তবুও পর্ব-০৪

তবুও
###__তবুও__###
- পর্ব- ৪
চৌরঙ্গী মোড়। মফস্বলের ব্যস্ততম জায়গা। এই জায়গাটায় জেরিন সাব্বিরকে দেখেছিল। দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সেরকম একটা মুহূর্তের। কিন্তু সাব্বিরকে আর দেখল না সে। আগেও একদিন এসে ফিরে যেতে হয়েছিল। সম্ভবত কলেজ খোলার আগে আর তার দেখা পাওয়া যাবে না।
আগে জেরিনকে দেখলে একটু অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ত সাব্বির কিন্তু কলেজ খোলার পর থেকে তার সেই অস্বস্তিকর অবস্থা দূর হয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে জেরিনের সাথে কথা বলছে। সাব্বিরের এমন আমূল পরিবর্তনে জেরিনসহ তার বান্ধবীরা বেশ বিস্মিত। প্রথম ক্লাসের পর একটা পিরিয়ড গ্যাপ আছে। দোতলায় বারান্দায় জানালার পাশে একা একা দাঁড়িয়ে আছে সাব্বির। সিঁড়িতে কারও পায়ের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সাব্বির অনুমান করার চেষ্টা করছে যে কে হতে পারে? স্যান্ডেলের হিলের খটখট শব্দ, তার মানে কোন মেয়ে। শব্দটা আসছে খুব দ্রুত, তার মানে যে আসছে সে চিকন। আর কিছু ভাবার আগেই কেউ চলে এলো। ওটা তনু। সাব্বিরকে দেখে না দেখার ভান করে তার পাশের জানালায় সে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উল্টো দিকে মুখ করে। সাব্বির তনুর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। প্রত্যেক মেয়ের আশ্চর্যজনক ক্ষমতা আছে। কেউ তার দিকে তাকিয়ে থাকলে তা বুঝতে পারে। তনু ঘাড় ঘুরিয়ে সাব্বিরের দিকে তাকাতেই সাব্বির লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরালো। তনুই কথা শুরু করল, ছুটি কেমন কাটল?
-হুম, ভাল। তোমার?
-ভাল না।
-ও।
-আচ্ছা, তোমার কি কোন কৌতূহল নেই? আমি বললাম যে ভাল না, তোমার তো জিজ্ঞেস করা উচিৎ ছিল।
-তার আগ্রহ বোধ করছি না।
-তুমি কি জানো তুমি খুব বিরক্তিকর একটা প্রাণী?
-জানতাম না, তবে জানলাম।
-তোমার মত বিরক্তিকর প্রাণীর প্রেমে জেরিন যে কিভাবে পড়ল তা বুঝতে পারছি না।
-তোমার মাথায় একটু আগে একটা গান ছিল। 'মুঝে তুমছে মোহাব্বত হে, দিওয়ানা কি হাকিকত'
তনু অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সাব্বিরের দিকে। সিঁড়ি দিয়ে কেউ দৌঁড়ে আসছে। এটা যে জেরিন তা বুঝতে পারল সাব্বির। সাব্বির জানালার পাশ থেকে সরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। কারণ নামতে গেলে জেরিনের সাথে ধাক্কা লাগতে পারে। বাংলা সিনেমায় এরকম দৃশ্যগুলো প্রেমের শুরু করে, বাস্তবে তা মুখে স্যান্ডেলের বাড়ি। যদিও জেরিন সেরকম কিছু করবে না। জেরিন উপরে উঠতেই সাব্বির পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই তনু বলল, সাব্বির, তোমার সাথে কিছু কথা আছে?
ঘুরে দাঁড়ালো সে। এখান থেকে মাঠ দেখা যাচ্ছে। মাঠের দিকে তাকিয়ে সাব্বির বলল, বল, কী বলবে?
-তুমি কিভাবে জানলে যে আমার মাথায় ওই গানটা বাজছিল?
সাব্বির কিছু বলার আগেই জেরিন বলল, কী গান?
-আরে, আমি তখন মনেমনে একটা গান গাচ্ছিলাম, সাব্বির সেই গানের কথা বলে দিল।
জেরিন বিস্ময় প্রকাশ করে বলল, তাই!
-হ্যাঁ।
-সত্যিই তুমি বলেছ সাব্বির?
জেরিনের কণ্ঠে কেমন যেন দরদ উথলে উঠছে। স্মিত হেসে সাব্বির বলল, হ্যাঁ।
-আচ্ছা, আমি মনেমনে একটা গান গাইছি, তুমি বলে দাও তো কী গান গাইছি?
-জানি না। তনু, তোমার কথা শেষ?
-তোমার সাথে একটু গল্প করলে সমস্যা?
-আমি খুবই বিরক্তিকর। গল্প করে আরাম পাবে না। তারচেয়ে তোমরা দুজন এডাল্ট জোক্স বল, সেটাই ভাল।
সাব্বির চলে গেল। হা করে জেরিন এবং তনু ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
জেরিন বলল, ও কী বলে গেল রে?
-আরে, বেশ কয়েকটা এডাল্ট জোক্স মনে পড়ছিল, ভাবলাম তোকে বলব। আর ওই হারামি ওটা কিভাবে বুঝে ফেলল? জেরিন, তুই এই ছেলেকে ভুলে যা, নইলে বিপদে পড়বি। ওর ঘাড়ে জ্বিন আছে।
-হাহাহা, থাকতেও পারে।
-ওরা কোথায়?
-রুমকির হঠাৎ শুরু হয়ে গেছে, ও বাসায় গেছে। মলি, সুমি বাথরুমের দিকে গেল। দুইটাই ডায়াবেটিস রোগী। দিনের মধ্যে চৌদ্দবার.. ইয়াক।
-হাহাহা। এই রুমকি না আসলেই একটা গাধী। ওর প্রায়ই ক্লাসে থাকতেই শুরু হয়।
-যাক, বাবা। বন্ধের মধ্যেই আমার হয়ে গেছে।
সিঁড়িতে শব্দ পেয়ে তনু বলল, চুপ কর। কেউ আসছে।
বায়োলজি ক্লাসে স্যার আজকে পড়ানো বাদে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তা হল কলেজের পিকনিক। এবার বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আলাদাভাবে পিকনিকে যাওয়া হবে। সে বিষয় ছাত্রছাত্রীদের সাথে আলোচনা করা দরকার।
সবার মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছে। স্যার সবাইকে শান্ত করে বলতে লাগলেন, গতবছর তিন বিভাগ থেকেই একসাথে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার আমরা শুধু বিজ্ঞান বিভাগের ফার্স্ট ইয়ার এবং সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট নিয়ে যাব।
কয়েকটা ছেলেমেয়ের মুখটা সামান্য কালো হয়ে গেল। কারণ তাদের প্রেমিক বা প্রেমিকা অন্য গ্রুপে।
বাপ্পি বলল, স্যার, অন্য গ্রুপের ছেলেমেয়েদের নিলে সমস্যা কী?
-অন্য গ্রুপের ছেলেমেয়েরা না গেলে তোমার সমস্যা কী?
স্যারের কথা মেয়েদের মধ্যে থেকে হাসির ফোয়ারা বইছে। পিছন থেকে কোন মেয়ে বলল, স্যার বাপ্পির গার্লফ্রেন্ড অন্য গ্রুপে তো তাই।
হাসি থামার পর স্যার বললেন, এবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে আমরা কুষ্টিয়া রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতে যাবো।
-স্যার, লালনের আখড়ায় যাবেন না?
-যদি সময় পাওয়া যায় তাহলে যেতে পারে। আমরা দিনের মধ্যে ওখান থেকে রওনা দিব। আর এখান থেকে আমরা সাতটায় যাত্রা শুরু করব। তো, কে কে যেতে চাও?
ছাত্রছাত্রী সবাই হাত তুলল। স্যারের আড়ালে থাকার চেষ্টা করছে সাব্বির। কারণ সে হাত তোলেনি এটা স্যার দেখলে না যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করতে পারে। এবং এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে আর ভাল লাগে না তার। স্যার বললেন, পাঁচশো টাকা করে চাঁদা নেওয়া হবে। যদি কম পড়ে তাহলে কলেজ ফান্ড থেকে পাওয়া যাবে।
টাকাপয়সা কালেক্ট করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মাসুমকে। এক সপ্তাহ পর বিশেষ দিনটা আসছে। আগামীকাল সকাল সাতটায় কলেজ থেকে দুইটা বাস এবং একটা মাইক্রো যাত্রা শুরু করবে। জেরিনও যাচ্ছে। তার কিছু কেনাকাটাও করা হয়ে গেছে। মাসুমের সাথে তার কিছু কথা বলা দরকার কিন্তু সে ফুরসতই পাওয়া যাচ্ছে না।
-মাসুম, দুই মিনিট কথা বলব। শোন তো।
-কী? তাড়াতাড়ি বল।
-আমাদের ব্যাচের সবাই যাচ্ছে?
-না। মেয়েদের মধ্যে সাতজন আর ছেলেদের মধ্য থেকে দুইজন যাচ্ছে না।
-ছেলেরা কে কে যাচ্ছে না?
-মৃদুল আর সাব্বির। মৃদুল এক্সিডেন্ট করেছে আর সাব্বির এমনিতেই যাচ্ছে না।
-এমনিতে না, ওর টাকা নেই বলে যাচ্ছে না।
-তুই জানিস তাহলে? ও আমাকে কাউকে বলতে নিষেধ করেছে।
-একটা কাজ করবি?
-কী?
-আমি ওর টাকা দিচ্ছি। তুই ওকে বলবি যে স্যাররা ওর কাছ থেকে টাকা নিবে না।
-বললে বিশ্বাস করবে?
-করার কথা। ও প্রাইভেট পড়ে, স্যাররা টাকা নেয় না ওর কাছ থেকে।
-তা তো জানি।
-হুম, টাকাটা নে। আর হ্যাঁ, ব্যাপারটা সিক্রেট রাখিস।
-ওকে।
সাব্বিরকে পুকুরপাড়ে পাওয়া গেল।
-তুই এখানে? আর আমি তোকে সারা কলেজ খুঁজে বেড়াচ্ছি।
-কী হয়েছে মাসুম?
-কেমিস্ট্রি স্যারকে তোর কথা বললাম। তোকে এমনিতেই চাঁদা ছাড়া নিতে চেয়েছে।
-সত্যি?
-হ্যাঁ। কাল ব্যাগপত্র নিয়ে ভোর সাতটার আগে চলে আসিস।
-আচ্ছা।
মাসুম চলে গেল। সাব্বির তাকিয়ে আছে পুকুরের দিকে। একটা মাছরাঙা অনেকক্ষণ ধরে বসে আছে শিকারের জন্য। হঠাৎ করে একটা ছোট ধরে ফেলল। একই সাথে মন খারাপ এবং মন ভাল কাজ করছে সাব্বিরের। মন খারাপ হল শিকারকৃত পুঁটিমাছটার জন্য আর ভাল লাগছে মাছরাঙাটার জন্য।
"স্যার, একটু কথা বলব?" সাব্বির বলল কেমিস্ট্রি স্যারকে। একাডেমিক ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ল স্যার।
-হ্যাঁ, সাব্বির। বল। তুমি যাচ্ছ না পিকনিকে?
স্যারের প্রশ্নটা শুনে সাব্বির একটা ব্যাপার বুঝে গেল। আর তা হল, মাসুম মিথ্যা বলেছে। কিন্তু সে এই মিথ্যার আশ্রয়টা কেন নিল?
-না, স্যার। আমি যাচ্ছি না।
-ও, কিছু বলবে?
-স্যার, আমার সেকেন্ড ইয়ারের বই নেই। আপনার কাছে পুরনো বই থাকলে...
-এতদিন বলনি কেন? কাল তো পিকনিকে যাচ্ছি। তারপরদিনও বন্ধ। কলেজ খুললে আমার কাছ থেকে মনে করে বই নিয়ে নিও।
-থ্যাংক ইউ স্যার।
-ঠিক আছে, যাও।
আজ আর ক্লাস হবে না। অযথা কলেজে ঘুরাঘুরি করে সময় কাটানোর মানে হয় না। মনটা কেমনযেন বিষাদময় হয়ে গেল তার। সাইকেল নিয়ে বেরনোর সময় জেরিনের মুখোমুখি। হাসিমুখে জেরিন জিজ্ঞাসা করল, তুমি যাচ্ছ না?
কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় না। সাব্বির একটা নীরব হাসি দিয়ে সাইকেল টেনে চলে গেল। হাইওয়েতে প্রখর রোদ। রোদের মধ্যে দরদর করে ঘেমে সাইকেল চালাচ্ছে সাব্বির। এক ঘণ্টার পথ চল্লিশ মিনিটে শেষ করে বাড়ি পৌঁছে গেল সে। জামাটা খুলে ফেলে দিয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ল। আজ আর পড়াতে যেতে ইচ্ছে করছে না। ঘুমিয়ে পড়ল সাব্বির। ঘুমিয়ে সে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখল। এত সুন্দর স্বপ্ন সে কখনো দেখেছে বলে মনে পড়ে না।
সমুদ্রের তীরে হাঁটু পানিতে হাঁটছে সাব্বির। ঢেউ এসে পা ভিজিয়ে দিচ্ছে। একটু দূরেই খোলা চুলে হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে আছে কোন এক মেয়ে। সাব্বিরের দিকে তাকিয়ে হাসছে। শুধু হাসির শব্দ শোনা যাচ্ছে তার, মুখ দেখা যাচ্ছে না। বাতাসে মেয়েটার চুলগুলো উড়ে মুখটা ঢেকে রেখেছে। মেয়েটা যতই দূরে সরে যাচ্ছে, হাসির শব্দ ততই কাছে আসছে। হাসির শব্দেই ঘুম ভেঙে গেল সাব্বিরের। পাশের বাড়ির ছোট ছেলেমেয়েরা সাব্বিরের ঘরের পাশে যে মাঠ সেখানে খেলাধুলা করছে। আনমনে বসে রইল সে। স্বপ্নটা ভেঙে যাওয়ায় কিছুটা মন খারাপ তার। এমন মধুর স্বপ্ন দেখেও ভাল লাগে।
সকাল সাতটায় সবাই উপস্থিত হয়েছে। কিছুক্ষণ পরেই যাত্রা শুরু হবে। কেমিস্ট্রি স্যার মাসুমকে জিজ্ঞেস করলেন, সবাই এসেছে?
-জ্বি স্যার। শুধু সাব্বির আসেনি।
-ও যাবে না? চাঁদা দেয়নি?
মাসুম কী বলবে ভেবে পাচ্ছে না। একটু সময় নিয়ে পরক্ষণেই বলল, স্যার দিয়েছে তো।
-ওর জন্য সবাই কতক্ষণ দেরী করবে?
মাসুম কিছু বলল না। স্যারের সামনে থেকে সরা মাত্র জেরিনের মুখোমুখি পড়ল সে।
-সাব্বির আসেনি, তাই না?
-হুম।
-ও কি ব্যাপারটা জানে?
-না, আমি তো স্যারের কথা বলেছিলাম।
-ও কোনভাবে বুঝে ফেলেছে।
-হয়তো। কিন্তু আমি বলিনি।
-আচ্ছা। আমি ফিরে যাচ্ছি, যাব না আমি।
-জেরিন, শোন।
-বল, এটা ঠিক হবে না। সবাই উল্টাপাল্টা কিছু ভাবতে পারে।
-ভাবুক।
জেরিন স্যারের কাছে গিয়ে কিছু বলল। তারপর একটা ভ্যান নিয়ে ফিরে গেল বাসায়। একটা নীরব কষ্টে দিনটা কাটবে জেরিনের বদ্ধ ঘরের মধ্যে। বালিশটা আজ স্নান করবে জেরিনের অশ্রুজলে। এই ব্যথার ভাষা কি সাব্বির বোঝে না।
বাপ্পি, মাসুমসহ আরও কয়েকজন ছেলে পুকুরপাড়ে বসে আছে। ওদেরকে দেখে সাব্বির এগিয়ে এসে বলল, কীরে? সবাই মৌনব্রত পালন করছিস নাকি?
কেউ কোন কথা বলল না। এরকম নির্বাক চলচ্চিত্রের মাঝে একমাত্র সবাক সাব্বির। বুঝতে পারছে না ঘটনা কী।
-কীরে ভাই? কী হয়েছে বলবি তো।
-তোর জন্য আমাদের পিকনিকের আনন্দটা মাটি হয়ে গেল।
-আমি কী করলাম?
-তুই আসিস নাই কেন? কলেজ ফান্ড থেকে তোর চাঁদার টাকা দেওয়া হয়েছে। আমরা স্যারকে তোর কথা বলেছিলাম। এটাও বলেছিলাম যে আমরা সবাই মিলে তোর টাকা দিয়ে দিব। তারপরেও আসলি না কেন?
-আমার জন্য তোদের আনন্দে ব্যাঘাত ঘটনার কারণটা বুঝলাম না।
-তুই আসিস নাই, জেরিন এসে ফিরে গেছে। স্যারকে কী বলেছিল কে জানে। স্যার পরে এটা নিয়ে খুব রাগারাগি করল। ওখানে গেলাম মন খারাপ করে ঘুরাঘুরিও ঠিকমতো করতে পারলাম না। খাওয়াদাওয়া করে ফিরে এলাম।
-দশটা টাকা দে।
-ক্যান?
-সকালে কিছু খাই নাই। খিদে লাগছে।
বাপ্পির কাছ থেকে টাকা নিয়ে একা একা চলে গেল সাব্বির। রাস্তার পাশের চায়ের দোকান থেকে একটা কলা, একটা পাউরুটি আর এক গ্লাস পানি খেয়ে নিল। বিল হয়েছে ছয় টাকা। বাকি চারটা সযত্নে পকেটে রেখে দিল সে। দোকান থেকে বেরনোর সাথেসাথে জেরিনের সাথে দেখা। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, জেরিন সাব্বিরের সাথে কোন কথা বলল না। জেরিনের কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগে আর তারচেয়ে বেশি খারাপ লাগে কথা না বলে চলে যাওয়া। নিজের এমন খারাপ লাগায় সাব্বির খুবই অবাক হল।
দুইটা মাস সাব্বিরের অন্যরকম ভালভাবে গেল কিন্তু সেই ভালভাবে যাওয়ার মধ্যেও সুক্ষ্ম একটা কষ্টের প্রবাহ ছিল তার বুকে। জেরিন তিনমাস তার সাথে কথা বলেনি। ক্লাসও ঠিকমতো করত না। সাব্বির যে ব্যাচে পড়ত, জেরিন স্যারকে বলে অন্য ব্যাচে পড়ল। তাদের মধ্যে দেখাও হত কম। এদিকে সাব্বিরের ব্যস্ততাও বেড়ে গেল। আরও একটা টিউশনি বেশি নিয়েছে। এর মাঝখান থেকে সে ভুলেই গেছিল যে এক মাস পর তার টেস্ট পরীক্ষা। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে পাগলের মত হয়ে গেল সে। অনেক পড়াই শেষ করতে পারেনি সে। বারোটা সাবজেক্টের প্রেশারে প্রায় পাগল হয়ে গেল সাব্বির।
পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। কমবেশ সবাই খুব ভাল করেছে। সাব্বির নিজের রেজাল্ট দেখার সাহস পাচ্ছে না। প্রথম গ্রুপে নিজের নাম না দেখে সাব্বিরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ছাদে গিয়ে দেয়ালে রেলিংয়ে হেলান দিয়ে বসে রইল সাব্বির। এতটা খারাপ তার কখনো লাগেনি। জীবনে প্রথমবার ব্যর্থ হল সে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার। কিন্তু কান্নাও আজ তার প্রতিকূলে। মন ভরে কাঁদতে পারছে না সাব্বির।
'বসো' টুলটা দেখিয়ে স্যার সাব্বিরকে বললেন।
সাব্বির জড়সড় হয়ে বসে রইল। তার পা কাঁপছে। খুব ভয় লাগছে তার।
-তোমাকে পরীক্ষায় এলাউ করা হচ্ছে না। কোন ফেইল করা স্টুডেন্টকে এবার এলাউ করা হবে না।
-স্যার, কিভাবে কী হয়ে গেল আমি বুঝতে পারিনি। টিউশনির চাপে নিজের পড়ালেখা করতে পারিনি।
-সেই দায়ভার আমাদের বা কলেজের না। তোমাকে লজিং থাকতে বলেছিলাম, তোমার আত্মসম্মানে লাগে।
-স্যার, কোন সাবজেক্টে ফেল করেছি।
-আমার সাবজেক্টে, কেমিস্ট্রি সেকেন্ড পেপারে।
-স্যার, আমি কথা দিচ্ছি, আমি আপনার সাবজেক্টে সবচেয়ে ভাল করব।
-ঠিক আছে, ভাল কর। সামনের বছর পরীক্ষা দিও।
সাব্বিরের বুক ফেটে কান্না আসছে। আর কোন কথা বলতে পারল না। স্যার তাকে চে যেতে বললেন। টুল থেকে নেমে ঠিকমতো পা ফেলতেও পারছে না সাব্বির। কোনমতে দরজা পর্যন্ত আসার পর স্যার পিছন দিক থেকে তাকে ডেকে বললেন, শোন সাব্বির। দুই পেপার মিলে তোমার পাশ হয়েছে। প্রিন্সিপালকে বলে বিশেষ অনুরোধে এলাউ করা হবে। যাও, ভাল করে পড়।
চলবে......
তবুও পর্ব-০৪ তবুও পর্ব-০৪ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 3:40 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প