ভাবি যখন বউ! পর্ব-০৫

ভাবি যখন বউ পর্ব -০৫
আমি সোফায় গিয়ে বসে রইলাম,একটু পর দেখি সে ব্যাগপত্র গুছিয়ে চলে যাচ্ছে।

থামাতে গিয়েও থামাইনি, যাক তাতে আমার কি? এসব আবেগ দিয়ে তো আর জীবন চলে না। আমি তো ওরে জোর করে বিয়ে করিনি।

আমাকে যদি এতোই অপছন্দ করতো তাহলে বিয়ের দিন বলে দিলেই পারতো।

সারা দিন বাসায় কাটিয়ে দিলাম, বাবা মাও নেই। বাসাটা কেমন খালি খালি লাগছে।

বিকালবেলা বাসা থেকে বের হয়ে দেখি আয়মান আমাদের বাসার সামনে বসে আছে,,,,

আমিঃ কিরে তুই এখানে?

আয়মানঃ কেন আসতে পারি না?

আমিঃ আরে ধুর সেটা না, এই সময় তুই তো এদিকে আসিস না, সেজন্য জিজ্ঞেস করলাম।

আয়মানঃ তোকে অনেকবার কল দিতেছিলান, মোবাইল অফ দেখাচ্ছে, তাই চলে আসলাম।

আমিঃ আচ্ছা ভিতরে আয়।

তারপর আয়মানকে নিয়ে আবার বাসায় গেলাম।

আয়মানঃ কিরে কাওকে দেখছি না যে?

আমিঃ আব্বু আম্মু মামার বাসায় গেছে। আসতে রাত হবে,,,,

আয়মানঃ আর তোর বউ?

আমিঃ ও ওর বাপের বাড়িতে চলে গেছে।

আয়মানঃ কেন?

আমিঃ আমার সাথে ঝগড়া করে।

আয়মানঃ তুই আবার কি করলি?

আমিঃ........(পুরো ঘটনা শেয়ার করলাম)

আয়মানঃ তো এখন কি সিদ্ধান্ত নিলি, অবন্তীকে রাখবি নাকি ডিভোর্স দিয়ে দিবি?

আমিঃ এখনো কিছু চিন্তা করিনি।

আয়মানঃ যেটা ভালো মনে হয় সেটা কর।

আমিঃ হুম।

আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে, আয়মান চলে গেলো।

মাগরিবের পরে নামাজ পড়ে আর বাসায় আসিনি। ভাইয়ার কবরের কাছে গেলাম,,,,

কবরের পাশে বসে নিজে নিজেই বলতে শুরু করলাম,,,,,

"ভাইয়া কেমন আছিস? তোর এই অকৃতজ্ঞ ভাইটা তোর বউকে সুখে রাখতে পারছেনা রে, তুই আমাকে মাফ করে দিস ভাই।

আমি কি করবো বল, এতো অল্প টাকা বেতনে ফ্যামিলি চালাতেও আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

তুই জানিস ভাই আমি সকালবেলা কখন নাস্তা করেছি ভুলে গেছি, শুক্রবার ছাড়া দুপুরবেলা আমার পেটে ভাত পড়েনা, শুধু পানি আর এক টুকরো পাউরুটি ছাড়া।

জানিস ভাই আমি দুইটা শার্ট দিয়ে পুরো বছর টা কাটিয়ে দিয়েছি। নিজের স্বাদ ইচ্ছা সব বিসর্জন দিয়ে দিয়েছি।

নিজের কম্পিউটার, মোবাইল, ঘড়ি সব বিক্রি করে দিয়েছি ওদের মুখে হাসি ফুটানোর জন্য। জানিস ভাই আমি পড়ালেখাটাও শেষ করে দিয়েছি শুধু অবন্তীর জন্য, কিন্তু দেখ সে আজকে আমাকে রেখে চলে গেছে।

আসলে ভাই দোষটা আমারই, আমি ওদের কাওকে ঠিক মতো সুখে রাখতে পারছিনা।

কি করবো বল, সারাদিন এতো কাজ করে বাসায় এসে আমার ফ্লোরে থাকতে ইচ্ছা করে না, আমারও ইচ্ছা করে অন্তত রাতের বেলা কেউ একজন আমার সাথে ভালো ব্যবহার করুক, ঠিক ভাবে আমার যত্ন নিক কিন্তু দেখ কপালটা এতোই খারাপ যে এই সামান্য চাওয়া টুকুও আল্লাহ্ কপালে রাখলো না।

ভাই তুই আমাকে মাফ করি দিস, আমি কাওকে সুখে রাখতে পারছি নারে ভাই। """

আর কিছু বলতে পারলাম না, ভাইয়ার স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভাসতে লাগলো,আরো কিছুক্ষণ ভাইয়ার পাশে থেকে, কবর জিয়ারত করে বাসায় চলে গেলাম।

দেখলাম তালা আগে থেকেই খোলা, তারমানে আব্বু আম্মু এসে গেছে। দরজাও খোলা।

দেখলাম আব্বু আম্মু চোখ মুখ লাল করে বসে আছে,,,

আমিঃ আব্বু কখন আসছো?

আব্বুঃ তার আগে বল আমার মেয়ে কোথায়?

আমিঃ........(মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।)

বাবাঃ কি হলো কথা বলছিস না যে?

আমিঃ ওর বাবার বাড়িতে গেছে। অনেক দিন নাকি ওর আম্মুকে দেখেনি।

বাবাঃ বাবার বাড়ি গেছে নাকি তুই পাঠিয়েছিস?

আমিঃ আরে আজব আমি কেন পাঠাবো? ও নিজেই গেছে।

আম্মুঃ অবন্তী আমাদের সব কিছু বলেছে। যা মেয়েটাকে নিয়ে আয়।

আমিঃ নি আসবো মানে? এখন রাত হয়ে গেছে। আর সে যখন নিজে থেকে গেছে আবার নিজে থেকেই আসবে।
.
আম্মুঃ এতো কথা কেন বলিস, আর বিয়ের পর থেকে তো তুই ওই বাড়িতে যাস নি। এখন যা,,,

আমিঃ এখন গেলে আসবো কখন?

বাবাঃ তোকে কি একবারও বলছি এখন চলে আসতে। যা এখন যখন ভালো লাগবে তখন আসবি। পারলে ২ দিন থেকে আয়।

আমিঃ হুম আমি ওখানে দুই দিন থাকি আর এই দিকে আমার চাকরিটা চলে যাক।

বাবাঃ হইছে যা এখন।

কি আর করা রেড়ি হয়ে অবন্তীদের বাসার দিকে রওনা দিলাম। রাত ৯.০০ টার সময় ওদের বাসায় গিয়ে পৌছালাম।

কলিংবেল দিলাম, প্রায় ৫ মিনিট পর অবন্তীর মা মানে শাশুড়ি এসে দরজা খুলে দিলো।

আমিঃ আসসালামু আলাইকুম,,,

শাশুড়িঃ আরে বাবা তুমি! আসো আসো ভিতরে আসো।

ভিতরে গেলাম, শ্বশুরও বেরিয়ে আসলো, সালাম দিলাম আরো কিছুক্ষণ কথা বললাম। তারপর উনি বললো " অবন্তী রুমে আছে, তুমি যাও "

আমি ওর রুমের কাছে গেলাম, দেখলাম অনেক গুলো মেয়ের সাথে বসে বসে হাসছে, ভাইয়া মারা যাওয়ার পর এই প্রথম অবন্তীকে এইভাবে হাসতে দেখছি।

এই মুহূর্তে আমার রুমে যাওয়া।উচিত হবে কিনা ভাবতেছি,,,,

রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে রইলাম, কেউ একজন আমাকে দেখে ফেলেছে মনে হয়,,,

তারপর দুলাভাই দুলাভাই বলে ডাকতে শুরু করলো। ভিতরে গেলাম দেখি অবন্তী আর ওর কয়েকটা কাজিন বসে বসে গল্প করছে।

সবার সাথে পরিচিত হওয়ার পর এক এক করে সবাই চলে গেলো। তারপর আমি গিয়ে সোফায় বসলাম। কেউ কোনো কথা বলছি না, নীরবতা ভেঙ্গে অবন্তী বললো.....

অবন্তীঃ কেন আসছো?

আমিঃ আব্বু আম্মু আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।

অবন্তীঃ তারা বলেছে সেজন্য এসেছো, নিজে থেকে আসো নি?

আমিঃ........ (চুপ করে রইলাম)

অবন্তীঃ আমি তো তোমাকে প্যারা দিই, আমি না থাকলে তুমি ভালোই থাকবে।

আমিঃ সরি, আসলে সকালবেলা আমার মাথা ঠিক ছিলো না, তাই ভুলভাল বলে ফেলছি।

অবন্তীঃ সরি আমি যেতে পারবো না।

আমিঃ কেন?

অবন্তীঃ এমনিতে তুমি অনেক কিছু করেছো আর দরকার নেই।

আমি কিছু বলতে যাবো এমন সময় অবন্তীর আম্মু এসে খাওয়ার জন্য ডেকে গেলো। অবন্তী তখন বললো....

অবন্তীঃ খেতে আসুন।

আর কোনো কথা না বলে খেতে চলে গেলাম। বাহ! অল্প সময়ের মধ্যে এতো আইটেম? জামাই আদর আসলেই অনেক মজার কিন্তু আমার মনের মধ্যে অন্য চিন্তা ঘুরতেছে।

খাওয়াদাওয়া শেষ করে আবার রুমে চলে গেলাম। আমি গিয়ে খাটের উপর বসলাম, অনেকক্ষণ পর অবন্তী আসলো।

আমি উঠে সোফায় চলে গেলাম।

অবন্তীঃ তুমি খাটে ঘুমাও।

আমিঃ আর আপনি?

অবন্তীঃ আমি সোফায় ঘুমাবো।

আমিঃ দরকার নেই, আপনি খাটে ঘুমান। সকালে একটু তাড়াতাড়ি উঠিয়েন। আমি আপনাকে বাসায় দিয়ে আমাকে আবার কাজে যেতে হবে।

অবন্তীঃ তোমারে বলেছিনা আমি যাবো না।

আমিঃ যাবেন না মানে?

অবন্তীঃ যাবো না মানে যাবো না।

আমিঃ তারমানে আপনার কাছে আব্বু আম্মুর ভালোবাসার কোনো দাম নেই?

অবন্তীঃ.........

আমিঃ সকালে রেড়ি থাকবেন।

অবন্তীঃ বললাম তো আমি যাবো না।

ধুর না গেলে নাই, এতো অনুরোধের কিচ্ছু নাই। দেখি কয়দিন না গিয়ে থাকতে পারে, আমারও তো একটা পার্সোনালিটি আছে।

ঘুমিয়ে গেলাম, সকালে কাওকে কিছু না বলে চলে গেলাম। বাসায়ও গেলাম না, সরাসরি কাজে চলে গেলাম। এরমধ্যে বাবা কয়েকবার কল দিয়েছে বাট ধরিনি।

রাতের বেলা বাসায় গেলাম। আব্বু আম্মু দুজনেই আমার উপর ফায়ার। আমি কিছু না বলে রুমে চলে গেলাম।

আব্বু আমার রুমে আসলো,,,,,

বাবাঃ কিরে কি করিস।

আমিঃ কিছুনা। কিছু বলবা নাকি?

বাবাঃ হুম অবন্তীর সাথে আমাদের কথা হয়েছে। ও কিছুদিন ওখানে থাক মন মানসিকতা ভালো হোক তারপর চলে আসবে।

আমিঃ সেটা আমাকে বললেই তো পারতো।

বাবাঃ হুম, আচ্ছা শোন।

আমিঃ হুম বলো,,,

বাবাঃ অবন্তীর কোন ফ্রেন্ডের নাকি বিয়ে। যদি ওর হাতে কিছু টাকা দিতি।

আমিঃ তোমাকে কে বললো?

বাবাঃ সে নিজেই বলেছে। তোকে নাকি বলতে লজ্জা করছে তাই আমাকে বলেছে।

আমিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, দিয়ে দিবো।

বাবাঃ বিয়েতো কয়েকদিন পর, কালকে দিতে পারবি?

আমিঃ আচ্ছা দেখি।

তারপর খেয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। সকালে কাজে যাওয়ার আগে টিউশনিতে গেলাম। পড়ানো শেষে টাকাটা অগ্রিম চেয়ে নিলাম।

টাকাটা নিয়ে আবার কাজে চলে গেলাম, দুপুরবেলা আমি নামাজ পড়ে বাইরের একটা দোকানে পানির মধ্যে পাউরুটি চুবিয়ে খাচ্ছি এমন সময় দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।

ভালো করে খেয়াল করে দেখলান এটা অবন্তী, তার কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে কোথাও যাচ্ছে মনে হয়। বাসের জন্যই অপেক্ষা করছে।

আমি দেখেও না দেখার ভান করে কভার ভ্যান চালককে তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য বললাম। সে ভ্যান চালাচ্ছে আর আমি পিছন থেকে ঠ্যালতেছি।

রাতের বেলা বাসায় আসলাম, দরজা টোকা দেওয়ার একটু পর দরজা খুলে দেয়, তাকিয়ে দেখি........
ভাবি যখন বউ! পর্ব-০৫ ভাবি যখন বউ! পর্ব-০৫ Reviewed by গল্প প্রেমিক on 11:04 AM Rating: 5

No comments

হৃদয়স্পর্শী গল্প

হৃদয়স্পর্শী গল্প