এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১১

গল্পঃ #এক_টুকরো_চোখের_জল
(পর্ব ১১)
রিফাত আর আনিছের স্কুল জীবন
-এই রিফাত। আমার একটা কাজ করে দিবি?
-হ্যাঁ চেষ্টা করবো।
-না করবিনা তো।
-আমার শাদ্ধের মধ্যে হলে নিচ্চয় চেষ্টা করবো।
-তাহলে এই কাগজের টুকরোটা তানিয়াকে দিয়ে আসবি প্লিজ।
-সরি রে পারবো'না।
-কেন পারবি'না?
-তুই তো যানিস। আমি কোনো ছেলের সঙ্গেই কথা বলি'না। আর তুই বলছিস একটা মেয়েকে কাগজের টুকরো দিয়ে আসতে। এটা কোনোভাবেই সম্ভব'না।
-আরে ধুর, আমার জন্য এইটুকু করতে পারবি'না। (আনিছ)
-সরি পারবো না। তুই একমাত্র আমার বন্ধু। তুই যদি এমন করিস তাহলে থাক। তোর সঙ্গে বন্ধুত্ব এখানেই শেষ আমার।
-এই কি বলছি এইসব। বন্ধুত্ব শেষ হতে যাবে কেন? দরকার নেই থাক। কোনো মেয়েকে কাগজের টুকরো'টা দেওয়ার।
-মন খারাপ করলি আনিছ।
-আরে না।
-আচ্ছা আনিছ আগে বল। কাগজের মধ্যে কি আছে।
-তোকে বলতে পারবো'না।
-কেন বলতে পারবি'না।
-এমনি
-আচ্ছা ঠিক আছে। ওই যে পর্শের সিটে একটা মেয়ে বসে আছে। ওই মেয়েটা কি তানিয়া।
-আরে তুই তানিয়াকে চিনিস'না। আসলে তুই একটা গাধা।
-না'রে। ক্লাসের সবাইকে চিনি। তবে ছেলেদের নামগুলো শুধু যানি। মেয়েদের নামগুলো একটু কম যানি।
-ওহ আচ্ছা।
-আচ্ছা আনিছ চিরকুটটা দে, দিয়ে আসি।
-পারবি তো। (মুচকি হাঁসি দেয় আনিছ)
রিফাত চিরকুটটা নিয়ে তানিয়ার কাছে যায়। তানিয়াকে চিরকুটটা দিয়ে রিফাত চুপটি করে দাঁড়িয়ে থাকে। এদিকে তানিয়া রেগে আগুন হয়ে যায়।
-হারামজাদা কি লেখেছিস এগুলা।
-,,,,,,,(মানে কি ধির কন্ঠে)
রিফাত মেয়েদের ভয়ংকর রুপ দেখেছিলো সেদিন। সব মেয়েরা রিফাতের মুখে গোবর মেখে দিয়েছিলো। সেদিন থেকে মেয়েদের প্রতি রিফাতে ঘৃণা জন্মাতে থাকে। এদিকে পুরো ক্লাস হাঁসাহাঁসি শুরু করেছে আনিছসহ।
তানিয়া রিফাতের হাতে চিরকুটটা দিয়ে বলে। নিজের চেহেরাটা আগে আয়নায় ভালো করে দেখিস। তারপর কাউকে প্রপোজ করবি ওকে।
রিফাত মাথা'নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চিরকুটটা খুলে দেখে রিফাত। লেখা ছিলো।
আই লাভ ইউ তানিয়া ইতি তোমার রিফাত। রিফাত চিরকুটটা খুলে একটু অবাক হলেও মুচকি হেঁসে উঠে। রিফাত বুঝে যায়। এইসব সকলের প্লান ছিলো আমাকে এভাবে অপমান করবে বলে। ক্লাসের সকলে রিফাতকে নিয়ে হাঁসিহাঁসি শুরু করছে। রিফাত বাইরে থেকে মুখচোখ পানি'দিয়ে ধুয়ে আসে।
রিফাত নিজের ব্যাগটা নিয়ে হাঁটা শুরু করে। পিছন থেকে আনিছ রিফাতকে ডাক দিতে শুরু করে।
-এই রিফাত কোথায় যাচ্ছিস। আমরা তো মজা করলাম শুধু।
বলে সকলে হা হা করে হেঁসে উঠে। রিফাত আনিছের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলে উঠে।
-ভাই তোর এইসব খুব মজা লাগতে পারে। তবে আমার'না। তোকে একমাত্র আপন বন্ধু ভেবেছিলাম। আর তুই আমাকে এমন করে অপমান করলি। ভাবিনি কখনো এমন করে অপমান করবি। সরি রে ভালো থাকিস। কালকেই টিসি নিয়ে শহরে চলে যাচ্ছি ভালো থাকিস।
আনিছ পিছন থেকে ডাকতে শুরু করে। তবে কোনো কথা বলে'না রিফাত। পরেরদিন আনিছ ভোবেছিলো, রিফাত সব রাগ ফেলে আবার স্কুলে আসবে। তবে আসেনি আজ। আনিছ জানতে পারে। রিফাত টিসি নিয়ে চলে গিছে ঢাকা।
.
.
তারপর আনিছ রিফাতকে অনেক খুঁজতে শুরু করে। তবে কোথাও পায়না রিফাতকে আনিছ, একটি'বার ক্ষমা চাওয়ার জন্য। একটু মজা করার জন্য এমন হবে বুঝতে পারেনি আনিছ। রিফাত যেগুলাকে গোবড় ভাবছিলো। সেগুলা ছিলো রং সকলে প্লান করেছিলো। এইসব করার জন্য এমনটা হবে ভাবেনি কেউ। রিফাত কারো সঙ্গে কথা বলতো'না। সকলে চেষ্টা করতো রিফাতের সঙ্গে কথা'বলার জন্য। তবে কখনো পেরে উঠেনি কেউ, আনিছ ছারা।
১বছর ৩মাস আগে ঢাকা আসে আনিছ পরিবারকে নিয়ে। এখানে আনিছ চাকরি পেয়েছে। তারপরে আনিছ আর হাওয়ার দেখা হয়। আস্তে আস্তে কথা বলা শুরু হয় দুজনে। তারপর রিলিশনে জরীয়ে যায় দুজনে। তবে এইসবের কিছু জানতো'না রিফাত। আনিছ আর হাওয়ার সবসময় কথা হতো'না বেশিরভাগ ফোনে। আর ফেসবুকে।
.
.
.
.
আনিছ রুমের মধ্যে শুয়ে আছে। সকাল হয়ে গেছে। আম্মু এসে ঢাক দিতে শুরু করে।
-এই আনিছ। তাড়াতাড়ি উঠ। কতটা সকাল হয়ে গেছে খেয়াল আছে তোর। অফিস যাবি'না?
-হ্যাঁ আম্মু যাবো'তো।
-তাহলে তারাতাড়ি উঠে ফ্রেস হয়ে'নে। খাবার টেবিলে সকালের নাস্তা রেখে এসেছি।
-আচ্ছা আম্মু।
আনিছ ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে নেয়। আনিছ খাবার টেবিলে বসে সকালের নাস্তাগুলো খাচ্ছে। এদিকে আনিছের মা আনিছের কাছে আসে।
-এই আনিছ তারাতাড়ি বিয়ে করে'নে তো।
-ধুর আম্মু কি সব বলো'না। বিয়ে পরে করবো ক্ষণ।
-হ্যাঁ রে, তারাতাড়ি বিয়ে করে নে, তাহলে তোর বউ তোকে ডেকে ডেকে উঠাবে প্রতেদিন। আমি তো বুড়ো হয়ে যাচ্ছি। একটা বউ ঘরে আসলে আমাকে সাহায্য করতো। তাই বলছিলাম কি একটা বিয়ে করে নে।
আনিছ এবার মুচকি হেঁসে বলে উঠে।
-আম্মু বউ নিয়ে এসে কি করবো। একটা কাজের মেয়েকে নিয়ে আসলেই তো হয়। তাহলে বউয়ের তো দরকার নেই। তোমাকে রান্নাকরার কাজে সাহায্য করবে।
আনিছের আম্মু হেঁসে হেঁসে বলে উঠে।
-পাজি ছেলে একটা। এই জন্য বিয়ের কথা বলিনা আমি তোকে। তারাতাড়ি বের হয়ে নে। তোর বোনকে স্কুলে রেখে, অফিসে যাবি কেমন।
-ওই পিচ্চিটা কি একাই স্কুলে যেতে পারে'না? আমাক কেন প্রতেদিন স্কুল রেখে আসতে হবে?
-এই চুপ কর। তুই আফরার বড় ভাই এমন করে বলছিস কেন?
-আচ্ছা ঠিক আছে। আফরা রেডি হয়েছে তো?
-হ্যাঁ অনেক আগে।
আনিছ বোনকে বাইকে করে স্কুল রেখে আসে। তারপর নিজের অফিসে চলে যায়।
আনিছ অফিসের কাজে ব্যাস্ত। আনিছ ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে। কে যেন ফোন দিয়েছে।
-হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। (ওপাশ থেকে)
-হ্যাঁ কে বলতেছেন?
-আমি তোমার হাওয়া, চিনতে পারছো'না?.
-হুম চিনতে পেরেছি। তো আমাক কেন ফোন দিয়েছেন?
-সকালের খাবার খেয়েছো?
-তা,আপনার কি মনে হয় আমি না খেয়ে আছি। এই শুনুন, বলেছিনা আমাক ফোন দিবেন'না আর। ভালো থাকেন, আর শুনেন আমি অনেক ভালো আছি। আর কখনো ফোন দিবেন না দয়া করে।
-তুমি এমন করতেছো কেন?
কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে আনিছ ফোনটা কেঁটে দেয়।
আরেকটু পর কে যেনো ফোন দিয়েছে। ফোন রিসিভ করেই আনিছ গালি দিতে শুরু করে।
-এই আবার ফোন দিয়েছেন কেন?
-হ্যালো মিস্টার আমি রিফাত।
আনিছ এবার থতমত খেয়ে যায়।
-জ্বি বলুন।
-আমার সঙ্গে একটু দেখা করতে পারবেন দয়া করে?
-মানে।
-না মানে বিকেলের দিকে যদি একটু দেখা করতেন। তাহলে ভালো হতো।
(চলবে?)
এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১১ এক টুকরো চোখের জল! পর্ব-১১ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 1:36 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প