হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৬

হঠাৎ অর্পা আপু আমাকে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বলল
-আমার কাছ থেকে সব ছিনিয়ে নিয়ে এখন নাটক করা হচ্ছে?লজ্জা লাগে না তোর?আমার জীবনের এ অবস্থা করে আমার অরন্যকে আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের করেছিস আর এখন নাটক করছিস যে আমি কোথায় ছিলাম?তোকে তো নাটকের সেরা পুরুষ্কার দেওয়া দরকার।অনেক নাটক শিখে গিয়েছিস।নাটক করে আমার জীবনের ১২ টা বাজিয়ে অরন্যের গলায় ঝুলে পড়েছিস।তুই ভালো করেই জানতিস যে তোর যে চেহারা তোকে অরন্যর মত কেউ বিয়ে করবে না।তাই এত বড় নাটক করেছিস।লজ্জা লাগে না এখন আমাকে এসব জিজ্ঞেস করছিা।আমাকে খুব হিংসা করতি তাই না?হিংসাকাতর হয়ে এমন করেছিস তো।নিজের বোনের সাথে এমন করতে লজ্জা করল না তোর।
আমি অর্পা আপুর কথা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না যে, অর্পা আপু কি বলছে।মাথায় যেন কোন কিছুই কাজ করছে না।অর্পা আপুই বা আমাকে এসব দোষারূপ করছে কেন।আমি তো এরকম কিছুই করে নি।আমি অর্পা আপুকে বললাম
-আপু কি হয়েছে এমন বলতেছিস কেন?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি তো তোর কথার মানে বুঝতে পারছি না।আমাকে কেন এসব বলছিস?আমি কেন নাটক করতে যাব।আমি কেন তোর ক্ষতি করতে যাব।
আপু আমাকে মুখটা বাকিয়ে রাগান্বিত হয়ে জবাব দিয়ে বলল
-এখন তো অরন্যের সামনে ন্যাকা সাজবিই।একদম কিছুই বুঝছিস না।আর বুঝবিই বা কেমনে তুই তো কিছুই করিস নি তাই না?
-আপু আমি তোর কথার মানেই বুঝছি না।সত্যিই আমি কিছু করে নি।কেন এরকম বলতেছিস তুই।আমি সত্যিই কথাগুলোর অর্থ বুঝতে পারছি না।
পাশ থেকে অরন্য বলে উঠল
-অর্পা তুমি আমাকে বল কি হয়েছে?আর অনন্যাকে এমন বলতেছ কেন?অনন্যা কি করেছে?আমাকে একটু খুলে বল।
অর্পা অরন্যের দিকে অসহায় এর মত তাকিয়ে রাগ আর গম্ভীর গলায় বলল
-অনন্যাকেই জিজ্ঞেস করুন সেই না হয় আপনার উত্তর দিয়ে দিবে।আমার থেকে ভালো তো সে বলতে পারবে। কারন নাটকের ডিরেক্টর তো অনন্যা ছিল।আমি তো ছিলাম ভুক্তভোগী।
অরন্য আমার দিকে তাকাল।অরন্যের মুখে আমার প্রতি এবার সন্দেহের ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।বুঝায় যাচ্ছে সে আমাকে অনেক সন্দেহ করতেছে।সন্দেহ মাখা মুখ নিয়ে বললেন
-অনন্যা কি করেছ তুমি?অর্পা এসব কি বলছে?সত্যিটা বল, কি হয়েছে?আমার কাছে সবটা খুলে বল।নাটক করবে না একদম।ভনিতাও করবে না।
-আপনি বিশ্বাস করেন আমি কিছু করে নি।অর্পা আপু কেন এমন বলতেছে সেটাও বুঝতেছি না।আপনি আমাকে ভুুল বুঝবেন না।আর অর্পা আপু তুই কি বলতেছিস সত্যিই আমি বুঝতেছি না।এমন কেন বলতেছিস তুই?
খেয়াল করলাম অর্পা আপু খুব কান্না করছে।কেন এভাবে কাঁদছে সেটাও বুঝতে পারতেছি না।অরন্য অর্পা আপুকে শান্ত্বণা দিয়ে বললেন
-অর্পা তুমিই বল কি হয়েছে?
অর্পা আপু কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বলল
-কি আর বলব বলেন?আমার তো সব শেষ হয়ে গিয়েছে এ কাল নাগীনির জন্য।এখন আর বললেও সব ঠিক হবে না।আমি চাই না আপনাদের মধ্যে কোন জামেলা হোক।আপনারা চলে যান।
-অর্পা তোমাকে বলতে বলেছি বল।অনন্যা কি করেছে বল।
খেয়াল করলাম অর্পা আপু এবার খুব কাঁদছে।কাঁদতে কাঁদতে অরন্যকে বলল
-আপনার কি বিশ্বাস হয় আমি বিয়ের দিন বয়ফ্রেন্ড নিয়ে পালিয়েছে।
অরন্য শান্ত স্বরে জবাব দিল
-সে তো আমি বিশ্বাস করি নি।কারন তুমি তো বিয়ের আগে আমার সাথে ফোনে অনেক কথা বলতে।কিন্তু হঠাৎ কি এমন হল?আর কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
খেয়াল করলাম অর্পা আপু এখন ভীষণ কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে অর্পা আপু যা বলল সেটা শুনে আমার হার্টবিট টা বেড়ে গেল।মনে হতে লাগল এখনেই দম বন্ধ হয়ে যাবে।আপু এসব কেন বলছে কিছুই বুঝতেছি না।আমার বুকটা কষ্টে চিড়ে যাচ্ছে কথাগুলো শুনে।কারন আপু বলল
-আমি কোথায় গিয়েছিলাম সেটা কি আপনি জানতে চান।
অরন্য শান্ত হয়ে জাবাব দিল
-হ্যা জানতে চাই।
তখন আপু বলল
-সেদিন আমি ঘরে বসে সাজতেছিলাম।হঠাৎ করে অনন্যার ফোন থেকে মেসেজ আসল আপু একটু লুকিয়ে বের হ আরন্য ভাইয়া আসছে তোমার সাথে দেখা করতে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে।আমিও সরল মনে বের হলাম।আমার ভুলটা ছিল যে আমি আপনাকে কল দেয় নি।বের হয়ে খেয়াল করলাম বাইরে কেউ নেই।আস পাশ ফাঁকা। অনন্যাকে কল দিলাম সে ও ফোন তুলছে না।হুট করে অনন্যার ফোন থেকে মেসেজ আসল একটু বাগানের দিকে আয়।অরন্য এখানে দাঁড়িয়ে আছে।আমিও বাগানের দিকে গেলাম।কিন্তু কোথাও কাউকে দেখলাম না।আমি সামনের দিকে একটু এগুলাম।তারপর......
এ বলে অর্পা আপু আবার হেচঁকি তুলে কাঁদতে লাগল।অরন্য তখন অর্পা আপুর হাতটা ধরে বললেন
-বল তারপর কি হল?কান্না থামাও।
অর্পা আপু কান্না থামিয়ে বলল
-তারপর খেয়াল করলাম কয়েকটা লোক আমাকে ঝাপটে ধরল।আমার মুখ চেপে ধরল।আমি চোখেও কিছু দেখতে পারছিলাম না।কখন যে জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম টের পেলাম না।জ্ঞান ফিরার পর খেয়াল করলাম আমি রনকদের বাসায়।
অরন্য বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন
-রনক টা কে?
অর্পা আপু বলল
-রনক হল অনন্যার বেস্ট ফ্রেন্ড।যদিও রনক অনন্যার ২ বছরের বড় তবুও তাদের ভালো ফ্রেন্ডশিপ ছিল।রনক আমাকে অনেক পছন্দ করত।অনন্যাকে বেশ কয়েকবার বলেছিল ও।কিন্তু আমি রাজি হয় নি।আর সে সুযোগটাই অনন্যা নিয়েছে।আমার বিয়ের দিনে আমাকে গায়েব করে দিয়েছে।আর ফাঁসিয়ে আপনাকে বিয়ে করেছে।অনন্যা যে আমার সাথে এমন করবে আমি ভাবতেও পারি নি।রনককে দেখে আমি চমকে গিয়ে রনক কে জিজ্ঞেস করলাম
-তুমি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছ কেন?
-আমি তোমাকে ভালোবাসি অর্পা।আমি চাই তুমি আমার হও।দেখ অনন্যাও চাই তুমি আমার হও।তাই তো ও আমাকে সাহায্য করেছে।
আমি তখন অবাক হয়ে গেলাম অনন্যার কথা শুনে।অবাক হয়ে রনককে জিজ্ঞেস করলাম
-অনন্যা তোমাকে সাহায্য করেছে আমাকে তুলে আনতে?আমি বিশ্বাস করি না।
-হ্যা আমি সত্যি বলছি।বিশ্বাস, অবিশ্বাস তোমার ব্যাপার।আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই আর সন্ধ্যায় তোমাকে বিয়ে করব।আমি সবকিছু ঠিক করে রেখেছি।
এ কথা গুলো বলে অর্পা আপু আবার হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল।
অরন্য অর্পার হাতটা আরও ভালো করে ধরে বললেন
-এরপর তুমি ঐখান থেকে কিভাবে এসেছ?
-এরপর আমি কোনমতে ঐখান থেকে রনক এর চোখ ফাঁকি দিয়ে বের হলাম।বেরিয়ে বাড়ি এসে দেখি আপনার সাথে অনন্যার বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর সবাই ভেবে নিয়েছে যে আমি পালিয়ে গিয়েছি।সেদিন আমার মুখটা দেখানোর মত ইচ্ছা আর আমার ছিল না।তাই বাড়িতে আর যায় নি।সরাসরি ফ্রেন্ডের বাসায় চলে যাই।সেখানে থেকে একটা কাজ যোগাড় করি আর এখানে একটা বাসা ভাড়া করে থাকা শুরু করলাম।
-তুমি একবার আমাকে বলতে পারতে অর্পা।
-কি বলব আপনাকে?কোন মুখে বলতাম আপনাকে?এতক্ষণে তো সব শেষ হয়ে গিয়েছিল।অনন্যার সাথে আপনার বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।আমার তো এখানে বলার কিছু ছিল না।আমি নিজের বোনের সর্বনাশ তো করতে পারি না।অনন্যা আমার সাথে যা করেছে আমি তো তা করতে পারি না।কারন অনন্যা আমাকে বোন না ভাবলেও আমি তো তাকে বোন ভাবি।
আমি অর্পা আপুর কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে বলতে লাগলাম
-আমি এসব কিছু করি নি।
অরন্যও আমার গালে কষিয়ে একটা চড় বসিয়ে বললেন
-তুমি এতটা নীচ ভাবতে পারি নি।সামান্য টাকার জন্য নিজের বোনের সাথে এমন করতে পারলে।লজ্জা করল না তোমার এমন করতে?আর এখন সব অস্বীকর করছ।
আমি অরন্যকে হাত জোর করে বললাম
-সত্যিই আমি এমন কিছু করে নি। বিশ্বাস করেন আমাকে।অর্পা আপু তুই আমার ব্যাপারে কেন এসব মিথ্যা বলছিস।কেন অরন্যের চোখে আমাকে খারাপ বানাচ্ছিস।দেখতে অসুন্দর হতে পারি কিন্তু উচ্চ আশা আমার ছিল না।টাকা পয়সার মোহ কখনও ছিল না।তাহলে কেন এমন বলতেছিস।কি ক্ষতি করেছি আমি তোর।তুই তো আমাকে চিনিস আমি কেমন?তাহলে এমন কেন বলছিস?
জবাবে অর্পা আপু বলল
-কি ক্ষতি করেছিস জিজ্ঞেস করতে লজ্জা লাগছে না তোর।আর কি ক্ষতি করা বাকি রাখছিস।যা তুই আর অরন্য গিয়ে সংসার কর।আর এখানে আসিস না।
ওপাশ থেকে অরন্য বলে বসলেন
-আমার সাথে অনন্যা যাবে না।তুমি যাবে।
অর্পা আপু অবাক হয়ে উত্তর দিল
-আমি কোথায় যাব?
-আমার সাথে আমার মায়ের কাছে যাবে।আর মাকে গিয়ে সব বলবে।আর তোমাকে যে কষ্ট অনন্যা দিয়েছে সেটা আমি অনন্যাকে ফেরত দিব।তুমি আমার সাথে চল।
-নাহ আমি চাই না আপনাদের মধ্যে কোন জামেলা হোক।
-জামেলা তো তুমি কর নি জামেলা করেছে অনন্যা।সেটার শাস্তি তুমি কেন পাবে?
আমি অরন্যকে অনেকবার বুঝানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু বুঝাতে পারলাম না।অরন্য অর্পা আপুর কথায় বিশ্বাস করেছিল।আর অর্পা আপু কেনই বা আমার নামে মিথ্যা বলল সেটাও বুঝতে পারছিলাম না।অরন্যেকে বুঝানোর হাজার চেষ্টা করেও ব্যার্থ হয়েছি।অরন্য অর্পা আপুর হাত ধরে বের হয়ে গেল।আর আমাকে যে রিং টা পড়াতে চেয়েছিল সেটাও মেঝেতে পড়ে গেল।অরন্য সেটা ফেলেই চলে গেল।আমি রিংটা হাতে নিয়ে কাঁদতে লাগলাম।আর বলতে লাগলাম "কেন আমার সাথে এমন হল কি ক্ষতি করেছি আমি।কেন আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া হল।আমি তো কারও কোন ক্ষতি চাই নি।"
কাঁদতে কাঁদতে আমি দৌঁড়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলাম। খেয়াল করলাম অরন্য আর অর্পা আপু গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছে।
আমার বুকে বেশ কষ্ট হতে লাগল।এক তো অরন্য আমাকে ফেলে রেখে গিয়েছে তার উপর অরন্য জানত আমি এখানের কিছু চিনি না।কিভাবে পারল আমাকে আমার ভূতমশাই ফেলে রেখে যেতে।আমি তো কিছু করি নি। আমার ভূতমশাই কেন আমাকে বিশ্বাস করল না।কেন আমাকে কষ্ট দিল?আমি তো অর্পা আপুর কোন ক্ষতি করে নি।আমি তো আপুর সাথে এমন করি নি।তাহলে আপু কেন এমন বলল?কেন আমার অরন্যকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যেতে চাইল।এত কষ্ট কেন দিল আমায়।আল্লাহ আমি তো কোন প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না।আমি কি করব তুমি বলে দাও।
এ মুহুর্তে হাতে আমার একটা টাকাও ছিল না যে যাব।তবুও একটা সি এন জি ভাড়া করলাম।ভাড়া করে বাসায় গেলাম।বাসার দারোয়ানের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়া দিলাম।
ঘরের ভিতরে গিয়ে দেখলাম
লেখিকা-শারমিন আঁচল নিপা
হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৬ হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৬ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 4:13 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প