছে রাখে।
তারা সবাই ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যার দিকে সবাই বাসায় ফিরে।
শান্ত আর এনি তাদের রুমে প্রবেশ করার পরে...
-মোবাইল টা দাও (শান্ত)
-না দিবো না
-মানে কি?
-মানে খুব সোজা, মোবাইল দিবো না, যখন কোনো জায়গায় ফোন দিবা তখন আমার মোবাইল নিয়ে কল দিও।
-বলছি মোবাইল দিতে।
-না দিবো না।
-শান্ত যখন এনির হাত থেকে জোর করে নিতে চাচ্ছে, এনি মোবাইল ফ্লোরে ফেলে দেয়। ফ্লোরে ফেলার সাথে সাথে মোবাইল এর ডিসপ্লে টা কয়েক জায়গায় দিয়ে ভেঙ্গে যায়।
শান্ত তখন মোবাইল টা নিচ থেকে উঠিয়ে দেখে ডিসপ্লে টা ভেঙ্গে গেছে।
শান্ত এনির দিকে চেয়ে, যা করো ভালোই করো বলে শান্ত এনির কাছ থেকে চলে যায়।
এনি, জুই আর শান্তর মাঝে এভাবে কয়েকদিন চলার পরে পরীক্ষা চলে আসে, শান্ত তখন পড়া লেখায় মন দেয়।
পরীক্ষা শেষে পূর্বের মতো শান্ত ভার্সিটির প্রথম হয়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই ব্যাংকের ম্যানেজার পদের একটা পরীক্ষা আসে।
শান্ত এটাতে এপ্লাই করার পরে শান্ত পরীক্ষা দিয়ে এটাতেও পাশ করে।
এই খবর শুনে সবাই খুশি হয়, জুই একদিন শান্তকে ডেকে একসাথে মিট করে।
তাদের মিট হওয়ার সাথে সাথে শান্ত জুইকে দেখতে পেয়ে চোখের পানি ছেড়ে দেয়, কারন জুই আগের মতো নেই, জুই আগে যেভাবে হাসতো এখন সেভাবে হাসে না , আগে চোখে কাজল দিয়ে নীল বোরকায় নীল হিজাব পরে আসতো কিন্তু এখন চোখে আর কাজল লাগায় না, রাত জাগতে জাগতে চোখের নিচে কালো দাগ তুলে ফেলছে।
জুই শান্তকে দেখে চোখ দিয়ে ননস্টপ পানি ফেলতে থাকে।
-জুই এখন আর কান্না করতে হবে না, তোমার শান্ত ভালো একটা চাকরি পেয়ে গেছে। এই কয়দিনের মধ্যে তোমাকে আমি ঘরে তুলবোই।
-এই অপেক্ষায় এতদিন বেঁচে আছি।
-চলো(শান্ত)
-কোথায়?(জুই)
-রেস্টুরেন্টে যাবো।
-কেন?
-আগে আসো তারপর বইলো কেন।
-রেস্টুরেন্ট থেকে তো এটাই ভালো।
-ভালো সেটা জানি কিন্তু এখন আমার সাথো আসো বলে জুইকে শান্ত রেস্টুরেন্টে নিয়ে যায়।
শান্ত রেস্টুরেন্টে ডুকে কিছু অর্ডার করে, ওয়েটার খাবার দিয়ে যাওয়ার পরে শান্ত নিজ হাতে জুইয়ের মুখে বাড়িয়ে দেয়। জুই তা দেখে কান্না করে দেয়।
-আরে কান্না করো কেন? খেয়ে নাও বলছি।
-এভাবে সারাজীবন খাওয়াতে পারবা?
-ইনশাল্লাহ পারবো।
-যদি না পারো তাহলে কিন্তু আমার মরা......
-কথা শেষ না করতে'ই শান্ত হাত দিয়ে কিছু খাবার মুখে ডুকিয়ে দেয়।
-আর এসব বলবা তাহলে খবর আছে বলে দিলাম।
এভাবে তারা আরো কিছুক্ষন আড্ডা দিয়ে শান্ত জুইকে নিজের সাথে করে নিয়ে বাসায় দিয়ে আসে।
শান্ত বাসায় আসার পরে এনি শান্তকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পিঠে উঠে কানে হালকা করে কামড় মারে।
-কি করছো এসব? ছাড়ো বলছি(শান্ত)
-না ছাড়বো না।
-না ছাড়লে কিন্তু খারাপ হবে।
-ছাড়বো না, কি করবা করো বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
শান্ত তখন জোর করে নিজকে ছাড়িয়ে নেয়।
-রুমে আসো তোমার সাথে কথা আছে।(শান্ত)
-আমি কি কিছু ভুল শুনতেছি?
-না ভুল না।
-ওহহ আমি তো মনে করছিলাম কোনো স্বপ্ন বুঝি দেখতেছি।
-এসব মনে হলো কেন?
-তুমি আমাকে রুমে ডেকে নিয়ে কথা বলবা তাই,
-ওহহ, রুমে আসো বলে শান্ত রুমে চলে যায়।
কতক্ষণ পরে এনি রুমে আসে।
-কি বলবা বলো(এনি)
-এখন কিছু কথা বলবো।
-কি বলবা বলো।
-প্রশ্নগুলো একটু কঠিন হতে পারে।
-আরে আগে করো তো?
-তুমি আমাকে কি দেখে লাভ করছো?
-এখন এসব জানার কি আছে?
-যা বলছি তা বলো,
-তোমাকে দেখে তোমার প্রেমে পরছি,
-প্রেমে পরার কারনটা কি?
-এনি তখন চুপ হয়ে যায়।
-আমি তোমার কারণটা বলে দেয়, তুমি আমাকে নিজের মন থেকে কখনো ভালোবাসনি, ভালোবাসছো শুধু মাত্র জুই এর উপর প্রতিশোধ নিতে। ঠিক কি না?
-এনি তখন চুপ হয়ে আছে।
-যা বলছি তার উত্তর দাও।
-এখন তো তোমাকে সত্যি ভালোবাসি।
-এটা সত্যিকারের ভালোবাসা না।
-তো কি?
-তুমি ফেইক লাভার।
-কিভাবে?
-কারণ তুমি একজনের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে ভালোবাসছো।
-এসব বাদ দাও না।
-কেন বাদ দিবো? আচ্ছা জুইয়ের কি তোমাদের থেকে কোনো কিছু কম আছে?
-না।
-তাহলে তুমি তার সাথে এমনটা করলে কেন? তুমি কি ইদানিং জুইকে দেখছো?
-না।
-তা দেখবা কেন? জুই তোমার কি হয়? শত্রু
তাই না?
-চুপ হয়ে আছে।
-চুপ হয়ে আছো কেন?
জুই তো তোমাকে প্রথম ই বলেছিলো যে আমাকে পছন্দ করো কি না তখন তো জুইয়ের সাথে বলছিলা কাজের ছেলেকে আমি পছন্দ করবো? বলে অনেক হাসি তামাসা করেছো আর তাইও সে আমাকে ভালোবাসছে। আর তাই তুমি জুইয়ের উপর প্রতিশোধ নিতে গেছো।
আচ্ছা শুনো, জুই কি তোমাকে কখনো উপকার করে নি?
-হ্যা করেছে
-উপকার কতবার করেছে?
-অনেকবার
-আর তোমার অনিচ্ছয় কাজ করেছে কয়টা?
-একটা
-হুম সেটা হলো ও তোমার কথায় অবাদ্য হয়ে আমাকে ভালোবাসছিলো, রাইট?
-হুমম,
-জুই তোমাকে অনেকগুলো উপকার করেছে আর তোমার কথার অমান্য করছে একবার। তুমি একবার অন্যায় করার জন্য প্রতিশোধ নিয়ে নিচ্ছো আর এতদিনের উপকারের কি প্রতিদান দিছো?
-এনি এসব কথা শুনে শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকায়।
-জুইকে এখন দেখলেও চিনতে পারবে না বলে শান্ত এনির সামনে কান্না করে দেয়।
শান্তর মোবাইলে তখন একটা ফোন আসে।
মোবাইল বের করে দেখে জুইয়ের নাম্বার থেকে ফোন আসছে।
.
শান্ত ফোন রিসিভ করার সাথে সাথে অপরপাশ থেকে কেউ একজন বলে ভাইয়া তারাতারি সদর হসপিটালে আসো বলে ফোন কেটে দেয়।
শান্ত তখন বুঝতে পেরে পাগলের মতো হয়ে যায় তখন শান্ত এনিকে বলে আমার জুই তোর কি ক্ষতি করছিলোরে? আমাদের কেন একসাথে থাকতে দিলি না? যদি আমার জুইয়ের কিছু হয় তাহলে আমি তোকে মেরে ফেলবো বলে দিলাম বলে শান্ত হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
এনির তখন নিজেকে নিজের কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে। আসলেই তো জুই আমার কোন ক্ষতি করে নাই তাহলে আমি কেন তার সাথে এমনটা করলাম?
ও আমার সাথে ক্লাস ওয়ান থেকে পড়ালেখা করে আসছে আর দু'জনের সবকিছু দু'জনের সাথে শেয়ার করেছি আর এই কয়দিনে আমি এতো পরিবর্তন হলাম কিভাবে?
কিসের জন্য এমন হলাম?
এসব ভাবতে ভাবতে এনিও হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়।
শান্ত হসপিটালে গিয়ে রুমে ডুকে দেখে জুইয়ের নাকে মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে লম্বা করে শুইয়ে রাখছে আর জুই বড় বড় নিশ্বাস নিচ্ছে। আর জুইয়ের চারপাশে জুইকে ওদের পরিবারের সবাই ঘিরে রাখেছে।
শান্ত এসব দেখে অস্ফুট শব্দে চোখের পানি ফেলে দেয়। হ্যা আল্লাহ্ তুমি আমার সারাটা জীবন'ই কষ্টে রেখে আসছো, আল্লাহ্ আমার এই সুখ পাখি টাকে কেড়ে নিও না।
আমি ওরে ছাড়া বাঁচতে পারবো না বলে একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়। তখন এনি পাশ দিয়ে এসে এনিও কান্না করে দেয়।
কান্নার চেনা কন্ঠের শব্দটা শুনে জুই চোখ খুলে।
জুই চোখ খুলে শান্তর দিকে ভাসা ভাসা চোখে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।
শান্ত এসব দেখে যেন পাগলের মতো হয়ে যাচ্চে।
বাবা তোমরা সবাই একটু বাহিরে যাও প্লিজ
তখন সবাই বাহিরে যায়, রুমে এনি আর শান্ত থেকে যায়...
-এই বাবুনি তোমার কি হয়েছে? (শান্ত)
-শান্ত আমার কিছু'ই হয় নাই বলে একটু মুচকি হাসি দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টায়
-বলো কি হয়েছে?
-কিছু না।
-জুই আমাকে মাফ করে দিস(এনি)
-আরে এসব কি বলছিস(জুই)
- আমি যার সাথে চলতে চলতে এত বড় হয়েছি আর তার সাথে কিভাবে এটা করতে পারলাম?
জুই আমি প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে গেছিলাম। প্লিজ আমাকে মাফ করে দে। আমি আমার বাবার কাছে বলে তোদের বিয়ের ব্যবস্থা করবো বলে এনি জুইয়ের হাত ধরে কান্না করে দেয়।
-আরে এসব কি করছিস?
-বল আমাকে ক্ষমা করছিস?
- না ক্ষমা করবো একটা শর্তে,
-বল কি শর্ত?
-শান্তকে নিয়ে সারাজীবন সংসার করবি আর ওর কাছে সবসময় মাথা নত করে রাখবি। আমাদের মা ফাতেমা যেমন তার স্বামীর কথা মেনে চলছে তুইও এভাবে চলবি আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পরিস।
-এই তুই কি পাগল হয়ে গেছিস?
-এসব কি বলছিস? (এনি)
-জুই এই শান্তর সবটুকু ঘিরে শুধু জুই আর জুই আর কিছুই না।
-আমাকে ভালোবাসো না?
-জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।
-তাহলে আমি যদি একটা আবদার করি রাখবেনা?
-রাখবো বলো।
-আমাকে যেভাবে ভালোবাসছো এনিরে আমি মনে করে ওকেও তেমন ভাবে ভালোবাসবা।
-জুই একটা মানুষের কাছে এমন কিছু চাইতে নেই যেটা ও দিতে গিয়ে পথের ফকির হয়ে যায়। আর শুনো আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না।
-শান্ত আমি মনে হয় আর বেশিক্ষণ বাঁচতে পারবো না, প্লিজ আমাকে তোমার বুকে নিবে?
-এই এসব কি বলছো? তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারো না। তুমি চলে গেলে আমি বাঁচতে পারবো না। তুমি আমার থেকে দূরে চলে গেলে আমাকে কে শাসন করবে?
-যদি আমাকে একবিন্দু হলেও ভালোবেসে থাকো তাহলে এনিকে ভালোবেসে স্ত্রীর সঠিক মর্যাদা দিবা আর ভালো না বাসলে দরকার নেই বলে জুই চোখের পানি ছেড়ে দেয়।
এসব শুনে শান্ত আর এনি দুজনেই কান্না করে দেয়।
-এনি এখানে এসে বস।
বসার পরে। তোরে আমি সারাজীবন বোনের মতো দেখে আসছি। শান্ত আমার কলিজা।
শান্তরে তুই অনেক ভালোবাসবি আর অনেক কেয়ার করবি, ওর বাবা-মা অনেক আগে হারিয়েছে, ওর জীবনে অনেক দুঃখ, ওর দুঃখ গুলো তুই সুখে পরিণত করিস বলে শান্তর হাত টা শক্ত করে ধরে শান্তর চোখের দিকে চেয়ে আমাকে শেষ বারের মতো বুকে নিবানা?
-শান্ত কান্না করতে করতে জুইকে বুকে জড়িয়ে নেয়।
-শান্ত আমি যা বলছি সবকিছু কইরো।
-জুই তোমার কিছু হবে না।
-তোমার ঠোটের স্পর্শ টুকু দিবানা?
-শান্ত তখন জুইয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে বুকে নেওয়ার পরে শান্ত অনুভব করে জুইয়ের শরীরটা নিমিষেই ঠান্ডা হয়ে যায়।
শান্ত তখন বুকে থেকে নামিয়ে দেখে জুই আর নেই শান্ত তখন হাউমাউ করে চিল্লানী দিয়ে কান্না করে দেয়।
এনি এসব দেখে এনিও নির্বাক হয়ে যায়।
শান্তর চিল্লানির আওয়াজ পেয়ে ওর পরিবারের সবাই এসে দেখে সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পরে।
এর কয়েকদিন পরে
শান্ত নামাজে দাড়ায়, নামাজ শেষে সালাম ফিরিয়ে দেখে এনিও তার পিছনে থ্রি পিছের সাথে হিজাব পরে নামাজ পড়তেছে।
শান্ত তখন মোনাজাত করে ছাদের এক কোনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকে।
এনিও শান্তর পিছনে পিছনে গিয়ে দেখে শান্ত দাড়িয়ে আছে।
এনি তখন শান্তকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে...
-আমাকে মাফ করে দাও বলে এনিও কান্না করে দেয়।
-শান্ত চুপ করে আছে।
-এনি তখন শান্তর দু'হাত দিয়ে পায়ে জড়িয়ে ধরে ফেলে, শান্ত এনিকে উঠিয়ে নেয়।
-শান্ত আমাকে মাফ করে দাও, শান্ত আমি জানি তুমি এখনো জুইকে ভুলতে পারো নি।
আমি কখনো বলবো না জুইকে ভুলে যেতে।
শান্ত তুমি জুইকে যেভাবে ভালোবাসতে আমাকে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ বাসলেও চলবে।
আমি কখনো তোমার উপর কথা বলবো না, আমি এখন থেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বো আর প্রতিদিন কোরআন পাঠ করবো বলে এনি একটু শব্দ করে কান্না করে দেয়।
শান্ত তখন এনিকে বুকে টেনে নেয়।আর এনি তার সব শক্তি দিয়ে শান্তকে জড়িয়ে ধরে।
শান্ত তখন এনির মাথা টা বুক থেকে উঠিয়ে ঘুমটা টা টেনে কপালে চুমু খেয়ে আবার বুকে টেনে নেয়।
শান্তর কাছে মনে হচ্ছে এটা এনি না এটা হচ্ছে তার জুই।
.
---------#সমাপ্ত----------
অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৮ (শেষ পর্ব)।
Reviewed by গল্প প্রেমিক
on
4:06 PM
Rating:

No comments