অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৩

অহংকারী মেয়ে
- আমার ভালো লাগছেনা প্লিজ আমাকে এখন কোনো পেইন দিও না।
-কিহহহ আমি তোরে পেইন দেই?
-মাফ চাই এখন যাও
-এটা আমার বাসা, আমার যেখানে মন চায় আমি সেখানেই থাকবো, আমাকে তুই নামার কথা বলার সাহস পেলি কোথায়?
-শান্ত স্যরি বলে নিচে নেমে যায়।
রাতের খাবার খাওয়ার সময়,
.
-তুই এখানে বসলি কেন?(এনি)
-তো কোথায় বসবো?(শান্ত)
-কুকুর যেমন মাটি থেকে কুড়িয়ে কুড়িয়ে খায় তুই ও তেমনি খাবি কারন তুই তো আমাদের বাসার কুকুর (এনি)
-ওহহ আচ্ছা তুমি খাও আমি গেলাম (শান্ত)
-যাহহহ (এনি)
আজকে এনির বাবা ও এনির মা দু'জনে বেড়াতে গেছে। এনির মা-বাবা সামনে থাকলে হয়তো এসব বলতে পারতো না।
শান্ত খেতে বসেও না খেয়ে চলো আসছে এনির কথার জন্য।
রাত শেষ হয়ে সকাল হয়।

এনি সকাল সকাল উঠে বের হয়ে যায়।
কতক্ষণ পরে শান্তর মোবাইলে একটা ফোন আসে।
-শান্ত কোথায় তুমি? (নিধি)
-এইতো বাসায়
-বাইরে বের হবা?
-হুমম কেন কোন কাজ আছে?
-পার্কের দিকে আসো
-ওকে
শান্ত বের হয় নিধির সাথে দেখা করার উদ্দ্যেশে। নিধি ই শান্তর রিয়েল ফ্রেন্ড কারন সবসময় শান্তর খবর নেয় শান্তর সাথে ক্লাস করে।
পার্কে যাওয়ার পরে নিধির সাথে আড্ডা দিয়ে রেস্টুরেন্টে ডুকলো তখন খেয়াল করে দেখে পাশের টেবিলে এনি আর ঐ ছেলেটা বসে বসে কথা বলছে আর হাসাহাসি করতেছে।
একসময় তারা বের হয়ে যায়।
৩০-৩৫ মিনিট পরে শান্ত ও নিধিও বের হয়ে যার যার বাসার উদ্দ্যেশে চলে যায়।
শান্ত বাসায় যাওয়ার ৫-১০ মিনিট পরে এনির মোবাইল থেকে ফোন আসে।
-শান্ত ২৭ নাম্বার রোডের ৫ নম্বর বাসায় তারাতারি আয় প্লিইজ (এনি)
-কি হয়ছে (শান্ত)
-তারাতারি আয় বলে ফোন কেটে দেয়।
শান্ত তখন গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে জায়গা মতো গিয়ে দেখে ভিতর দিয়ে দরজা বন্ধ।
শান্ত কয়েকটা ধাক্কা দেওয়ার পরে দরজা খুলে।
দরজা খোলার সাথে সাথে ২টা মেয়ে এসে শান্তকে জড়িয়ে ধরে বলে কাকে পছন্দ হয়? নাকি দু'জনের সাথেই করবা?
শান্ত মোটেও এসবের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। শান্ত জোর করে তাদের হাত থেকে ছুটে এসে পরে।
বাসায় যাওয়ার পরে শান্ত এগুলো ভাবছে আর বলছে এনি আামকে এসব জায়গার ঠিকানা কেন দিলো।
ওর ফোনের সময় তো মনে হয়ছিলো বড় কোন বিপদে পরছে।
এনি বাসায় আসার পরে দেখে শান্ত তার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে আছে।
-কিছু বলবি?(এনি)
-আমার সাথে এসব করার মানে কি?
-কি করছি
-ফোন করে কোন জায়গার ঠিকানা দিছো?
-ওহ সেই ব্যাপার
-এসব করলা কেন?
-হি হি হি
-এখানে হাসার কি আছে?
-আমি তো মনে করছিলাম তুই যাবি না,কিন্তু তুই তো গেলি
-মানুষের বিপদে মানুষ এগিয়ে যেতে হয় আর হ্যা এসব নিয়ে মজা করলে যেদিন সত্যিই বিপদে পরবা তখন কেউ যাবে না
-আমাকে তোর জ্ঞান দিতে হবে না
বলে এনি তার রুমে চলে গেলো।

-দোস্ত(এনির বান্ধবী জুই)
-হুম বল(এনি)
-শান্ত কি তোদের বাসায় থাকে?
-এটা কি তুই নতুন জানিস?
-তোদের বাসায় থেকে ও কিভাবে ক্লাসের টপ ছাত্র হয়?
-জানিনা, এত্তো প্যারা দেয় তা ও পড়ালেখা ঠিকঠাক চালিয়ে যায়।
-ওরে আর এভাবে জ্বালা দিস না
-কেন?
-ভাগ্যের কথা তো বলা যায় না, একদিন তোর ভাগ্যে ও জুটতে পারে
-জুইইই (রাগি সুরে এনি )
-দেখতে কিন্তু সেই লেভেলের কিউট
-তোর ফকিন্নি মার্কা নজরে এমন ই লাগবে বলে এনি জুইকে ছেড়ে ক্লাসে চলে যায়।
ক্লাস শেষে এনি সামনে চেয়ে দেখে শান্ত আর নিধি একসাথে হেসে হেসে কথা বলছে আর হাটছে।
এটা দেখে এনির রাগ আরো বেড়ে যায়।
এনি বাসায় গিয়ে দেখে শান্ত তখনও বাসায় যায় নাই।
এনি বাসায় যাওয়ার ৩০-৩৫ মিনিট পরে শান্ত বাসায় যায়।
-এতক্ষণ কোথায় ছিলি?(এনি)
-তোমার কাছে বলতে হবে?(শান্ত)
-এই ছোটলোকের বাচ্ছা , তোরে বলছি না আমাকে কখনো প্রশ্ন করবি না
-ওহহ
-বল কোথায় গেছিলি?
-নিধির সাথে তাদের বাসায় গেছি
-ওখানে গেলি কেন? তাদের বাসায় কুকুর নাই? কুকুরের অভাব হয়েছে?
-তুমি তো ভালোই পড়ালেখা করো।
মানুষকে কুকুরের সাথে তুলনা করো কেন?
-তুই মানুষ? আমার মনে নাই তো
-এনি একটা কথা মন দিয়ে শুনো,এখন আমি যেই পজিশনে আছি আল্লাহ্‌ এর রহমতে একবছরের মধ্যে আমার পজিশন টা চেইন্জ হয়ে যাবে।
-তখন কি আমাকে মারবি?
-আমি কি এসব বলছি?
.
-তখন
-তোমার মাইন্ড ঠিক করো বলে শান্ত রুমে চলে যায়।

সন্ধ্যার দিকে এনির বন্ধু বান্ধবী ১০-১২জন তাদের বাসায় আসে।
কখনো এতগুলো বন্ধু একসাথে আসে নাই, আজকে আন্টি আর আংকেল নাই তাই হয়তো তাদের নিয়ে আসছে।
বন্ধুরা আসার পরে এনি শান্তকে ডাক দেয়।
-কেমন আছো সবাই(শান্ত সবাইকে উদ্দেশ্য করে)
-ভালো তুমি কেমন আছো?(সবার আগে জুই)
-হ্যা ভালো
-তোকে ডাক দিছি ওদের সাথে কথা বলতে না (এনি)
-ওহহ স্যরি , কিসের জন্য ডাকছো?
-ঐ রুমটা পরিষ্কার কর
-অন্য সব রুম ই তো খালি আছে,ঐ রুম কেন?
-বারবিকিউ পার্টি হবে, সেখানে হালকা নাচানাচি হবে, তাই পরিষ্কার করতে হবে
-ওহহ
-হ্যা, যা কাজে লাগ
শান্ত তখন সবার দিকে চেয়ে একটা মুচকি হেসে রুমে ডুকে কাজে লেগে যায়।
শান্ত কাজ করার সময় লজ্জা পায় না কিন্তু আজকে কেমন জানি আনইজি লাগছে।তখন জুই রুমে ডুকে
-কিছু লাগবে?(শান্ত)
-এনি কি তোমাকে সারাক্ষণ এভাবে জ্বালা দেয়?
-না তো
-হয়ছে আমার কাছে লুকাতে হবে না,ঝাড়ু টা আমার কাছে দাও
-আরে এসব কি বলছো?
-হ্যা দাও
-না না তুমি ওখানে গিয়ে বসো আর ৫-৬ মিনিট লাগবে সবকিছু গুছিয়ে ঠিক করে নিবো
-ঝাড়ু টা দিতে বলছি
-তুমি কি আমাকে বকা আর থাপ্পর খাওয়াতে চাও?
-মানে?
-হুমম
-ও কি তোমাকে মারে ও?
-ওসব কিছু না
-তুমি কি প্রতিবাদ করতে পারো না?
-গরীব তো তাই কেউ শুনবে না
-কে বলছে শুনবে না
-এই যে তুমি এসব বলছো না? এটা যদি এনি জানে তাহলে তোমার ও খবর করে ছেড়ে দিবে
-তোমাকে গ্রাম বাংলার একটা প্রবাদ বলি সেটা হলো, "মেয়েরা রাগলে হয় বেশ্যা আর ছেলেরা রাগলে হয় বাদশা"
এই কথাটা তুমি চারদিকে মিলিয়ে নিও
তুমি নিজের মন মানুষিকতা কাজে লাগাও
-এটা বাংলাদেশ, বলা সহজ, করে দেখিয়ে দেওয়া অনেক কঠিন
-হুম জানি, তাও ট্রাই করো
-করতেছি তো, অনার্স টা শেষ হউক তারপর কিছু একটা হবে
-হুমম বেস্ট অফ লাক।বলে চলে যাবে এমন সময় এনি রুমে ডুকে....
-ভালোই আড্ডা দিচ্ছিস(এনি)
-দেখতে আসলাম কি কাজ করছে(জুই)
-ওহহ তুই হেল্প করছিস নাকি?
-চাইছিলাম কিন্তু দেয় নাই
-যা বাহিরে যাহ
জুই বাহিরে যাওয়ার পরে এনি শান্তর দিকে অগ্নি চোখে চেয়ে বাহিরে চলে যায়।
রুম পরিষ্কার শেষে ৪টা সাউন্ড বক্স রুমে নিয়ে যায়।
সবকিছু ঠিকঠাক করে ওরা ওদের কাজ শুরু করে।
বাসায় কোনো রান্না না হওয়ায় শান্ত ফ্রিজ খুলে দেখে কতোগুলো বিয়ার আর মদের বোতল। এসব দেখে শান্তর চোখ কপালে উঠে যায়।
শান্ত ফ্রিজটা তারাতারি আটকিয়ে ছাদে চলে যায়।
ছাদে গিয়ে মোবাইলে লো বলিউমে গান লাগিয়ে আনমনে আকাশের দিকে চেয়ে আছে,এমন সময় জুই পিছন দিয়ে এসে
-যেভাবে চেয়ে আছো যেন তারা গুনছো
-আজ আকাশটা অনেক সুন্দর লাগছে।
-সুন্দর তো লাগবেই কারণ সুন্দর মনের মানুষ আকাশের দিকে চেয়ে আছে(জুই)
-মানে?
-হুমম তোমার মন মানুষিকতা আসলেই অনেক ভালো
-তুমি যে এখানে আসছো এটা কি এনি জানে?
-না, ওরা নাচানাচি করছে
-ওহহ
-হ্যা
-তোমার নাম্বার টা কি দেওয়া যাবে?
-ছোটলোকের নাম্বার নিয়ে কি করবা?
-কথায় কথায় এটা বলো কেন?
-কি করবো, আমি তো ছোট লোকই
-তোমার হাত পা সবই তো ঠিক আছে, সো হাত পা থাকতে কেউ ছোট লোক হতে পারে না।
-আচ্ছা এসব বাদ দাও
-কিছু খেয়েছো?
-নাহ আজ রান্না হয় নাই
-নাও এটা খেয়ে নাও(জুই হাত বাড়িয়ে)
-আমার জন্য এসব করতে গেলা কেন?
-কি করছি?
-এই যে এটা সবার চোখ ফাকি দিয়ে আনছো
-এটা আমার ভাগের খাবার, খেয়ে নাও
-তুমি ও খাও
তখন দুজন ভাগ করে খেয়ে নেয়।
খাওয়া শেষে...
-একটা কথা বলি?(শান্ত)
-লেডিসদের মতো কথা বলো কেন? কি বলবা বলে ফেলো(জুই)
-পার্সোনাল তো তাই
-ওকে বলো
-তুমি কি ড্রিংকস করো?
-তাল মিলিয়ে চলতে হয়
-এসব না খাওয়া ই ব্যাটার
-জানি
-তাহলে খাও কেন
-ওকে আর খাবো না বলে দু'জনে ছাদের দোলনায় বসে গল্প করতে থাকে।

একসময় জুই শান্তকে প্রশ্ন করে....
-কাউকে পছন্দ করো? (জুই)
-এনির মা-বাবাকে(শান্ত)
জুই এই কথা শুনে ফিক করে হেসে দেয়।
-হাসো কেন?
-তোমার কথা শুনে
-কি এমন বলছি যে হাসতে হবে?
-আমি বলছি কাউকে ঐভাবে পছন্দ করো কি না?
-না, গরীবের আবার পছন্দ
-আবার(রাগি মুখে)
-স্যরি
-আর বলবানা এসব বলে দিলাম
-ওকে
-তোমার ফেবারিট কোন কালার?
-নীল
-শুধু নীল?
-হুমম নীল রংটা আমাকে অনেক আকর্ষণ করে
-ওহহ
-হ্যা, তোমরা কি এসব জিন্স ছাড়া শাড়ি পরতে পারো না?
-পারি না
-তোমার মা তো মনে হয় পারে
-হুমম পারে
-তাহলে শাড়ি পইরো
-ওকে
-তোমাকে শাড়িতে অনেক মানাবে
-তাই নাকি?
-হুমম
-তোমার কি শাড়ি ভাল্লাগে?
-হুমম
-ওকে কালকে কলেজে শাড়ি পড়ে যাবো
-ওকে
- এই তোমার ইচ্ছা হয় না কারো হাত ধরে হাটতে?
-এসবের ইচ্ছা হলে কল্পনায় ডুব দেয় তখন সব ইচ্ছা মিটে যায়।
-হি হি হি
-কি?
-কল্পনায় কার হাত ধরো?ইমমমমমম
-ফেইস টা নিয়ে ভাবিনায়
-হুমম ইচ্ছা হলে ভাবতে পারো
-মানে?
-বলতেছি ইচ্ছা হলে এই হাত ধরে হাটতে পারো(জুই হাতটা বাড়িয়ে)
ভালোই তো রোমান্স হচ্ছে(পিছন থেকে এনি)
-ত ত ত তুই?(জুই)
.
অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৩ অহংকারী মেয়ে! পর্ব-০৩ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 2:33 PM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প