অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৫

অহংকারী মেয়ে
এনি রুমে যাওয়ার পরে শান্তর মোবাইল থেকে একসাথে দুইটা মেসেন্জারের নটিফিকেশনের সাউন্ড আসে।
এনি তখন শান্তর মোবাইল টা হাতে নিয়ে যা দেখলো তা দেখে তার মাথা নষ্ট হয়ে যাওয়ার মতো।
এনি দেখে জুই এর আইডি থেকে কয়েকটা মেসেজ এসেছে।
মেসেজ গুলা ঠিক এইররম,বাবু বাসায় গেছো? খেয়ে নিও কেমন।
আর হ্যা শুনো কালকে আমার ফেবারিট জায়গায় যাবো তোমাকে সাথে করে নিয়ে।
এসব দেখে এনির মাথায় রক্ত উঠে যায়।
তখন শান্ত ওয়াশ রুম থেকে বের হয়ে আসে।
-আজকে কোথায় গেছিলি?
-ফ্রেন্ডের বাসায়।
-জুই তোর ফ্রেন্ড?
-মানে?
-কিছু বুঝিস না?
-কি বলছো?
-জুই এর সাথে কোথায় গেছিলি?
-কেন?
-এই কুত্তার বাচ্চা তোরে না বলছি আমাকে প্রশ্ন করবি না।
তাও প্রশ্ন করিস কেন এই বলে শান্তর গলায় খামচি মারে।
শান্ত তখন ব্যাথায় কান্না করে দেয়।
-এই তোর নাটক কান্না বন্ধ কর,বল কোথায় গেছিলি?
-পার্কে।
-কেন?
-জুই নিয়ে গেছে।
-নিয়ে কি বলছে?
-অনেক কিছু
-বল কি বলছে?
-শান্ত তখন চুপ হয়ে থাকে,
-প্রেম হয়ে গেছে তাই না?
ভালোই ধান্দা বাইর করছিস।
-কি সব যা তা বলছো? আমি কেন ধান্ধা করবো?
-বড় লোকের মেয়ের সাথে প্রেম করছিস, তারপর বিয়ে করতে পারলে লাইফ সেটেল তাই না?
-হ্যা বলে শান্ত বারান্দার দিকে চলে যায়।
হ্যা বলছে কারন শান্ত জানে ওর কাছে যতক্ষন না মাথা নত না করবে ততক্ষণ সে খোচাবে।
পরেরদিন শান্ত বের হয়ে জুই যেখানে বলছে শান্ত সেখানে যায়।
জুই এর সাথে দেখা হওয়ার সাথে সাথে জুই শান্তর হাত ধরে...আর বলে,
-এই এত দেরি হলো কেন?
-ঠিক সময়'ই তো আসছি।
-আমি অনেক্ষন হয় এসে বসে আছি বলে শান্তর হাতে জড়িয়ে ধরে কাধে মাথা রাখে।
কাধে মাথা রাখার পরে গলার দিকে নজর যায়।
-এইটা কিসের দাগ(জুই)
-কোথায়?
-গলায়।
-এমনিতে ওগুলো কিছু না।
-কিভাবে হয়েছে বলো।
-আরে কিছু না।
-মিথ্যাও বলতে পারো।
-আরে তা না,
-কিভাবে হয়েছে বলো?
-বাদ দাও না।
-এটা খামচির দাগ,এনি তোমাকে খামচি দিছে।
-হুম,
-কেন?
-কালকে যে তুমি টেক্সট করছো ওগুলো ও দেখে ফেলছে।
-কিভাবে দেখছে?
-আমি মোবাইল চার্জে লাগিয়ে ওয়াশ রুমে গেছিলাম। ঠিক তখন ই তোমার মেসেজ আসছিলো।
-তুমি কি প্রতিবাদ করতে পারো না?
-সবাই প্রতিবাদ করতে পারে না।
-কেন পারবেনা?
-তোমাকে আগেই বলছিলাম যে যেই পজিশনে থাকে সে বুঝে তার জায়গাটা কেমন?
-আমি ওকে দেখে নিবো।
-এসব বলতে হবে না।
-কেন?
-আমাকে এমনিতেই সহ্য করতে পারে না এর মধ্যে এমন হলে তো আরো সহ্য করতে পারবে না।
শান্ত আর জুই আরো কতক্ষণ সময় কাটিয়ে ক্লাসের সময়ে ভার্সিটিতে গিয়ে উপস্থিত হয়।
শান্ত ভার্সিটিতে গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথে চলে যায়।
জুইও তার বন্ধুদের সাথে মিশে যায়।
-কোথায় গেছিলি?(এনি)
-বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে(জুই)
-বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিছিস? কে রে সে (অন্যান্য বন্ধু)
-আছে, আমাদের ক্লাসমেট ই
-নাম কি বল না রে(বন্ধু)
-দোস্ত ট্রিট দে(আরেকজন)
-তোর মোবাইল টা দে একটু(এনি)
-দিচ্ছি বলে শান্ত আর জুইয়ের লিপ কিছের একটা ছবি ওয়াল পেপার দেয়।
-নে বলে জুই মোবাইল টা হাত বাড়িয়ে দেয়।
-এনি মোবাইলের ওয়ালপেপারে এসব ছবি দেখে রাগে নাক মুখ লাল হয়ে যায়। এনি ওয়ালপেপার টা দেখার সাথে সাথে মোবাইল টা আবার জুইকে ফিরিয়ে দেয়।
-কি রে নাম বলবিনা?(রাফি নামে একটা ছেলে)
-জুই তখন সবার সামনেই শান্তকে ফোন দিয়ে আসতে বলে।
শান্ত তাদের কাছাকাছি এসে দেখে এনিও সেখানে উপস্থিত।
শান্ত এনিকে দেখে একটু একটু ভয়ও পাচ্ছে।
শান্ত আসার পরে জুই সবার সামনে হাত ধরে বলে...
-এই ভার্সিটির টপ স্টুডেন্ট আমার অনেক দিনের ক্রাশ। সেমিস্টার শেষের দিকে তাই আর দেরি না করে ওকে সব কথা বলে দিলাম। শান্ত'ই আমার স্বপ্ন বলে সবার সামনেই তার কাধে মাথা ফেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
তাদের মধ্যে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে শুধু এনি ছাড়া।
-কি এনি কথা বলছিস না যে?(জুই)
-এনি মনে হয় তোর জামাইরে পছন্দ করতো বলে সবাই হেসে দেয়।
-মালিক কখনো চাকরের কাছে বিয়ে বসে?
-মানে?(সবাই অবাক হয়ে)
-মিস শান্ত ওপপপস স্যরি মি.শান্ত আমাদের বাড়ির বিশ্বস্ত চাকর। সে ১২ বছরের উপরে হয় আমাদের বাড়ির চাকরের মতো কাজ করে যাচ্ছে।
জুই তখন বলা শুরু করলো।
.
-এই এই ওয়েট ওয়েট তুই আমার বয়ফ্রেন্ডকে এমন সবার সামনে ছোট করছিস কেন?(জুই)
-ওরে ছোট করার কি আছে? ও যেমন ঠিক তেমন'ই বললাম
-তোর কি যোগ্যতা আছে যে তুই শান্তর বদনাম গাচ্ছিস?
-এটা ওরে বল।
-শান্ত এই ভার্সিটির সবচেয়ে ভালো স্টুডেন্ট, সবচেয়ে ভদ্র ছেলে,ওরে নিয়ে অনেকে স্বপ্ন দেখে।
-হি হি হি স্বপ্ন দেখে?
-হ্যা,
-কই আমি তো দেখি না।
-তুই কাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবি? তোর এসব আবেগ ভালোবাসা নাই,আমার ভাবতেও কেমন জানি লাগে যে তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড।
-জুই শুধু শুধু একটা ছেলের জন্য বাজে বকিস না।
-বাজে কি বলছি? তোর মনে কখনো এসব আসছে? প্রত্যেকটা মেয়ের ইচ্ছা থাকে তার স্বামী যেন তাকে অনেক বেশি ভালোবাসে। আমার শান্তকে আগেও ভালো লাগতো আর এখন তো বয়ফ্রেন্ড কয়দিন পরে স্বামী হবে। আমার মনে হয় তোর লাইফে এখনো টাকা ওয়ালা ছেলে আসে নাই। এমন ছেলে আসলে যেইভাবে হোক নিজের করে নিস বলে শান্তর হাত ধরে অন্য কোনো জায়গায় যায়।
-ওরে এভাবে বলা ঠিক হয় নাই(শান্ত)
-তো কিভাবে বলবো?
-ও মনে হয় অনেক রাগ করেছে।
-করলে করবে, কত্তো বড় সাহস আমার শান্তকে ছোট করতে আসছে বলে জুই শান্তর কাধে মাথা রেখে নিশ্বাস ফেলে।
শান্ত তখন মাথায় হাত রেখে কপালে একটা চুমু খেয়ে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে।
এনি বাসায় গিয়ে জুই এর কথাগুলো ভাবছে।
আসলেই তো আমি কখনো প্রেমে পরিনি। আমি এমন কেন? কত ছেলেই তো প্রপোজ করেছে কিন্তু কারোর প্রেমে সারা দেয় নাই।
শান্তরে দেখতে তো ভালোই লাগে কিন্তু আমি কেন ওর সাথে এমন করি?
আর জুই আমাকে এমন ভাবলো?
ভাবলে ভাবুক, আমিও দেখবো তাদের প্রেম কতটুকু যায়। শান্ত তখন বাসায় আসে।
আজকে এনির সামনে পরার পরেও কোনো কিছু বলে নাই। এই প্রথম এনি তাকে সামনে পেয়েও কিছু না বলে ছেড়ে দিলো। শান্ত রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে জুই এর সাথে কথা বলা শুরু করে।
পরেরদিন এনি ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে শান্ত আর জুই একসাথে বসে আছে আর হাসাহাসি করছে। জুই এনিকে দেখে শান্তকে হালকা করে কিস করে।
-এই সবার সামনে এসব কি করছো(শান্ত)
-তো কি হয়েছে? বলে শান্তর ঠোঁটে আরেকটা কিস দেয়।
এনি এসব দেখে রাগি মুখে সামনে থেকে চলে যায়। ক্লাস শেষে শান্ত আর জুই একসাথে হাত ধরে হেটে হেটে বাহিরের দিকে যাচ্ছে আর এনি তাদের দিকে চেয়ে আছে আর ভাবছে জুই কতো পরিবর্তন হয়ে গেছে। এতদিনের বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়ে ও একটা ছেলের হাত ধরে হাটছে। এসব ভাবতে ভাবতে এনি বাসায় যায়।
শান্ত বাসায় যাওয়ার পরে এনির বাবা তাকে খোজ করে তখন সে এনির বাবার সামনে যায়।
-আংকেল কিছু বলবেন?
-আজকে আমরা সবাই একটা অনুষ্টানে যাবো সাথে তুমিও যাবে।
-আংকেল আমি না গেলে হয় না?
-আমাদের সাথে যেতে পারলে ভালো হতো।
-ওকে
সন্ধ্যার দিকে গাড়ি নিয়ে বের হয়।এনি সামনের সিটে আর এনির মা-বাবা পিছনে বসে আছে।
এনির বাবার বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যায়। আজ নাকি তাদের ওখানে কিসের অনুষ্টান যেন আছে তাই এখানে সবার আসা।
গাড়ি পার্কিং করে বাসায় আসার পরে এনির বাবার বন্ধুর ছোট মেয়ে এনির কাছে আসে।
-আপু কেমন আছো?(নিশি,পঞ্চম শ্রেনীতে পড়ে)
-হুম ভালো, তুমি কেমন আছো?(এনি)
-হুম ভালো,আপু এই ছেলেটা কে?
-এমনি কেউ না।
-বুঝছি।
-কি বুঝছো?
-এটা কি তোমার বয়ফ্রেন্ড? তোমার সাথে অনেক ভালো মানাবে বলে হাসি মারে।
-এই কি বলছো এসব?
-তোমার বর নাকি?
-নিশিইইই চুপ করো।
-আচ্ছা বলে চলে যায়।
নিশি যাওয়ার পরে এনি শান্তর দিকে খেয়াল করে দেখে শান্ত নিচের দিকে চেয়ে চেয়ে মোবাইল টিপছে আর নিজে নিজে হাসতেছে।
এনি তখন ভাবে হয়তো জুই এর সাথে চ্যাটিং করতেছে।
এভাবে অনুষ্টান শেষ হওয়ার পরে সবাই আবার গাড়ি করে বাসায় চলে আসে।
দুইদিন পরে ভার্সিটিতে গিয়ে দেখে শান্ত আর জুই হাত ধরে ধরে কথা বলছে আর হাসাহাসি করতেছে এনি তখন তাদের চোখে ধরা না দিয়ে বাসায় চলে আসে।
এনি তার মা-বাবাকে সামনে রেখে......
-বাবা
-কি হয়েছে বল।
-তোমাকে একটা কথা বলার ছিল।
-কি বলবি বল।
-কথাটা একটু ডিফারেন্ট।
-আরে বল,
-আমি শান্তকে বিয়ে করবো।
-কিহহহহ(এনির বাবা অবাক হয়ে)
-হ্যা বাবা।
-কিন্তু তুইতো ওরে একদম সহ্য করতে পারিস না, সারাক্ষণ ঝগড়ায় লেগে থাকিস, হঠাৎ এমন পরিবর্তন হলি কিভাবে?
-বাবা আমি এসব কিছু জানিনা, তারাতারি বিয়ের ব্যবস্থা করো।
-সামনে তোদের পরীক্ষা
-পরীক্ষা আরো ৫ মাস আছে।
-তোর কি হয়েছে বল তো?
- কিছু না, শান্ত তো তোমাদের পছন্দের ছেলেই, শান্তর সাথে বিয়ে দিতে কোনো আপত্তি আছে নাকি?
-নাহ,
-তাহলে তারাতারি শান্তকে বলে বিয়ের ব্যবস্থা করো বলে এনি রুমে চলে যায়।
এনির বাবা শান্তকে ডেকে এসব বলার পরে..........
.
প্রিয় পাঠকবৃন্দগন আপনাদের কি মনে হয় শান্ত কি রাজি হবে? জুই কি তার ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলবে??
অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৫ অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৫ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 3:59 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প