হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৩

আমি কিছু বুঝতে না পেরে এক গ্লাস পানি নিয়ে উনার নাক বরাবর ঢেলে দিলাম।ভূতমশাই খপ করে উঠে বসে বলতে শুরু করলেন
-কি হল? কি হল?আপনি এভাবে পানি দিলেন কেন?মাথার সব কি ছিড়ে গেছে নাকি আপনার?
আমি এবার হাসতে হাসতে বললাম
-মাথা তো আমার ঠিকেই আছে।বলি কি এভাবে যে নাক ডাকছেন মনে তো হচ্ছে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হচ্ছে।
খেয়াল করলাম উনি বেশ রেগে গিয়েছে আমার কথাটা শুনে। কিছুক্ষণ দম ধরে বসে থেকে আমাকে বললেন
-দেখেন এসব মজা আমার একদম পছন্দ না।আর এমন করবেন না।আপনি খুব বেশি করতেছেন।কালকে থেকে একের পর এক কাহিনী করে জ্বালাচ্ছেন।শেষমেষ আমি এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম।আল্লাহ আমায় রেহাই দাও।
আমি ভ্রূটা কুঁচকে বললাম
-হয়েছে হয়েছে এত কষ্ট পেতে হবে না।আমি আপনাকে এখনও তেমন কিছু করি নি।এত হতাশ হওয়ার মত কিছু হয় নি।এখন আমাকে একটু সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন তো।আমি তো এ বাসার কাউকে চিনি না।
ভূতমশাই রাগ রাগ গলায় বললেন
-কারও সাথে পরিচয় হওয়ার দরকার নেই।বাসায় অনেক মেহমান আপনার বের হওয়ারেই দরকার নেই।ঘরে বসে থাকুন।
উনি আরও কিছু বলতে যাবেন ঠিক এ মুহুর্তে দরজায় কেউ নক করে বলতেছে
-অরন্য দরজাটা খুল।বউ নিয়ে নীচে বসার রুমে আয়।সবাই বউ দেখার জন্য অপেক্ষা করছে।
উনি আমার সাথে কোনরূপ কথা না বাড়িয়ে ঐ মহিলাকে জাবাব দিলেন
-ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।তুমি যাও।
-আচ্ছা গেলাম আমি।
উনি উঠতে যাবে ঠিক এ মুহুর্তে উনার পাশে বসে উনাকে বললাম
-আচ্ছা আপনার বাসায় কে কে আছে বলুননা?
এবারও উনি রেগে গিয়ে বললেন
-আপনার এত কিছু জানতে হবে না বললাম তো।অতিথি হয়ে এসেছেন আর সময় মত ঠিক চলে যাবেন।এটাই মাথায় রাখুন।বাসায় কে আছে এটা জেনে আপনার কি হবে?
উনার কথাগুলো শুনলে যেন গা জ্বলে যায়।কিন্তু আমিও নাছোরবান্দা যতক্ষণ পর্যন্ত না বলবে ততক্ষণ পর্যন্ত উঠতে দিব না।আমি বললাম
-আপনি না বললে আমি কিন্তু আপনাকে উঠতে দিব না।আগে বলেন কে কে আছে।
-আপনি তো সত্যিই অনেক নাছোরবান্দা।বলব না কে কে আছে কি করবেন?আপনি একরোখা হলেও আমি আপনার থেকে বেশি একরোখা।আমি কিছুই বলব না।
আমি গলায় একটা কাশি তুলে বললাম
-এহেম,এহেম।ওকে বলতে হবে না। যান ওয়াশ রূমে যান।
উনিও আমার এভাবে হার মানা দেখে খুশি হল।কিন্তু যখন ওয়াশরুমে যেতে নিল আমি আমার পা টা বাড়িয়ে দিলাম।আমার পায়ে উনার পা লেগে উনি হোঁচট খেয়ে পড়ল।আর চিল্লায়ে বললেন
-আপনি ইচ্ছা করে এমন করছেন তাই তো?ইচ্ছা করে এমন করলেন কেন বলেন?
আমি মুচকি মুচকি হেসে বললাম
-কোথায় আমি তো কিছু করে নি।আপনি বলেন নি তাই শাস্তি পাচ্ছেন।যদি এবার ও না বলেন তাহলে আরও অনেক কিছুই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। এবার ভেবে দেখুন কি করবেন।
উনি বেশ বুঝতে পারল আমি অনেক নাছোড়বান্দা তাই আরও অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটার আগে বললেন
-আমার পরিবারে বাবা,মা,আমি আর আমার বড় বোন আছে।বাবা বিদেশ থাকে সবসময়।আর মা দেশে থাকে কিন্তু প্রায় সময় অসুস্থ থাকে।আর বড় বোন তার স্বামী নিয়ে লন্ডন থাকে।একটু আগে যে মেয়েটা ডেকে গেল উনি আমার বড় বোন।আর আমার বাবা আমার বিয়েতে আসে নি।উনি সবসময় ব্যস্ত থাকেন।
-আচ্ছা তাহলে আপনার বাসায় রান্না করে কে?
উনি রাগ হয়ে বললেন
-এটাও কি আপনার জানতে হবে?
আমি এবার ভাব মাখা মুখ নিয়ে বললাম
-হ্যা ভূতমশাই জানতে হবে।
উনি মুখটা বাকিয়ে উত্তর দিলেন
-বাবুর্চি রান্না করে।এবার আমাকে ওয়াশরুমে যেতে দিন।আপনিও রেডি হন।বসার রুমে সবাই অপেক্ষা করছে।পারলে একটু ভালো করে সেজে যাবেন।না হয় মান সম্মান আর থাকবে না।বিয়ে তো করেছেন ফাঁসিয়ে।সেটা তো আর কেউ বুঝবে না।সুতরাং একটু গুছিয়ে যাবেন নীচে।পরে সময় আর সুযোগ মতে আলাদা হয়ে যাব আমরা।আশা করি বুঝতে পারছেন।
কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা কাঁপতে লাগল।যতই হোক উনি এখন আমার স্বামী হয়।কোন মেয়েই হয়ত চাইবে না সে ডিভোর্সি হোক।খারাপ লাগলেও নিজেকে বেশ সামলে ভূতমশাইকে জবাব দিলাম
- আমি ঐসব ময়দা মেখে নীচে যেতে পারব না।আমি যেমন ঐরকমেই যাব।কে কি বলল তাতে আমার যায় আসে না।ময়দা মেখে নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য বাড়ানোর কোন ইচ্ছা আমার নাই।আশা করি বুঝতে পারছেন।
উনি এতক্ষণে বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে যে আমি খুব নাছোরবান্দা তাই উনি শুধু বললেন
-আপনার যা ইচ্ছা করুন আমাকে বলতে আসবেন না।যেভাবে ইচ্ছা ঐভাবে নীচে যান।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।
কথাগুলো বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলেন।এর মধ্যে আমি খেয়াল করলাম সারা ঘর বেশ অগোছালো হয়ে আছে।তাই ঘরটা গুছানো শুরু করলাম।আলমিরা থেকে উনার জন্য কাপড় বের করে বিছানায় সাজিয়ে রাখলাম যাতে করে উনি ওয়াশ রুম থেকে এসে হাতের নাগালে সব পেয়ে যায়।উনার ঘড়ি, ওয়ালেট সব একত্রে এক জায়গায় রাখলাম।আমি চটপট করে একটা শাড়ি পড়ে ফেললাম।যতটুকু সম্ভব নিজেকে ময়দা মাখা ছাড়া গুছানোর চেষ্টা করলাম।সবকিছু ঠিক করতে করতে খেয়াল করলাম উনি ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে উনি সারা ঘরটা দেখে একটু অবাক হল।বিছানার উপর উনার কাপড়গুলো দেখে বললেন
- এখানে এগুলো কে রেখেছে?ঘরটা এত তাড়াতাড়ি এত পরিপাটি করে কে গুছিয়ে দিয়ে গেল।
আমি লাজুক স্বরে জাবাব দিলাম
-এসব কিছু আমি করেছি।
আমার কথাটা শুনে উনার মুখটা যেন আরও চুপসে গেল।উনার চুপসানো মুখটা পুরো আলোর চপের মত লাগছিল।চুপসানো মুখ নিয়ে আমাকে বলল
-এত কিছু করতে কেউ তো আপনাকে বলে নি।এতকিছু করতে গেলেন কেন?
আমিও বেশ ঝাঁঝালো গলায় জাবাব দিলাম
-নিজের ঘর নিজে গুছিয়েছি তাতে আপনার কি মশাই?
উনি ভ্রূটা কুঁচকে বলল
-আপনার ঘর মানে?এটা আপনার ঘর কবে হল?
আমি হাসি হাসি মুখে উত্তর দিলাম
-কেন স্বামীর ঘরেই তো স্ত্রীর ঘর হয়।বিয়েটা যেভাবেই হোক।ডিভোর্সের আগ পর্যন্ত আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি আমার স্বামী।সুতরাং ঘর গুছাতে আমি পারব নিশ্চয়।
ভূতমশাই রাগ রাগ গলায় বললেন
-আপনি একটু বেশিই বকেন।আর আপনাকে এ ড্রেস বের করতে কে বলেছে?আমি তো এটা পড়ব না।
-আমার কাছে এটা ভালো লেগেছে তাই এটা বের করেছি।পড়লে খুশি হব।
উনি এবার ভীষণ গম্ভীর একটা মোড নিয়ে জবাব দিলেন
-আপনার খুশিতে আমার কি যায় বা আসে।?করেছেন তো ফাঁসিয়ে বিয়ে আবার অধিকার ফলাতে আসতেছেন।লজ্জা হওয়া উচিত আপনার।
এ কথাটা শুনে বুকের ভিতরে হুহু করে কষ্টের সাইরান বাজতে লাগল।চোখের কোণে হালকা মেঘ ও জমতে লাগল।তবুও নিজেকে অনেক শক্ত করে উনাকে বললাম
-আপনার ইচ্ছামত পড়ে নিন।সমস্যা নেই।
উনিও আমার কথা শুনে বিছানা থেকে আমার রাখা ড্রেসটা আলমিরাতে রেখে উনার পছন্দ মত একটা ড্রেস পড়লেন।কিন্তু আমিও কম নাছোরবান্দা না উনাকে এর শাস্তি তো আমি দিবই।কিভাবে কি করা যায় বেশ ভাবতে লাগলাম।ভাবতে ভাবতে যেন চিন্তার আকাশে হাবুডুবু খেতে লাগলাম।
হঠাৎ করে ভূতমশাই এর তুড়ির শব্দে চিন্তার ঘোর কাটল।ভূতমশাই তুড়ি বাজাতে বাজাতে বললেন
-এই যে আপনি উপরে তাকিয়ে কি দেখছেন?
-নাহ তেমন কিছু না।কি হয়েছে বলুন?
-আপনি আর কোনদিন আমার অনুমতি ছাড়া আমার আলমিরায় হাত দিবেন না বুঝছেন।
আমিও কথাটা শুনে বেশ হেসে লুটোপুটি খাচ্ছিলাম।লুটোপুটি খেয়ে তুড়ি বাজাতে বাজাতে বললাম
-ঐ হ্যালো স্বামীর আলমিরায় হাত দিতে অনুমতি লাগে নাকি।আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না।আমি অন্যায় কিছু করি নি।
উনি বেশ বিরক্ত হয়েই আমাকে বললেন
-আপনি সত্যিই পাগল।আপনার মাথার তার মনে হয় সব ঢিলা।
আমি আবারও হাসতে হাসতে বললাম
-ভূতমশাই একটু ভুল বলে ফেলেছেন।
উনি উনার বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে প্রশ্ন করলেন
-কি ভুল শুনি?
আমি হাসি দিয়ে বললাম
-আমার মাথার তার ঢিলা না।
-তো আপনার মাথার তার কি?
-আমার মাথার তার তো সব ছিড়া।
এবার খেয়াল করলাম উনার মুখের বিরক্তের মাত্রাটা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে।বিরক্ত মাখা মুখ নিয়ে বললেন
-দোহাই লাগে।হাত জোড় করি আপনি আপনার বক বকানিটা একটু থামান।এবার বসার রুমে চলুন একটু।আমাকে মুক্তি দিন।
আমিও আমার শাড়ির আঁচল নাড়াতে নাড়াতে বললাম
-চলুন।।
এরপর দুজন নীচে গেলাম।নীচে যাওয়ার পর খেয়াল করলাম সবাই আমার দিকে কেমন ভাবে যেন তাকাচ্ছে।আর আমাকে দেখে বলছে অরন্যের কি কপালে চোখ ছিল নাকি এমন একটা মেয়ে কেউ বিয়ে করে আনে নাকি।তার উপর মেয়ের পরিবারও বেশি ধনী না কি দেখে এ মেয়ে বিয়ে করল আল্লাহ জানে ভালো।একের পর এক এসব কথা শুনে আমার মনটা ভীষণ খারাপ হতে লাগল।সবাই শুধু আমার বাহ্যিক সৌন্দর্যটাকেই দেখল আমার ভিতরটা বুঝার চেষ্টা করল না।ভিতরের মানুষটা কেমন আমি সেটা একটাবারও কেউ যাচাই করার প্রয়োজন অনুভব করল না।
হুট করে খেয়াল করলাম আমার শ্বাশুড়ি মা এসেছেন।সবাই শ্বাশুড়ি মাকে দেখে চুপ হয়ে গেল।শ্বাশুড়ি মা এসে আমাকে দেখে বললেন...
হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৩ হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৩ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 4:16 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প