হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৪

আমার শ্বাশুরি মা আমাকে এসে দেখে বললেন
-তোমার নাম কি মা?
আমি চট করে উনাকে সালাম করে, উত্তর দিলাম
-আমি অনন্যা।
উনি হাসি মুখে বললেন
-বাহ খুব সুন্দর নাম।
আমি মাকে বললাম
-মা আপনি এদিকে এসে বসুন।মা আপনি এ অসুস্থ শরীর নিয়ে কষ্ট করে এখানে আসলেন কেন?শুনেছি আপনাকে নাকি ডাক্তার বেড রেস্ট দিয়েছে।এ শরীর নিয়ে এখানে কষ্ট করে আসার কি দরকার ছিল।আপনি বললে আমিই আপনার রুমে চলে যেতাম।আমি আপনার রুমটা চিনলে সকালে উঠেই চলে যেতাম।কিন্তু আপনার রুমটা চিনি না আর এ বাড়িতে নতুন তো তাই কিছু চিনতে পারি নি। চিনলে আমিই চলে যেতাম।মা কষ্ট হয় নি তো আসতে?
উনি এক রাশ হাসি দিয়ে বললেন
-আমার মা টা দেখি অনেক সুন্দর করে কথা বলে।আমার মা টা দেখতে যেমন রূপবতী তেমন গুণবতীও।
মায়ের মুখে রুপবতী কথাটা শুনে যেন নিজের চোখে অজোরে বৃষ্টি নামতে লাগল।জীবনে এ প্রথম কেউ আমাকে রূপবতী বলেছে।নিজেকে সামলাতে অনেক চেষ্টা করলাম।কিন্তু জানি না কেন আবেগটা সামলাতে পারছিলাম না। তাই মাকে ধরে হুহু করে কেঁদে কেঁদে বললাম
-মা আপনি আমাকে রূপবতী বলছেন।আমাকে আজ পর্যন্ত কেউ রূপবতী বলে নি।আপনার মুখে রূপবতী কথাটা শুনে কেন জানি না আবেগটা সামলাতে পারলাম না।
মা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন
-সবাই তো তোমার বাইরের রূপটা দেখেছে কেউ তোমার ভিতরের রূপটা দেখে নি। তোমার ভিতরের রূপটা যদি কেউ দেখত তাহলে সবাই তোমাকে রূপবতীই বলত।আমি যে তোমার ভিতরের মানুষটাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি যার কারনে তুমি আমার কাছে সবচেয়ে রূপবতী।আমি আমার মেয়ে নীলার মুখে সবটা শুনেছি বিয়ের ব্যাপারে।শুন মা আমার ছেলে তোমার কপালে ছিল তাই তোমার সাথে এভাবে বিয়ে হয়েছে।আমার ছেলের ভাগ্যে তুমিই ছিলে।কে কি বলল কানে দিবে না।কারন মানুষ যাই বলুক নিজের কাছে যেটা সঠিক মনে হবে সেটাই করবে।মানুষের কাজেই কথা বলা।মনে রাখবে যখন তোমাকে নিয়ে কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করবে ভেবে নিবে সে তোমার জয়ে ঈর্ষান্বিত তাই তোমার সুখে তার মন কাতর হয়েছে বলেই তোমার নামে সে নেতিবাচক মন্তব্য করছে।জীবনে চলার পথে অনেক বাধা আসবে।লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।মানুষের কথায় কান দিয়ে নিজের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুতি হবে না।
মায়ের কথাগুলো শুনে মনে যেন আরও ভরসা পেলাম।মাকে জড়িয়ে ধরে আবেগে আরও কাঁদতে লাগলাম।মা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
-পাগলিটা কাঁদছে কেন এত।শোন মা আজকে রাতের পর থেকে বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে।নীলাও চলে যাবে রাতের ফ্লাইটে লন্ডনে।বাড়িতে আমি তুমি আর অরন্য ছাড়া কেউ থাকবে না।প্রতিদিন বাবুর্চির রান্না খেতে খেতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। আমি জানি এবার আমি চিন্তা মুক্ত কারন আমাকে আর বাবুর্চির রান্না খেতে হবে না আমার বউ মা এখন আমাকে সব রান্না করে খাওয়াবে।কি রে মা খাওয়াবে না?
আমি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম
-কেন পারবনা।এত ছোট একটা আবদার পালন করতে পারব না মেয়ে হয়ে।তাহলে আমি তেমার কেমন মেয়ে!।চিন্তা কর না আমি সবটা গুছিয়ে নিব।আমাকে শুধু বুঝিয়ে দিও।আর দোআ কর।
উনি হাসতে হাসতে বললেন
-সে তো অবশ্যই।
চারপাশে এ মুহুর্তে বেশ নিস্তবতা বিরাজ করছে।সবাই খুব চুপ হয়ে গিয়েছে।খেয়াল করলাম আমার ভূতমশাই আমার দিকে আলুর মত চুপসানো মুখ নিয়ে হা করে তাকিয়ে আছে।আমিও এ সুযোগে একটু পাগলামি করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারলাম না।সুযোগ বুঝে ভূতমশাইকে চোখ টিপুনি দিলাম।ভূত মশাই আমার চোখ টিপুনি দেখে একটু নড়েচড়ে দাঁড়াল।আমি ভূত মশাই এর থেকে মনোযোগ সরিয়ে মা এর দিকে তাকিয়ে বললাম
-মা এবার ঘরে চলুন।বেশিক্ষণ এভাবে থাকা ঠিক হবে না।আপনি আমার সাথে ঘরে চলুন তো আর আমাকে আপনার ঘরটা চিনিয়ে দেন যাতে করে আমার পরে যেতে যেন অসুবিধা না হয়।
মা হাসতে হাসতে বললেন
-চল আমার সাথে চল।
আমি মাকে নিয়ে ঘরে গেলাম।এবার মা আমার হাতটা ধরে বললেন
-দেখো মা অরন্য বেশ সোজা,সাপটা সরল স্বভাবের ছেলে। তুমি অরন্যকে ভালো রেখ।কখন ও কষ্ট দিও না।
আমি মায়ের হাতটা চেপে ধরে বললাম
-মা বিয়েটা যেভাবেই হোক আমি এখন অরন্যের স্ত্রী।অরন্যের ভালোমন্দের বিষয়টা আমি মাথায় রাখব।আপনি শুধু আমার জন্য দোআ করবেন।
মা আমার মাথায় আবার হাত বুলাতে বুলাতে বললেন
-দোআ করি অনেক সুখী হও।
মায়ের আদর মাখা স্পর্শ নিয়ে আমি বের হলাম মায়ের রুম থেকে।মায়ের রুম থেকে বের হয়ে খেয়াল করলাম ভূতমশাই এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এই সুযোগ আমার প্ল্যান টা কাজে লাগানোর।আমি একটু কোক মুখে নিয়ে ভূতমশাই এর কাছে গিয়ে জোরে হাঁচি দিলাম আর মুখের সব কোক ওনার গায়ে ফেললাম।উনি বেশ লাফিয়ে উঠে বললেন
-আমি তো জানি আপনি ইচ্ছা করেই এমন করেছেন।কেন করেছেন এমন?আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন?মাকে তো দেখলাম খুব হাত করে ফেলেছেন।ফাঁসানোর ব্যাপারে তো আপনি অনেক উস্তাদ।মাকেও ফাঁসিয়ে দিয়েছেন পুরা।
আমি এবার ফাঁসানোর কথাটা শুনে এতটা গায়ে লাগালাম না।উনাকে সজোরে বললাম
-সে আমি যা ইচ্ছা করি আপনার কি?যান ড্রেস টা চেন্জ করে আগের ড্রেসটাই পড়ুন যেটা আমি পছন্দ করে ছিলাম।আমার কথা শুনেন নি তো তাই এমন হয়েছে।মাঝে মাঝে বউ এর কথা শুনতে হয়, নাহয় এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতেই পারে।
একথাটা শুনার পর উনার আর বুঝতে আর বাকি রইল না যে, আমি ইচ্ছা করে এমন করেছি।কিন্তু উনার মুখে তেমন রাগের ছাপটা এখন লক্ষ্য করলাম না।তবুও মুখটাকে একটু বাকিয়ে জবাব দিলেন
-আপনার পছন্দের ড্রেসটা পড়ব না।আপনাকে আমার ভালো লাগে না।অর্পাকে দেখে প্রথম দেখায় ভালো লেগে গিয়েছিল যে ভালোলাগাটা আপনার প্রতি চাইলেও আনতে পারছি না।
আমি এবার হালকা করে উনার একটু কাছে গেলাম।কাছে গিয়ে বললাম
-"প্রথম দেখায় ভালো লেগে যাওয়ার চেয়ে দেখতে দেখতে ভালো লাগাটা অনেক শ্রেয়"
আপনি আমাকে দেখতে থাকুন।এ বলে চোখ টিপুনি দিয়ে বললাম ঐ ড্রেসটা পড়লেই ভালো লাগবে।পড়বেন কিন্তু।
-পড়ব না।
এ বলে উনি তারাহুরা করে রুমে চলে গেলেন।কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম উনি সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামছে।আমি উনাকে দেখে পুরো অবাক কারন উনি ঐ ড্রেসটাই পড়েছে আমি যে টা পড়তে বলেছিলাম।আমি তো উনার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছিলাম না।মনের ভিতর একটা হিমেল হাওয়া বইতে লাগল।উনি হুট করে আমার কাছে এসে বললেন
-ভাববেন না আপনার কথা রাখতে পড়েছি। আমার ড্রেস আমি পড়ব যা ইচ্ছা পড়ব।কারও কথায় পড়ি নি।
আমি এবার কিছুই বললাম না।শুধু মুচকি একটু হেসে দিয়ে বললাম
-ঠিক আছে কিছু ভাবব না।
ছোটখাট খুনসুটি দিয়েই সারাটাদিন পার করলাম।সন্ধ্যার দিকে একেক করে সব মেহমান চলে গেল।বাড়িটা বেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।নীলা আপুও রাতের ফ্লাইটে লন্ডন চলে গেল।যাওয়ার আগে শুধু বলে গেল বিয়ে যেভাবেই হোক আমি যেন সবটা মেনেজ করে নিই।আমি ও আশ্বাস দিলাম সব ঠিক করে নিব।পরিবারের এমন সাপোর্ট পাব কখনও আশা করি নি।সবাই আমার পাশে আছে এটা ভেবে মনে যেন আরও ভরসা পেলাম।
সারাদিন পার করে রাতে রুমে ঘুমাতে গিয়ে দেখলাম ভূতমশাই বসে কি যেন কাজ করছে।আমি এক মগ কফি বানিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম
-এই যে আপনার কফিটা।
উনি আমার হাত থেকে কফিটা নিয়ে কফিতে চুমুক দিয়ে কিছুক্ষণ টেস্টটা বুঝার চেষ্টা করল মনে হচ্ছে।আর আমাকে বললেন
-কফিটা কে বানিয়েছে।
আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম
-কেন?
-কফিটা ভালো হয়েছে তাই।
আমি লজ্জা মাখা মুখে বললাম
-কফিটা আমি বানিয়েছি।
উনি এবার মুখটাকে আলুর চপের মত করে ফেললেন।ভুলক্রমে উনি আমার প্রশংসা করে ফেলেছেন এটা মনে হয় উনার উচিত হয় নি তাই মুখটা বাংলার পাঁচ করে ফেললেন। এবার আমাকে একটু পঁচিয়ে উনি উনার দায়িত্ব পালন করবেন সিউর।যাক যা ভেবেছিলাম তাই করেছেন।উনি মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন
-এজন্যই বলি টেস্ট টা এত জঘন্য কেন।
আমি উনার কথার ভ্রূক্ষেপ না করে একটু হাসি দিয়ে চলে গেলাম।
পরদিন সকালে উঠে সব রান্না করলাম।রান্না করে মায়ের খাবারটা নিয়ে মায়ের রুমে গেলাম।মা আমাকে দেখে হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলল
-কি রে মা এখন এত খাবার নিয়ে আসলে কেন?
-এত খাবার কোথায় দেখলে তুমি।এগুলা সব খেতে হবে তোমাকে।না হয় সুস্থ হবে না।আমার কাছে খাবার নিয়ে কোন ফাঁকি দিতে পারবে না।খেতে না চাইলে মাইর দিয়া জোর করে খাওয়াব।
উনি হাসতে হাসতে আমার মাথায় হাত দিয়ে বললেন
- বুঝতে পেরেছি আমার আর ফাঁকি দেয়া যাবে না।তা দাও খেয়ে নেই।
আমি মাকে খাওয়াতে লাগলাম।একের পর এক গল্প শুনতে লাগলাম।মনে হল উনি অনেক দিন পর মন খুলে কথা বলছেন।ঠিক এসময় অরন্য এসে বললেন
-মায়ের রুমে আপনি এখন কি করছেন?
-মায়ের জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম।
-আচ্ছা আপনি যান মায়ের সাথে আমার কথা আছে।
পাশ থেকে মা বললেন
-অনন্যা তো পর না অনন্যার সামনেই বল কি বলবি।
- না মা আমি একা কথা বলতে চাই।
আমিও আর কথা না বাড়িয়ে মায়ের পাশ থেকে উঠে চলে আসলাম।কিছুক্ষণ পর উনি কথা শেষ করে খাবার খেতে আসলেন আমি খাবার গুলো খেতে দিলাম।খেয়াল করলাম গপ গপ করে খাবার খাচ্ছে।আমি বললাম
-আরে মশাই আস্তে খান।সব শেষ হয়ে গেলে আবার রান্না করব।
-মানে?এগুলা কে রান্না করেছে?
লাজুক মুখে জবাব দিলাম
-আমি।
-এজন্যই বলি এত জঘন্য কেন।
এ বলে উনি খেতে লাগলেন।আমি তখন বললাম
-হুম জঘন্য খাবারেই এভাবে খাচ্ছেন।ভালো খাবার না জানি কিভাবে খেতেন।
আমার কথাটা কানে তুললেন না মনে হচ্ছে।খেয়েই যাচ্ছেন।এবার উনাকে বললাম
-এই যে শুনছেন
-হ্যা! কি বলবেন বলুন।
-আমি একটু বাইরে যেতে চাই।কিছু জিনিস কিনতে হবে।রান্নার জন্য কিছু সবজি লাগবে।আমি গেলে মনমত কিনে আনতে পারতাম।
-আপনি গেলে যান।তবে কি দিয়ে যাবেন?একটা গাড়ি আমি নিয়ে যাব আর একটা গাড়ি থাকলেও সে গাড়ির ড্রাইভার নেই।ড্রাইভারের স্ত্রী অসুস্থ তাই বাড়ি গিয়েছে।আপনি কিভাবে যাবেন?
আমি মুচকি হেসে বলললাম
-ঐ গাড়ির চাবিটা দিয়ে যান আমি চলে যেতে পারব একা।
উনি অবাক হয়ে বললেন
-একা চলে যেতে পারবেন মানে?গাড়ি কে চালাবে?
-কেন আমি চালাব।
আমার কথা শুনে এবার মনে হয় উনি বেশ চমকালেন।আমার মুখ থেকে এমন কথা উনি আশায় করেন নি হয়ত।আমাকে জিজ্ঞেস করলেন
-আপনি গাড়ি চালাতে পারেন?
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-হ্যা পারি।অসুন্দর বলে নিজেকে কখনও ছোট ভাবি নি।সবকিছু শিখার চেষ্টা করেছি।নিজেকে পারফেক্ট ভাবে গড়ে তুলার চেষ্টা করেছি।
আমার কথাটা শুনে উনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে রইলেন।তারপর বললেন
-আচ্ছা আমি চাবি দিয়ে যাব।
তারপর উনি আমাকে চাবি দিয়ে চলে গেলেন।
আস্তে আস্তে দিন কাটতে লাগল।অরন্যের সাথে খুনসুটি গুলো বাড়তে লাগল।খেয়াল করলাম অরন্যও অনেক পরিবর্তন হতে লাগল।
এর মধ্যে হুট করে অরন্য একদিন...
হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৪ হঠাৎ বিয়ে পর্ব-০৪ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 4:15 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প