হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৫

এর মধ্যে হুট করে অরন্য একদিন অফিস থেকে এসে আমাকে বলতেছে
-আপনি একটু তাড়াতাড়ি রেডি হন।আপনাকে নিয়ে একটু এক জায়গায় যাব।
অরন্যের এরকম কথা শুনে যেন আমার মনটা নাচতে শুরু করল।কিন্তু অরন্য আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে?জানার জন্য মনটা আনচান করতেছে।তাই নিজের আবেগ আর সামলাতে পারলাম না।অরন্যকে বলেই ফেললাম
-আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাবেন?
অরন্য বেশ রাগ রাগ গলায় বললেন
- আপনাকে রেডি হতে বলেছি আপনি রেডি হন।এত কিছু জানতে হবে না।আপনি একটু বেশিই বকেন।এত বকা ভালো না।যান রেডি হয়ে আসুন।
আমি মুখটা খুব কাচুমাচু করে যেতে নিলাম।উনি পিছন থেকে আবার ডেকে বললেন
-শুনেন?
আমি হাসি দিয়ে পিছনে ফিরে বললাম
-হ্যা বলেন।আমি জানতাম আপনি বলবেন কোথায় যাব।বলেন কোথায় যাব।
উনি আরেকটু গম্ভীর গলায় জবাব দিলেন
-আপনার মাথায় সত্যিই গোবর আমি বলার আগেই বকবক করে যাচ্ছেন।আমি কোথায় যাব সেটা বলার জন্য ডাকে নি।
আমি বেশ মন খারাপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম
-তাহলে কেন ডেকেছেন?
-আমি ডেকেছি এজন্য যে আপনি একটা শাড়ি পড়বেন আজকে।
-হঠাৎ শাড়ি পড়ব কেন?
-আমি বলেছি তাই পড়বেন।
-হুহ আপনি বললেই পড়তে হবে নাকি।আমি পড়ব না আপনি কি করবেন?
-আপনাকে পড়তেই হবে।
-বলেছি তো পড়ব না।
উনি এখন বেশ রেগে গিয়ে বললেন
-আপনার যা ইচ্ছা করুন।
এ বলে উনি চলে গেলেন।আমারও উনাকে রাগাতে পেরে খুব ভালো লাগতেছে।কিন্তু কি শাড়ি পড়ব?কিছুই যেন মাথায় আসছে না।আজকে প্রথম ভূতমশাই আমাকে কোথাও নিয়ে যাবে।কেন জানি না ভূতমশাই এ কয়েক দিনে অনেক পাল্টে গিয়েছে। আগের মত আর আমাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলে না।তার এ পাল্টানো দেখে আমি খুব খুশি।যাইহোক আলমিরা খুলে সব শাড়ি দেখতে লাগলাম।খুশিতে যেন সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল।এত শাড়ির মধ্যে ভূতমশাই কোন শাড়িটা পড়লে খুশি হবে ঠিক বুঝতে পারছি না।দেখতে দেখতে আলমিরার সব শাড়ি খাটের উপর রাখলাম।ভূতমশাই আমার কাছে এসে বললেন
-আপনি এখনও রেডি হন নি?খাটের উপর শাড়ির মেলা বসিয়ে ফেলছেন একদম।এত শাড়ি খাটের উপর রেখেছেন কেন?
আমি তোতলাতে তোতলাতে জবাব দিলাম
-নাহ মানে!নাহ মানে!
- কি নাহ মানে মানে করছেন?স্পষ্ট করে বলুন কি হয়েছে।এমনিতে তো কথা একটাও মাটিতে পড়ে না এখন এভাবে তোতলাচ্ছেন কেন।ঠিক করে বলুন কি হয়েছে।
আমি মুখটা একটু অসহায় অসহায় ভাব নিয়ে বললাম
-নাহ মানে!
-আবার নাহ মানে করছেন?
-সত্যি বলতে আমি কোন শাড়িটা পড়ব ঠিক বুঝতে পারছি না।আপনি যদি একটু ঠিক করে দিতেন ভালো হত।আমার রেডি হতেও সুবিধা হত।
উনি এবার একটু মুচকি হাসি দিয়ে আমাকে বললেন
-একটু ঐদিকে যান।সামান্য শাড়িটা ঠিক করতে পারছেন না কোনটা পড়বেন।সব কাজ তো দেখি বলার আগে করে ফেলেন।আজকে কি এমন হল শাড়িটাও চয়েজ করতে পারছে না।
-নাহ মানে!
-থাক আপনাকে আর নাহ মানে, নাহ মানে করতে হবে না।দেখতে দিন শাড়ি গুলা।
আমি একটু নড়ে পাশের দিকে সরে বসলাম।উনি আমার পাশে এসে বসলেন আর সব শাড়িগুলো দেখে একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বললেন
-আপনি বরং কালো শাড়িটা পড়ুন।আপনাকে ভালো লাগবে।
কালো শাড়ির কথা বলাতে আমার মনের ভিতর কেমন জানি করে উঠল। কারন আমি ফর্সা না।তাই আমি উনাকে বললাম
-আমি দেখতে তো ফর্সা না।আমাকে কালো শাড়ি মানাবে বলে মনে হচ্ছে না।কালো শাড়িতে আমাকে আরও কালো লাগবে।একদম পেত্নী মনে হবে।আপনি কি আমাকে অপমান করার জন্য এমন বলছেন তাই না?
উনি আমার কথায় মনে হল বেশ বিরক্ত হল।হয়ত আমার মুখে এমন হতাশাজনক কথা উনি আশা করি নি।তাই উনি একটু বিরক্ত মাখা মেজাজে আমাকে বললেন
-আপনার মত সাহসী মেয়ের মুখে এমন কথা মানায় না।মা তো বলেছে সৌন্দর্য ভিতরে থাকে। বাহিরের সৌন্দর্য কোন সৌন্দর্য না।আপনাকে না আমি ভিতর থেকে দেখলাম।আপনি কালো শাড়িটাই পড়ুন।আপনাকে অপমান করার কোন ইচ্ছা আমার নাই।আপনার যদি মনে হয় আমি অপমান করার জন্য বলেছি তাহলে পড়ার দরকার নেই।
এ বলে উনি উঠে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।কি করব বুঝতে পারছিলাম না।কালো শাড়িটা পড়ব কিনা মাথায় আসছিল না।অবশেষে হাবিজাবি চিন্তা না করে কালো শাড়িটায় পড়লাম।এ প্রথম আমি কোন কালো ড্রেস পড়েছি দেখতে কালো ছিলাম বলে আমাকে কেউ কখনও কালো ড্রেস পড়ার জন্য বলে নি।আর আমিও পড়ে নি।আজকে কালো ড্রেসটা পড়াতে নিজের কাছেই যেন নিজেকে বেশ সুন্দর লাগছে।হালটা একটু পাউডার মুখে মেরে নিলাম।
হঠাৎ করে খেয়াল করলাম উনি রুমে প্রবেশ করেছেন।রুমে প্রবেশ করে আমাকে দেখে বলতেছেন
-বাহ আপনাকে তো বেশ ভালো লাগছে।কালো কাজল পড়লে আরও ভাল্লাগবে সাথে একটা বড় খোপা করলে।
-আমি কালো তার উপরা কালো কাজল পরলে তো চোখগুলা আরও কালো দেখাবে।
-সাদা কালো কোন ভেদাভেদা নেই।ভেদাভেদ তো মানুষের দৃষ্টি করে।আপনাকে সুন্দর দৃষ্টিতে কেউ দেখলে নিশ্চয় আপনাকে সুন্দর লাগবে।মানুষকে সুন্দর অসুন্দর তখন লাগে যখন মানুষের দৃষ্টি সুন্দর অথবা অসুন্দর হয়।আপনি চাইলে কালো কাজল পড়তে পাড়েন আপনাকে ভালো লাগবে।
ভূতমশাই এর কথাগুলো শুনে যেন বুকের ভিতর একটা রোমাঞ্চকর অণুভূতি আসল।উনার মুখে এরকম কথা শুনে যেন নিজের ভিতরে অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করতে লাগল।সত্যি কখন যে উনাকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতেই পারি নি।হঠাৎ করে উনার ডাকে চিন্তার ঘোর কাটল
-কি ব্যাপার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
-নাহ মানে?
-আবার নাহ মানে।হয়েছে হয়েছে।এবার চটপট বের হন।আমি নীচে নামছি।
এ বলে অরন্য নীচে নামার জন্য যেতে লাগল।হঠাৎ করে দরজার সামনে গিয়ে পিছন ফিরে আমাকে ডাক দিল
-এই যে শুনেন।
-জ্বি বলেন।
-একটা টিপ পড়লে খারাপ লাগবে না।আর মাথায় খোপা করুন।
অরন্যের এসব কথা শুনে যেন আমি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছি।অরন্য এভাবে আমাকে বলবে কখনও ভাবি নি।অরন্য এ বলে বাইরে গেল।আমি মাথায় খোপা করলাম আর একটা টিপ পড়ে নীচে নামলাম।খেয়াল করলাম মা নীচে বসে আছে।মা আমাকে দেখে বললেন
-আজকে আমার অনন্যা মা এত খুশি খুশি মনে কোথায় যাচ্ছে।
মায়ের কথা শুনে যেন আরও লজ্জা পেলাম।লজ্জায় কি যে করব বুঝতে পারছিলাম না।লজ্জায় লাল হয়ে নীচে তাকিয়ে রইলাম।মা আমার এ হাল দেখে আমার কাছে আসল আর আমার মাথাটা উপরে তুলে বললেন
-অরুর সাথে ঘুরতে যাওয়া হচ্ছে বুঝি।এতেই এত লজ্জা পাচ্ছে।আজকে তো মাকে অনেক সুন্দর লাগছে।দেখি হাত খানা এদিকে দাও।
আমি মায়ের দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিলাম।মা তার হাত থেকে বালা জোরা খুলে আমার হাতে পড়িয়ে দিয়ে বলল
-বিয়ের পর হাত খালি রাখতে হয় না।হাতে সবসময় চুরি পড়ে থাকতে হয়।যাও তোমার তো আনন্দের শেষ নাই স্বামীর সাথে ঘুরে আস।আমার মহাজনও কাল পরশু আসবে তখন আমিও ঘুরব।তখন আমাদের প্রেম দেখে হিংসা কর না।
আমি হাসতে হাসতে মাকে বললাম
-কি যে বল না মা।
-আমি ত তোমার বন্ধুর মত।যাও মা।অরু আবার দেরি হলে রাগ করে বসবে।
আমি রেডি হয়ে বের হলাম।খেয়াল করলাম উনি গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আমাকে দেখে এক নজরে আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল।আমি যেন লজ্জায় আরও কাতর হয়ে গেলাম।লজ্জায় কাতর হয়ে উনাকে বললাম
-কি ব্যাপার কি দেখছেন?
-তেমন কিছু না।
-তাহলে এভাবে তাকিয়ে আছেন।
-এমনি তাকিয়ে আছি সব কি তোমাকে বলতে হবে নাকি।এত বাচাল মেয়ে।এত বকতে পারে।
খেয়াল করলাম অরন্য আমাকে তুমি করে বলেছে।আমার যে কি খুশি লাগছে বুঝাতে পারব না।মনটা খুশিতে নাচতে লাগল।হুট করে উনি ডাক দিল
-অনন্যা এভাবে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছ কেন?
- নাহ মানে!
-আজকে তোমার মুখ থেকে নাহ মানে আর গেল না।
-এই যে আপনি আমাকে তুমি বললেন তো তাই আর কি।
-তুমি আমার বয়সে ছোট তোমাকে কেন আপনি ডাকব।তোমাকে তুমি করেই ডাকব।শুন?
-জ্বি বলেন।
-আজকে তুমি গাড়ি চালাবা আমি তোমার পাশে বসব।
আমি খুশিতে লাফ দিয়ে গাড়িতে উঠতে লাগলাম।আর বলতে লাগলাম আচ্ছা আচ্ছা।আমি উঠতে যাব ঠিক এ মুহুর্তে একটা হোঁচট খেলাম।উনি আমাকে ঝাপটে ধরে বললেন
-তোমার ছটফটে,পাগলামি স্বভাবটা আর গেল না।আস্তে উঠ।
আমি আস্তে করে গাড়িতে উঠলাম।ভূতমশাই ও গাড়িতে উঠলেন।আমি গাড়িটা স্টার্ট দিয়ে বললাম
-কোথায় যাবেন মশাই।
উনি আমাকে রাস্তা বলে দিল আমি যেতে লাগলাম।যেতে যেতে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে আসলাম।রেস্টুরেন্টে দুজন ঢুকলাম।অরন্য আমাকে আস্তে আস্তে করে একটা জায়গায় নিয়ে গেল।জায়গাটা পুরো মোমবাতি দিয়ে সাজানো পরিপাটি।দেখেই কেমন জানি আনন্দ লাগছে।একটা কেক আনল।আমাকে বললেন
-কেকটা কাটেন আপনি।
-হঠাৎ করে কেক কাটব কেন?
-কারন আজকে আপনার জন্মদিন।সেটা তো ভুলে বসে আছেন।
-ওহ হো আজকে ২৭ সেপ্টেম্বর সত্যিই তো আমার জন্মদিন।
-আমার জন্মদিন আপনি জানলেন কিভাবে?
-মা বলেছে।
আমি তো খুশিতে আত্নহারা যে ভুতমশাই এমন একটা সারপ্রাইজ দিয়েছে।হঠাৎ করে ভূতমশাই একটা রিং বের করে আমাকে পড়াতে নিল।ঠিক এ মুহুর্তে কোন একজন মেয়ে ওয়েটার এসে ডাক দিল।আমরা ওয়েটারের দিকে ফিরে চমকে গেলাম আর উনিও আমাদের দিকে ফিরে চমকে গেল আর মুখ লুকাতে লাগল।
কারন এ আর কেউ না এ যে অর্পা আপু।কিন্তু অর্পা আপু এখানে কি করছে?আমাকে আর অরন্যকে দেখে অর্পা আপু চলে নিতে নিল।আমি অর্পা আপুর হাতটা ধরে বললাম
-তুই এতদিন কোথায় ছিলি?হুট করে কোথায় চলে গিয়েছিলি।
খেয়াল করলাম অর্পা আপু কোন জবাব দিচ্ছে না।আমি একের এক প্রশ্ন করতে লাগলাম।হঠাৎ অর্পা আপু আমাকে
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা।
হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৫ হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৫ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 4:11 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প